মাসুদ লস্কর, হবিগঞ্জ থেকে: শ্রমিক মজুরি, কারখানার জ্বালানি খরচ এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় যে হারে বেড়েছে সে হারে চায়ের দাম বাড়েনি নিলামে। ফলে চরম ক্ষতির মুখে লস্করপুর ভ্যালির বাগানগুলো। এখন মওসুমের শেষদিকে এসে প্রতি কেজিতে লোকসান ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা। উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও তাই লাভের মুখ দেখছে না চা শিল্প। এই অভিমত বাগান নির্বাহিদের।
চায়ের নিলাম হয় চট্টগ্রাম এবং শ্রীমঙ্গলে। চলতি চা মওসুমের শুরুতে প্রতি কেজির মূল্য ছিল ২২০ টাকা পর্যন্ত। তা এখন ১৪০ টাকা। কিছু কিছু চা আরও কমে বিক্রি হয়েছে।
লস্করপুর ভ্যালির ১৭টি বাগানে ২০২১ সালে উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ৬৯৬ কেজি চা। ২০২০ সালের চেয়ে তা ১৫ লাখ ২৩ হাজার ২৫ কেজি বা ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালে নিলাম বাজারে প্রতি কেজি চায়ের গড় মূল্য ১৯০ টাকা হলেও ২০২১ সালে অনেক হ্রাস পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাগান ব্যবস্থাপকরা জানালেন, ২০২১ সালে উৎপাদন বেড়েছে, কিন্তু অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়েনি। বছর ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতিতে স্থানীয় চাহিদা কমে গেছে। আবার নিলামে অংশগ্রহণকারিরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়তে দেয়নি। এতে শিল্পটি লোকসানে পড়েছে। আরও জানান, বর্তমানে চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা হলেও তাদের রেশন, বাসস্থান, চিকিৎসাসহ সকল সুবিধা দিতে হচ্ছে। এছাড়া বর্তমান বাজারে সার, কীটনাশকসহ সকল উপকরণের দাম বেড়েছে। চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানার যন্ত্রপাতির দামও বাড়তি। বর্তমানে এক কেজি চা তৈরিতে খরচ পড়ছে ১৮০ টাকা থেকে ২শ টাকা। কিন্তু নিলামে মূল্য প্রতি কেজি ১৪০ টাকায়। উৎপাদন বৃদ্ধি করেও বাগানগুলো লোকসান এড়াতে পারছে না।
তেলিয়াপাড়া চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ২০২১ সালের চা মৌসুমের শুরুতেই খরা, রেড স্পাইডার ও হেলোফিলিসে উৎপাদন মার খেয়েছে। মৌসুমের প্রথম চার মাসে ভ্যালিতে ৪০ শতাংশের বেশি উৎপাদন হয়নি। তবে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আবহাওয়া ছিল অনুকূলে। এ সময়ে বাম্পার ফলন পাওয়া গেছে। তাতে ভ্যালির উৎপাদন লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু বাজার সিন্ডিকেট নিলামে চায়ের মূল্য ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকার ওপরে যেতে দেয়নি। অথচ আমরা বাজার থেকে প্যাকেটজাত চা ৩শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত কেজি কিনে খাচ্ছি। এ সিন্ডিকেট না ভাঙলে চায়ের মূল্য বাড়বে না বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি চায়ের নিলাম মূল্য কমপক্ষে আড়াইশ টাকা নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
চন্ডিছড়া চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক চৌধুরী মুরাদ আহমেদ বলেন, চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গল নিলামে চায়ের দাম না বাড়লে বাগানগুলো লাভের মুখ দেখবে না।