Home অন্যান্য যেভাবে এসেছে পয়লা বৈশাখ

যেভাবে এসেছে পয়লা বৈশাখ

রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্যই আকবর প্রবর্তন করেছেন ইলাহি সনের; Image Source: historydiscussion.net

১৫৫৬ সালে ভারতবর্ষের শাসক হন আকবর। আকবর তাঁর শাসনকালের শুরুতেই কৃষিভিত্তিক রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে দিন মাস বছর গণনার জন্য স্থানীয় বিষয় ও কৃষিক্ষেত্রে তার প্রভাবকে মাথায় রেখে একটা সুনির্দিষ্ট, বিজ্ঞানসম্মত ও সর্বজনগ্রাহ্য পদ্ধতিতে ক্যালেন্ডারের নবনির্মাণের প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। না হলে খাজনার থেকে বাজনা বেশি হয়ে যাচ্ছিল। তাই সম্রাট আকবর এ কাজে তৎকালীন বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ সিরাজিকে নিযুক্ত করেন।

আমির ফতুল্লাহ সিরাজির পরামর্শে সম্রাট আকবর ৯৬৩ হিজরি সনের রবিউল মাসের ১০ তারিখ থেকে তারিখ-ই-ইলাহি চালু করলেন। তবে আবুল ফজলের বিখ্যাত বই ‘আকবরনামা’-তে বিস্তৃত ভাবে ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে যে, কৃষি রাজস্ব আদায়ের জন্য হিজরি সনের ব্যবহার নিতান্ত অনুচিত কারণ, ৩১ চান্দ্রবর্ষের সমান ৩০ সৌরবর্ষ এবং এ দেশে কৃষিকাজ সৌরবর্ষ হিসাবে করা হয়ে থাকে। আবুল ফজল আরও লিখেছিলেন, চান্দ্রবর্ষ ৩৫৪ দিনে আর সৌরবর্ষ ৩৬৫ বা ৩৬৬ দিনে। সুতরাং এই দুটি মতে সন গণনায় প্রায় ১১ থেকে ১২ দিনের তফাত হয়।

আকবর বাদশার মুখের ভাষা ছিল ফার্সি। আবারও সেই পিছু ফিরে দেখতে পাই, আজ থেকে প্রায় ৮০৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন পারস্যের সুলতান জামশিদ, নববর্ষ বা নওরোজ পালনের উদ্যোগ নেন। যার ধারা আধুনিক ইরানে আজও প্রবহমান এবং জাতীয় উৎসব হিসাবে মহা সমারোহে পালিতও হয়। ইরান থেকে নয়া সাল গণনার রীতি পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রাক্‌-মোগল যুগে বাংলায় পয়লা বৈশাখে তেমন ঘটা করে নববর্ষ পালিত হত না। আগের দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিন ও পরের দিন পয়লা বৈশাখ, ঘটপূজার মাধ্যমে নতুন বছরকে আবাহন করা হত। এ ছাড়াও বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসের মাঝামাঝি, অর্থাৎ বিক্রম সম্বৎ অনুযায়ী নববর্ষ শুরু শুক্ল প্রতিপদে আর তার পরেই যে বৃহস্পতিবার আসে, সে দিন বিশেষ করে ঘটিবাড়িতে ধান্যলক্ষ্মীর পুজো হয়। যা বিক্রম সম্বৎ অনুসারী তৎকালীন কৃষি-নির্ভর অর্থনীতির বহমানতার ক্ষয়িষ্ণু প্রতীক এবং প্রতীক পূজার উদাহরণও বটে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নওরোজের প্রভাব ভারতবর্ষেও ছড়িয়ে পড়েছিল এবং পরে তা উৎসবরূপে পালিত হতে শুরু করে। সেই সময়ে বারোটি মাসের নাম ছিল যথাক্রমে কারওয়াদিন, আরদি, বিহিসু, খোরদাদ, তির, অমরদাদ, শাহরিয়ার, আবান, আজুর, দাই, বাহাম আর ইস্কান্দার মিজ।

ঠিক কবে থেকে বাংলা মাসের নাম বদলে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ইত্যাদি হল, তার কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অনুমান করা হয়, আনুমানিক ৭৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে, অর্থাৎ শকাব্দ গণনার শুরু থেকে বারোটি নক্ষত্রের নামে বাংলার বারো মাসের নামকরণ করা হয়, যেমন— বিশাখা থেকে বৈশাখ, জ্যেষ্ঠা থেকে জ্যৈষ্ঠ, পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া থেকে আষাঢ়, শ্রবণা থেকে শ্রাবণ, পূর্ব ও উত্তর ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র, অশ্বিনী থেকে আশ্বিন, কৃত্তিকা থেকে কার্তিক, অশ্লেষা থেকে অগ্রহায়ণ, পুষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, পূর্ব ও উত্তর ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন এবং চিত্রা থেকে চৈত্র।

-পল্লব মুখোপাধ্যায়