১৩ বছর পর বাংলাদেশে এসে উন্নয়নে বদলে যাওয়া ঢাকাকে দেখে নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা। বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে আগামী দিনগুলোতেও জাপান পাশে থাকতে চায় বলে জানিয়েছেন তিনি।
দুই দিনের সফরে রোববার ঢাকায় এসেছেন নিশিমুরা। ওই দিন বিকেলেই সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সাথে নিয়ে ঢাকায় নবনির্মিত মেট্রোরেল ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ঘুরে দেখেন তিনি।
এ সময় সাংবাদিকদের কাছে বদলে যাওয়া ঢাকা নিয়ে নিজের মুগ্ধতার কথা জানান তিনি। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভবিষ্যতেও জাপান পাশে থাকতে চায় বলে জানান তিনি।
জাপানের ঋণ ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়ন হচ্ছে ঢাকার আধুনিক নগর গণপরিবহন ব্যবস্থা মেট্রোরেল। বিমানবন্দরের অত্যাধুনিক তৃতীয় টার্মিনালও নির্মিত হচ্ছে জাপানের অর্থায়নে।
এছাড়া দেশের অন্যতম বড় ভৌত অবকাঠামো প্রকল্প মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণেও আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান।
জাপানের সহযোগিতায় বাস্তবায়নের শেষ প্রান্তে চলে আসা এসব বড় প্রকল্পকে বাংলাদেশের উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল যা জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এই অর্থনৈতিক জোনে ইতোমধ্যে ৪০টি জাপানি কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির আওতায় এ অঞ্চলের দেশগুলোতে ৭৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে জাপান। এরই অংশ হিসেবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে মাতাবাড়ি প্রকল্প। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হলে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। পরে ব্যয় ৪৪ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা।
বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর ফলে ২০২২ সালে বাংলাদেশে জাপানের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) দাঁড়ায় প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার; যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ।
রোববার ঢাকা আসার পরই সোনারগাঁও হোটেলে জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-জাপান ইকোনমিক রিলেশন ফর দ্য নেক্সট ফিফটি ইয়ার্স’ শীর্ষক সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন ইয়াসুতোশি নিশিমুরা।
তিনি বলেন, এখনকার বাংলাদেশ আমাদের ধারণার থেকেও অনেক বেশি অগ্রগতি করেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্ব ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কারণে।
এই উন্নয়নে জাপানি কোম্পানিগুলোরও অবদানের কথা উল্লেখ করে দুই দেশের মধ্যে শত বছরের অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রসঙ্গ টানেন তিনি।
নিশিমুরা বলেন, শতবছর আগে বাংলাদেশের পাট দিয়ে জাপানে শুরু হয় পাটকলের ব্যবসা। কোবে শহরে ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত কয়জুমি কোম্পানি।
আর স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে সহায়তা দেয়া এবং অবকাঠামো উন্নয়নে জাপানের বিনিয়োগের কথা তুলে ধরেন তিনি। বিশেষ করে যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সোনারগাঁও হোটেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করেন তিনি।