ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা নীল চাষের উদ্দেশে ৭৪ একর জমির ওপর কালের সাক্ষী মেহেরপুরের ঐতিহাসিক আমঝুপি নীলকুঠি গড়ে তোলে। এই নীল চাষের ঘটনায় বাঙালি জাতির উপর নির্যাতনের কাহিনী অবলম্বনে ‘নীল দর্পণ’ নাটক রচিত হয়েছে
মেহেরপুর অঞ্চলে ১৭৭৮ সালে ক্যারল ব্লুম নামে এক ইংরেজ তৎকালীন নদীয়া জেলা বর্তমানে মেহেরপুরের আমঝুপির কাজলা নদীর তীরে ৩ শ’ বিঘা জমির উপর নীলকুঠি স্থাপন করেন। নীল চাষ অত্যাধিক লাভজনক হওয়ায় ১৭৯৬ সালে এখানে নীল চাষ শুরু হয়। এ সময় বিখ্যাত বর্গী দস্যু নেতা রঘুনাথ ঘোষালির সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে গোয়ালা চৌধুরী নিহত হলে মেহেরপুর অঞ্চল রানী ভবানীর জমিদারীভুক্ত হয়।
রানী ভবানী মৃত্যুর পর হাত বদল হয়ে গোটা অঞ্চলটি মথুরানাথ মুখার্জির জমিদারীভুক্ত হয়। পরে তার ছেলে চন্দ্র মোহন বৃহৎ অঙ্কের টাকা নজরানা নিয়ে মেহেরপুরকে জেমস হিলের হাতে তুলে দেন। ১৮১৮ থেকে ১৮২০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মেহেরপুরর বেশ কয়েকটি স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়। তন্মধ্যে আমঝুপি, গাংনীর ভাটপাড়া, বামন্দি নীলকুঠি অন্যতম।
নীল গাছ পচা পানি জ্বালিয়ে তৈরি করা হতো নীল রঙ। এক বিঘা জমিতে আড়াই থেকে তিন কেজি নীল উৎপন্ন হতো,যা উৎপাদন করতে ব্যয় হতো ১২ থেকে ১৪ টাকা। অথচ চাষীরা পেতো মাত্র তিন থেকে চার টাকা।
নীল গাছ থেকে যে রঙ তৈরি করা হতো তা ছিল চাষীদের বুকের পুঞ্জিভূত রক্ত। কথিত আছে রবাট ক্লাইভ প্রায়ই সময় কাটানোর জন্য আমঝুপি নীলকুঠিতে আসতেন । নীলকুঠীতে তার ব্যবহার্য্য সামগ্রীও ছিল , যা সংরক্ষনের জন্য জাতীয় জাদুঘরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ইংরেজরা চলে যাবার সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) সরকারের কাছে কাছে হস্তান্তর করে যায় এই কুঠিবাড়ি সহ ভূ-সম্পত্তি।
কুঠি বাড়িটিতে রয়েছে শয়ণ কক্ষ, স্নেকপ্র“ফ রুম, নাচঘর ও মৃত্যুকুপ। প্রচলিত রয়েছে এখানে নর্তকীদেরকে নাচতে হতো। যদি কোন প্রজা খাজনা কিংবা নীল চাষে অনীহা প্রকাশ করতো তাহলে তাকে হত্যা করে মৃত্যুকুপে নিক্ষেপ করা হতো।
স্নেকপ্রুফ রুমটি এতই মসৃণ যে সাপ কিংবা পিঁপড়া চলতে পারেনা। এখানে রয়েছে ঘোড়ার ঘর, কয়েদখানা, কাচারী ঘর ও নায়েবদের আবাসন। মূল ভবন ছাড়া বাকি ঘরগুলো সংস্কারের অভাবে তা ধ্বংসের পথে। ১৯৭৮ সালে ১৩ মে তারিখে খুলনা বিভাগ উন্নয়ন বোর্ডের আমঝুপি অধিবেশনে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংস্কার ও উন্নয়ন করা হয়। এরপর থেকে জৌলুশ হারাচ্ছে আমঝুপি কুঠিবাড়ি। এ কুঠিবাড়ির চারদিকের সুশোভিত বাগান এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া