তিনি টাঙ্গাইলের মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কমান্ড্যান্ট অফ স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার তেররশিয়া গ্রামের জারজিস আলী মধুর ছেলে।
এ ঘটনায় রুবেলসহ চারজনকে আসামি করে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলার আবেদন করেছেন নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী ওই নারী।
মামলার আবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ৩১ মে নওগাঁর ধামইরহাট থানার আফজাল হোসেনের মেয়ের সঙ্গে সহকারী পুলিশ সুপার রুবেলের বিয়ে হয়।
সহকর্মীরা বাড়ি গাড়ি ফ্ল্যাটসহ মোটা অঙ্কের যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেছেন বলে রুবেল হক জানতে পারেন। তারপর থেকেই নববধূর ওপর শুরু হয় নির্যাতন।
যৌতুকের জন্য রুবেল হক স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। রুবেল ও তার পরিবার ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে ভুক্তভোগীর পরিবার বিয়ের সময় ও পরে ১৯ লাখ টাকা দেয়।
এরপরেও রুবেল ও তার পরিবার ওই নারীর ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন অব্যাহত রাখেন। রুবেল নারায়ণগঞ্জে থাকাকালে ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট স্ত্রীকে ব্যাপক নির্যাতন করেন। এ ঘটনায় তাকে নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। তখন বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারকেও অবহিত করা হয়।
পুলিশ সুপারকে অবহিত করার বিষয়টি জানতে পেরে রুবেল তাকে আরও মারধর করেন। ভুক্তভোগী ঢাকায় বসবাসরত তার বোনের বাসায় আসলে সেখানে গিয়েও রুবেল তাকে মারধর করেন।
এ ঘটনায় গত ৩১ অক্টোবর পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। এর কিছুদিন পর রুবেল টাঙ্গাইলের মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে বদলি হয়ে আসেন। মহেড়া অফিসার্স কোয়াটারে থাকাকালে চলতি বছরের ১ মে সামান্য কথা-কাটাকাটির জেরে স্ত্রীকে মারধর করেন রুবেল। এতে তার হাত ভেঙে যায়। ওই সময় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা না নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করায় তিনি টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে চলে না যাওয়ায় দিনদিন নির্যাতনের পরিমাণও বাড়াতে থাকেন রুবেল। এ ছাড়া রুবেলের সঙ্গে থাকতে হলে আরও ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন তিনি।
মহেড়া অফিসার্স কোয়ার্টারে রুবেলের বাবা, মা ও বোন থাকতেন। তারাও রুবেলের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন করতেন। তাদের নির্যাতনে মারাত্মক আহত হয়ে গত ৯ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুক্তভোগী চিকিৎসা নেন। এর আগে গত ৩ জুলাই রুবেলের নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। ওই সময় ৯৯৯ কল করলে মির্জাপুর থানা থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) মোশারফ হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেন। এসব ঘটনা তিনি মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্টকে জানান।
তার কাছে থেকেও কোনো সুবিচার না পেয়ে ভুক্তভোগী গত ৬ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে রুবেল হক, তার বাবা জারজিস আলী মধু, মা নাসিমা বেগম ও বোন নাসরিন খাতুনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন।
নির্যাতনের শিকার নারী বলেন, এতসব নির্যাতন সহ্য করেও আমি সব সময়ই রুবেলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারপরও তার নির্যাতনের মাত্রা কমেনি বরং সবার সামনেই আমকে মারধর করতে। পুলিশ কর্মকর্তা বলে সে দম্ভ করে বলত তুই আমার কিছুই করতে পারবি না। এ ঘটনায় আমি গত ১ সেপ্টেম্বর মির্জাপুর থানায় মামলা করতে যাই। ওসি মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে আদালতে মামলা করি।
মির্জাপুর থানার ওসি শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, এক নারী একটি অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। ঘটনাটি যেহেতু দাম্পত্য কলহের তাই আমি টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারকে অবগত করি। তাকে মামলা করতে নিষেধ করা হয়নি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের জন্য বলা হয়েছিল।
আদালত থেকে এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা এখনো তিনি পাননি বলে জানান।
ভুক্তভোগীর আইনজীবী মইদুল হোসেন শিশির বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শুনানি শেষে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে এএসপি রুবেল হকের সরকারি মুঠোফোন একাধিকবার কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট ডিআইজি মঈনুল ইসলাম বলেন, এএসপি রুবেল হকের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। ভুক্তভোগী নারী এ ব্যাপাতে আদালতে মামলা করেছেন। এখন আদালতের নিয়মেই মামলা চলবে বলে তিনি জানান।