Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য গোয়াহরি বিলে পলো বাওয়া উৎসব

গোয়াহরি বিলে পলো বাওয়া উৎসব

পলো বাওয়া উৎসব। ছবি সংগৃহীত

মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ ( সিলেট) থেকে : ‘ঝপ-ঝপা-ঝপ’ শব্দের তালে তালে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের বিলে (দক্ষিণের বড় বিল) বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়েছে বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব। প্রতি বছরের ন্যায় এবারের পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দিতে দেশে এসেছেন অনেক প্রবাসী ও স্বামী-সন্তান নিয়ে পিত্রালয়ে বেড়াতে এসেছেন গ্রামের অনেক মেয়েরা। পলো বাওয়া উৎসবকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েক দিন ধরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

মাঘ মাসের প্রথম দিনে এ উৎসব হয়ে থাকে। এ উৎসবের সপ্তাহখানেক আগ থেকে এলাকায় তেলের টিনে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় উৎসবের তারিখ। প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম তারিখে গ্রামবাসী দক্ষিণের বড় বিলে ওই উৎসব পালন করে থাকেন। এই উৎসবটি ধরে রেখেছেন বিশ্বনাথের গোয়াহরী গ্রামের লোকজন।

সকাল থেকে হাওর পারের লোকজন পলোসহ মাছ ধরার বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে বিলের পাড়ে সমবেত হতে থাকেন। দুপুরে ১১টায় একসঙ্গে গ্রামের শত শত লোকজন পলো নিয়ে বিলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ সময় উৎসবটি উপভোগ করতে গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ সবাই বিলের পাড়ে উল্লাস করেন। বিলের পাড়ে উৎসব উপভোগ করতে যাওয়া গ্রামের অনেক প্রবীণদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের পূর্বপুরুষেরা প্রায় দেড়শ’ বছর ধরে এ উৎসব পালন করে আসছেন। তাই তারা প্রতি বছর এ উৎসব পালন করে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আসছেন। মাছ ধরা শেষে একে একে উঠে আসেন তারা। সবার হাতে ছিল নানা ধরনের দেশীয় মাছ। কারও হাতে ছিল বড় বোয়াল, কারও হাতে ছিল কাতলা, শোল, গজার কিংবা রুই মাছ। আর হাতজাল দিয়ে ছোটরা শিকার করেন টেংরা-পুঁটিসহ ছোট মাছ।

স্থানীয়রা জানান, গোয়াহরি গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ভাদ্র মাস থেকে বিলে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর পাঁচ মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকে। মাঘ মাসের প্রথম দিনে প্রথা অনুসারে উৎসব আয়োজন করে মাছ ধরতে নামেন গ্রামবাসী। তবে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিলে মাছ কম ছিল।

সৌখিন মাছ শিকারী তাজ উদ্দিন বলেন, বিলে পানি কম থাকায় কেউ মাছ শিকার করতে পারছে, আবার কেউ পারতেছে না। তবে আমি ২টি বোয়াল শিকার করতে পেরে আনন্দ লাগছে।
গ্রামে আসা আত্মীয় সৌখিন মাছ শিকারী শামীম আহমদ বলেন, পলো বাওয়াতে অংশ নিতে খালার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। আর পলো বাওয়াতে অংশ নিয়ে ১টি বোয়াল শিকার করতে পেরে আনন্দই লাগছে।
৫ বছর পর সৌদি আরব থেকে দেশে আসা প্রবাসী গোলাম কামরান বলেন, দীর্ঘদিন পলো বাওয়া উৎসবে অংশ গ্রহন করা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। তাই এবারে দেশে এসে পলো বাওয়া উৎসবে যোগ পেতে পেরে খুবই আনন্দ পেয়েছি। আর মাছ শিকার করতে পেরে এর পরিধি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাছ শিকার কম হওয়ার ব্যাপারে গ্রামের প্রবীন মুরব্বী ময়না মিয়া বলেন, দিন বিলের সাথে এলাকার নদী-নালার পানি চলাচল না থাকার কারনে বিলের পানি কমে গেছে। তাছাড়া কচুরিপানাও আছে প্রচুর। এসব কারণে এবার মাছ কম শিকার করতে পেরেছেন শিকারীরা।