Home Second Lead পরীমণির আরো এক স্বামী

পরীমণির আরো এক স্বামী

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

বর্তমান সময়ে টক অব দ্যা কান্ট্রি চিত্রনায়িকা পরীমণির মাদকসহ গ্রেপ্তার ইস্যু। গতকাল নায়িকার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এদিকে তার আটকের পর থেকেই একের পর এক গোপন তথ্য ফাঁস হচ্ছে। এবার সামনে এসেছে তার প্রথম স্বামীর নাম। এর আগে ৩ জনের সঙ্গের বিয়ের বিষয় সামনে এলেও তারও আগে একটি বিয়ে করেছিলেন পরীমণি। সেটিই ছিল ভালোবাসা সীমাহীন ছবির নায়িকার প্রথম বিয়ে।

জানা গেছে, আজকের বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত নায়িকা পরী পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের শিংখালী গ্রামে মামার বাড়িতে থেকে বড় হয়েছেন। তার প্রকৃত নাম শামসুন নাহার স্মৃতি। তার নানারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছিলেন। সেখানে এসএসসি পাসের পর খালাত ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম বিয়ে হয় পরীমণির।

বিষয়টি নিয়ে পরীর নানা শামসুল হক গাজী জানান, মূলত পরীমণির মায়ের মৃত্যুর পর তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি। আমাদের বাড়িতে থেকে স্থানীয় স্কুলে লেখাপড়া করে সে। পরী খুব মেধাবী ছিল। গরিব হওয়ায় কোনো প্রাইভেট পড়তে পারেননি। তারপরও সে ভগিরাতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল।

তবে এসএসসিতে প্রথমবার ফেল করলেও দ্বিতীয়বার পাস করে সে। পরবর্তীতে স্থানীয় একটি কলেজে ভর্তি হলেও বরিশালে থাকা খালাতো ভাই ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। সেখানে ২ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর বিচ্ছেদ হয়। বলছিলেন পরীর নানা।

এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পরীর প্রথম বিয়ে ভেঙেছিল উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য। এরপর ২০১৯ সালে দ্বিতীয় ও ২০২০ সালে তৃতীয় বিয়ে হয় পরীমণির।

এছাড়া একজন ফুটবলারকে বিয়ের খবরও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিসহ ভেসে বেড়িয়েছে। তার নাম ফেরদৌস কবীর সৌরভ। বাড়ি যশোরের কেশবপুরে। তিন বছর প্রেম করার পর ২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল বিয়ে করেছিলেন তারা। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরী ও সৌরভের কয়েকটি ঘনিষ্ঠ ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল ফেসবুকে। তখন বিয়ের কাবিননামার একটি কপিও ভাইরাল হয়।

ক্যারিয়ারের শুরুতে বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেন পরী। সেখানে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। নাটকে কাজের সময়ই বড় পর্দায় কাজের সুযোগ পান তিনি। ২০১৪ সালে চলচ্চিত্র জগতে আসেন। শামসুন নাহার স্মৃতি থেকে পরীমণি নামে পরিচিতি পান। এ পর্যন্ত ৩০টি চলচ্চিত্রে কাজ করলেও কোনো ছবিই ব্যবসা সফল হয়নি তার। ছবি হিট না হলেও ছোট-বড় মিলিয়ে ৫-৭টি বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে দেখা গেছে তাকে। পরীকে পিরোজপুর থেকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আনেন প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। এদিকে বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় প্রযোজক-অভিনেতা রাজেরও ৪ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

নানার হাত ধরেই ২০১১ সালে চলে আসেন ঢাকার সাভারে। এরপর পা রাখেন ঢাকায়। রাজধানীতে এসেই নাম পরিবর্তন করে পরীমণি নামে নতুন পরিচয় ধারণ করেন। কয়েক মাস টেলিভিশনের নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের প্রথমদিকে পরীমণির সঙ্গে পরিচয় হয় প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের। তিনি পরীকে চলচ্চিত্র জগতে কাজ করার প্রস্তাব দিলে কোনো আপত্তি জানাননি তার নানা। একপর্যায়ে পরীমণি ও রাজের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে রূপ নেয়। রাজের পরিচালনায় ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ নামে একটি চলচ্চিত্রে  অভিনয় করেন পরীমণি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সিনেমায় কাজ শুরুর পর নাটকীয়ভাবে বদলে যায় তার জীবনযাত্রা। রাতারাতি বনে যান অগাধ টাকার মালিক। হাঁকিয়ে বেড়াতে থাকেন দামি গাড়ি। অল্প দিনেই যেন হাতে পান আলাদিনের চেরাগ। চার বছরের মাথায় ফ্ল্যাট-গাড়ি থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যে, তার অভাব আছে। পরীমণির বিষয়ে তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক র‌্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। অল্প সময়ে পরীমণির এই উত্থানপর্ব নিয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

সাত প্রভাবশালীকে খুঁজছে পুলিশ : তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রেপ্তারের পর গত বুধবার রাতভর পরীমণি ও রাজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন আলোচিত ব্যক্তির নামও প্রকাশ করেছেন। যারা নিয়মিত পরীমণির বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। তারা দেশের বাইরেও নিয়ে যেতেন পরীমণিকে। ওইসব ব্যক্তির মধ্যে একজন তুহিন সিদ্দিকী অমি এখন কারাবন্দি। এর বাইরে আরও সাত প্রভাবশালীকে খুঁজছে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। বোট ক্লাবের ঘটনার পর থেকেই পরীমণিকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছিল। রাজ ও পরী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অনেকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও আছে।

বিদেশ ভ্রমণপিয়াসী পরী : পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেন, পরীমণি অল্প সময়েই বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন। বনানী, গুলশান ও উত্তরায় একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে তার। দুবাই, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় প্রায়ই যাতায়াত করতেন। আর এই কাজে তাকে বেশি সহায়তা করেছেন অমি। ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, উৎস অজানা থাকলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বেড়াতে যেতেন। সর্বশেষ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে তাকে দেখা গেছে একটি বিলাসবহুল প্রমোদতরী নিয়ে সাগরে ঘুরে বেড়াতে। ওই সময় তিনি বুর্জ আল খলিফার প্রেসিডেস্ট স্যুটে ছিলেন। তাছাড়া জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গেও আছে তার ঘনিষ্ঠতা। তিনি পরীকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়িও উপহার দেন। অভিনয় করাকালেই তার সঙ্গে প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। সর্বশেষ তার অভিনীত তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘স্ফুলিঙ্গ’ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। চলচ্চিত্র প্রতি তার পারিশ্রমিক ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা।

পরীমণির ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার : রাজের মাধ্যমেই অনেক ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির সঙ্গে পরিচয় হয় পরীমণির। পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা পরীর বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। সম্পর্কের একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন পরী। তার এই কারবারে পরে যোগ দেন মিশু ও জিসান। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের বিজ্ঞাপনের মডেল এবং চলচ্চিত্রের নায়িকা হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়ার নামে অতিথিদের মনোরঞ্জনে বাধ্য করা হতো। গোপন ক্যামেরায় আবার সেসব দৃশ্যের ভিডিওচিত্র সংরক্ষণ করে রেখে ওইসব ছাত্রীকে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে বাধ্য করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের একাধিক ফুটেজ পরীমণির ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পরীমণি তার চক্রের আরও বেশ কয়েকজনের নাম বলেছেন। তার মধ্যে ব্যবসায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, পরিচালক, প্রযোজক ও সাংবাদিক রয়েছেন। তবে তাদের ফাঁসানোর জন্য পরী এসব নাম বলেছেন কি না তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পরীমণির বিশ্বস্ত সহযোগী কস্টিউম ডিজাইনার জিমি। তাকে সঙ্গে নিয়েই সবসময় চলাফেরা করেন। আবার তার মাধ্যমেও অনেকে যোগাযোগ করে পরীর সঙ্গে। বাসার পার্টি শেষে শিডিউল অনুযায়ী গভীর রাতে বিভিন্ন ক্লাবে ছুটে যান তারা। এরপর সেখান থেকে নির্ধারিত ব্যক্তির সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকাও নিতেন।

বোট ক্লাবে কী ঘটেছিল সেদিন : ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে সম্প্রতি নাসির ইউ মাহমুদ নামে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন পরীমণি। এরপর ওই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত সত্য জানা যায়। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ওই রাতে পূর্বপরিচিত অমির মাধ্যমে বোট ক্লাবে যান পরীমণি। সেখানে যাওয়ার পর অতিরিক্ত মদপানের একপর্যায়ে দামি মদের বোতল নিয়ে আসতে চান পরী। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ান নাসির। সেখানে ভাঙচুরের একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরীকে নিয়ে বেরিয়ে যান জিমি। এ ঘটনার পর সমঝোতার জন্য ওই ব্যবসায়ীর কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চাওয়া হয়। না হলে তাকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে বিভিন্ন মারফত হুমকি দেওয়া হয়। এরই মধ্যে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাব কর্তৃপক্ষ ভাঙচুরের অভিযোগ এনে পরীর নামে থানায় সাধারণ ডায়েরি করে।

দামি গাড়ি, কোটি টাকার ফ্ল্যাট, মূল্যবান অলঙ্কার সবকিছুই আছে পরীর। নির্দিষ্ট প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ হতেই বেশি পছন্দ করতেন তিনি। এছাড়া কয়েকটি ব্যাংকে পরীর মোটা অঙ্কের অর্থও জমা আছে। টাকার নেশা তাকে ছাড়েনি।’

রাজনৈতিক নেতা পরিচয় দিতেন রাজ : নিজের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ায় কখনো কখনো নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা বলে পরিচয় দিতেন রাজ। আবার কখনো দলটির শীর্ষপর্যায়ের এক নেতার পিএস পরিচয়ও দিতেন। প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রাজ। গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব কর্মকর্তাদের কাছে নিজেই এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি। গোপালগঞ্জ নতুন রেলস্টেশনের পাশে পাঁচতলা একটি আবাসিক হোটেল ভবন নির্মাণ করছেন রাজ। তিনি ঠিকাদারিও করতেন।