কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ: বিষমুক্ত চালকুমড়ার বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের ফুকুটিয়া গ্রামের কৃষক নুরজাহান। নুরজাহান ৭৫ শতাংশ জমিতে চালকুমড়া চাষ করে প্রায় লক্ষাধিক টাকা লাভ করেছে এবার। এভাবে আরও লাভ করার আশা করছে নুরজাহান । অন্য যে কোন বারের তুলনায়, এবার সে অনেক বেশি দাম পেয়েছে। এবার চালকুমড়া চাষ করতে গিয়ে পোকার জন্য তাকে বেশি কষ্ট করতে হয়নি। তার এ সফলতার কারণে স্বামী ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এখন খুবই খুশি। বিষমুক্ত সবজির কথা আসলেই নুরজাহানের কথা চলে আসে। তাকে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে সহায়তা করেছে এসডিআই। এখন নুরজাহান বিষযুক্ত সবজির খারাপ দিকগুলো খুব ভালভাবেই জানে, সে নিজে বিষযুক্ত সবজি খায় না, অন্যদেরকেও বিষযুক্ত সবজি খেতে নিষেধ করে। এক পর্যায়ে সে বলেই ফেলল,” স্যার বলেছেন সবজি চাষে বিষ দেয়া আর মানুষ হত্যা করা একই কথা। তাই আর সবজি চাষে বিষ দেব না।” নুরজাহান এবার এসডিআই থেকে ২৫টি সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ নিয়ে বেঁধে দিয়েছিল তার চালকুমড়ার ক্ষেতে। তার চালকুমড়ায় এবার একটি পোকাও লাগেনি। তার ক্ষেত অনেক লোক দেখতে এসেছে।
সে¦চ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সোসাইটি ফর ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভস(এস ডি আই) অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মসূচির পাশাপাশি ঢাকার অদূরে ধামরাই উপজেলায় কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । এস ডি আই -এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ শামসুল হক বলেন “সবজিতে বিষ প্রয়োগ করে মানুষকে বিষ খাওয়ানো অর্থই হলো মানুষ হত্যার মত। এসডিআই যত দিন থাকবে ততদিন মানুষ বিষমুক্ত সবজি খাওয়াবে। এ হচ্ছে এস ডি আই -এর চ্যালেন্জ। আমরা এ চ্যালেঞ্জ কে আন্দোলনে রূপ দিতে চাই। এ আন্দোলন সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।” আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। এস ডি আই ক্ষতিকর কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রকল্প -২ এর আওতায় ধামরাই উপজেলার সোমভাগ ও রোয়াইল- এ দুইটি ক্লাস্টারের ২০০ জন চাষিকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। এক্ষেত্রে প্রজেক্টের কৃষি সমন্বয়কারী কৃষিবিদ এস এম আওলাদ হোসেন ও সহকারী টেকনীক্যাল অফিসার নাইমুর আহমেদ (রিপন) সার্বিক সহায়তা করছেন। প্রশিক্ষণের ফলে কৃষকরা চাষাবাদের ক্ষেত্রে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন। তারা এখন উন্নত কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সহ উচ্চ মূল্যে তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারজাত করতে সক্ষম হয়েছে। তারা মনে করে এই বিষমুক্ত সবজি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। এস ডি আই ও পিকে এস এফ আগামীতে এপ্রকল্পটিকে আরও বৃহৎ আকারে করার পরিকল্পনা করছে।
লেখক: কৃষি সাংবাদিক