Home First Lead নৌযান ধর্মঘটে পণ্য খালাসে অচলাবস্থা

নৌযান ধর্মঘটে পণ্য খালাসে অচলাবস্থা

ছবি: জাহাঙ্গীর আলম
  • ধর্মঘট নিরসনে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান চিটাগাং চেম্বারের

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: দেশের আমদানি পণ্যের কমপক্ষে ৪৯ শতাংশ খালাস হয় বহির্নোঙরে। সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে নৌযান ধর্মঘটে সেই পণ্য খালাসে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর লাইটারেজ ঠিকাদার সমিতি সূত্রে জানা যায়, বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের জন্য মঙ্গলবার কোন লাইটার যায়নি। কর্ণফুলীতে সব লাইটার নোঙরে। মাঝিরঘাটের ঘাটে ঘাটে পণ্যবোঝাই যেসব লাইটার রয়েছে সেগুলোর মাল খালাসও বন্ধ।

বহির্নোঙরে বেশ কয়েকটি বড় জাহাজ মঙ্গলবার ফিরে যাওয়ার কর্মসূচি ছিল। স্বল্প পরিমাণ মাল অবশিষ্ট জাহাজগুলোতে। খালাস না হওয়ায় ফিরে যেতে পারেনি।

চট্টগ্রাম থেকে মাল নিয়ে যাওয়া ৬ শতাধিক লাইটার বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছে। সেগুলোর পণ্য খালাস হচ্ছে না। এসব জাহাজে প্রায় ১০ লাখ টন পণ্য খালাসের অপেক্ষায় । সার, সিমেন্ট ক্লিংকার, গম, ডাল, সুগার মিলের কাঁচামাল ইত্যাদি রয়েছে।

মোংলা, খুলনা, বাঘাবাড়ী, আশুগঞ্জ ও ভৈরব নদীবন্দরেও অচলাবস্থা ।

ছবি: আজিম অনন

বেতন-ভাতার সুযোগ-সুবিধাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে।  বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আওতাধীন আটটি সংগঠন এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম অধিদপ্তরের সামনে নৌশ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন থেকে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। এর আগে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।

শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবি হলো-
১. বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা
২. ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান
৩. ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্যভাতা প্রদান
৪. সব নৌযান শ্রমিকের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ
৫. এনডোর্স, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুনর্নির্ধারণ
৬. কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ
৭. প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান
৮. নদীর নাব্য রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন
৯. মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও নবায়ন, বেআইনি নৌচলাচল বন্ধ করা
১০. নৌপরিবহন অধিদফতরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং
১১. নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

ধর্মঘট নিরসনের আহ্বান চেম্বারের

দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মাহবুবুল আলম নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি’র প্রতি ২০ অক্টোবর এক পত্রের মাধ্যমে আহবান জানিয়েছেন।

পত্রে তিনি বলেন গত ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে নৌযান শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। লাইটারেজ জাহাজ চলাচল না করায় সারাদেশে এসব কাঁচামাল ও পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বন্দরে জাহাজজট এবং কন্টেইনারজট নতুনভাবে সংকট তৈরি করছে। জাহাজের টার্ণ এরাউন্ড টাইম বৃদ্ধি এবং ওভার স্টের কারণে ডেমারেজ চার্জসহ পণ্য আমদানি-রপ্তানি ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং সাধারণ ভোক্তাদের অতিরিক্ত মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী ক্রয় করতে হবে। বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাসের এই সময়ে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত সাধারণ মানুষ আরো চাপের মুখে পতিত হবে। অর্থনীতির গতিধারা পুনরুদ্ধারে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্যবসায়ীরা নতুন করে অস্তিত্বের সংকটে পড়ার আশংকা দেখা দেবে বলে মনে করেন চেম্বার সভাপতি।

পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ ধরনের ধর্মঘট অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশী ক্ষতিকারক। এতে করে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হবে এবং সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাবে। ফলে বাজার অস্থিতিশীল হবে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে যাবে যা সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক উভয় পরিসরে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। করোনা মহামারীর আগ্রাসন থেকে ধীরে ধীরে অর্থনীতির চাকা পুনরুদ্ধারে চলমান আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নির্বিঘœ রাখা, বন্দরে জাহাজজট ও কন্টেইনারজট নিয়ন্ত্রণ রাখা, শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ অব্যাহত রাখা এবং আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারাদেশে পরিবহন স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।