আরিফুল ইসলাম জয়
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম ) : পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদানের অন্যতম একটি পলিথিন। কিন্তু পলিথিন এখন আর ক্ষতিকর বর্জ্য নয়। সঠিক ব্যবহারে এটি যে আশীর্বাদ হতে পারে, বর্জ্য পলিথিন দিয়ে পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদন করে তাই দেখিয়ে দিলেন ভূরুঙ্গামারীর পারভেজ।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার মইদাম গ্রামের বদিউজ্জামান এর পুত্র মোঃ পারভেজ মোশারফ। তিনি বর্তমানে মইদাম মহাবিদ্যালয়ের ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষের ছাত্র। তিনি পলিথিন থেকে পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদন করতে প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন টিনের তৈরি ড্রাম, কয়েকটি বোতল, কাঠ এবং প্লাস্টিকের বয়েম দিয়ে তৈরি রিফাইনার মেশিন।
এই প্রযুক্তিতে ড্রামের ভেতর পলিথিন রেখে তা আগুনের তাপে গলিয়ে বাষ্পের মাধ্যমে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন উৎপাদন করছেন তিনি।
তার উৎপাদিত পেট্রোল ১০০ টাকা ও ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা লিটার হিসেবে।
উৎপাদিত পেট্রোল দিয়ে চলছে মোটর বাইক, ডিজেল দিয়ে চলছে কৃষিতে ব্যবহৃত পাওয়ার টিলার। পারভেজের এই উদ্ভাবনে একদিকে যেমন পলিথিন রিসাইকেল হয়ে সম্পদে পরিণত হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে৷ অপেক্ষাকৃত কম দামে পেট্রোল ও ডিজেল পেয়ে ব্যবহার করছেন এলাকাবাসীও।
তিনি এর আগেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার করে উৎপাদিত পেট্রোল দিয়ে মোটরবাইক এবং ডিজেল দিয়ে পাওয়ার টিলার চালিয়ে ইতোমধ্যে সফলতা পেয়েছেন তারা। কিন্তু করোনাকালীন সময়ে তিনি অর্থনৈতিক কারণে প্রযুক্তি বন্ধ করে দেন। এলাকাবাসী ও বন্ধুদের সহযোগিতায় আজ ১৯ আগষ্ট ২০২২ শুক্রবার তিনি নতুন করে চালু করেন। তিনি বলেন আমার এই উদ্ভাবনী প্রযুক্তি সল্প পরিসরে করছি।
সরকারি কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান এর সহযোগিতা পেলে কম মূল্যে জ্বালানী উৎপাদন ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্ভব বলে মনে করি।
পারভেজ বলেন, এক কেজি পলিথিন থেকে প্রায় ৭৫০ গ্রাম জ্বালানি উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০০ গ্রাম পেট্রোল আর ৪৫০ গ্রাম ডিজেল। এটি অত্যন্ত পরিশোধিত জ্বালানি। সরকার যদি প্রতিটি জেলায় তেল পরিশোধন মেশিন দিয়ে সহায়তা করে তাহলে আমার মত অনেক যুবকই এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
এদিকে বর্জ্য থেকে জ্বালানী উৎপাদনের খবর সাড়া ফেলেছে স্থানীয়দের মাঝে। স্থানীয় কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, মাঠে সেচের জন্য ডিজেল চালিত পাম্পে নতুন উৎপাদিত ডিজেল ব্যবহার করছি। আমার মতো অনেক কৃষকই এখন এই ডিজেল ব্যবহার করছেন। এটি দামে সাশ্রয়ী ও মানেও ভালো। তাই এলাকার কৃষকের কাছে এই ডিজেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, পলিথিনের এ ধরনের পুণর্ব্যবহারই পারে পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনতে। এটি একটি বিস্ময়কর প্রযুক্তি। এ ব্যাপারে সরকারের উচিত তার পাশে দাঁড়ানো। এ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ঘটিয়ে খুব সহজেই পলিথিন বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং তা থেকে তেল উৎপাদনের মাধ্যমে জ্বালানির চাহিদা মেটানো সম্ভব।