Home First Lead পশুখাদ্যে সিন্ডিকেট, দিশেহারা খামারিরা

পশুখাদ্যে সিন্ডিকেট, দিশেহারা খামারিরা

  • ১৬০০ টাকার সয়াবিন খৈল ২৬০০ টাকা
  • লোকসানে খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা 

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: সিন্ডিকেটের কারসাজিতে পশুখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। তা স্বাভাবিক না হলে লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যাবে বাণিজ্যিকভিত্তিতে স্থাপিত অধিকাংশ ডেইরি ফার্ম।

এ আশংকার কথা জানালেন চট্টগ্রাম জেলা ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মালিক মো. ওমর। তিনি বিভাগীয় ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক।

মালিক মো. ওমর

বিজনেসটুডে২৪ এর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় আরও বললেন, বিরাজমান করোনা পরিস্থিতে এমনিতে দুর্দিন যাচ্ছে খামার মালিকদের।এ অবস্থার মধ্যে আরও সংকট তৈরি করেছে পশুখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন পশুর প্রোটিনের বড় উৎস  সয়াবিন খৈলের দাম দু’মাস আগেও ছিল মণ ১৬০০ টাকা। এখন ২৬০০ টাকা। বড় বড় কয়েকটি কোম্পানির কারখানার বাই প্রোডাক্ট সয়াবিন খৈল। সয়াবিন তেল তৈরির সময় পাওয়া যায় এই খৈল। আবার চট্টগ্রাম ভিত্তিক ব্যবসায়ীরা মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করেন সয়াবিন খৈল। বড় কারখানাগুলো সয়াবিন সংগ্রহ করে বৃহত্তর নোয়াখালীসহ কয়েকটি স্থান থেকে। তবে, ৭০ ভাগ সংগৃহীত হয় নোয়াখালী থেকে। মওসুমে মণ ১৩০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা। অর্থাৎ মেইন প্রোডাক্টের ডবল দাম বাইপ্রোডাক্টের।

সয়াবিন খৈল

জানান, কেবল সয়াবিন খৈল নয়, পশুখাদ্যের প্রতিটি আইটেমের প্রতিটি আইটেমের দাম বেড়ে গেছে কম বেশি। এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে পশুর খাবার বাবৎ খামারিদের ব্যয় গড়ে ২৪ শতাংশ বেড়ে গেছে দু’মাসে। কিন্তু সেভাবে দুধের দাম বাড়ানো সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ভাংতে হবে সিন্ডিকেট। তা এককভাবে প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়। তার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপের পাশাপাশি খামার মালিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

মালিক মো. ওমর জানান, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে স্থাপিত খামারসমূহের খরচের ৭০ ভাগ যায় পশুখাদ্যে। কোন আইটেমের দাম বাড়লে তাই খরচ বেশ বেড়ে যায়। নমুনা হিসেবে উল্লেখ করেন,  যে খামারে পশুখাদ্য বাবৎ মাসিক খরচ ৬ লাখ টাকা, দু’মাসের ব্যবধানে এ খাতে তাদের ব্যয় বেড়ে গেছে ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।আরও আগে বেড়েছে কর্মচারিদের বেতন।

করোনার শুরুতে দু’মাস শহরের খামারগুলোকে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়নি। কিন্তু পল্লী অঞ্চলের খামারগুলোতে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ দুধ ফেলে দিতে হয়েছে। মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ ছিল তাই দুধের চাহিদা কমে যায় তখন। নিজের খামারের সে সময়ের দুরবস্থা উল্লেখ করে বলেন, তখন বহদ্দারহাট মোড়, মেহেদিবাগ মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন নামেমাত্র দামে দুধ ফেরি করে বেচতে হয়েছে। অনেকে তখন দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে বউয়ের সখের স্বর্ণ, গরু বাছুর এমন কি ভাল গাভিও বিক্রি করে দিয়েছেন। আর কয়েক মাস গেলে দুধেল গাভিতে পরিণত হতো এমন বকনাও বিক্রি করে দিয়েছেন কসাইদের কাছে।

প্রবীণ এই খামারি আরও জানালেন, বিপুল সংখ্যক গাভি এবং বকনা বাছুর বিক্রি হয়ে যাওয়ার পরিণতিতে বর্তমানে দুধের উৎপাদন কমে গেছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশংকা করেন তিনি।

খামারিদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এমন এক পণ্যের ব্যবসা যে একদিনও রাখা যায় না। আর সে সুযোগ নিয়ে মিষ্টি দোকান মালিকরা ন্যায্য দর দিতে চান না। এখন যেভাবে দুধের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে তাতে প্রচুর লোকসান বাণিজ্যিক খামারিদের। এ অবস্থায় পশুখাদ্যের দাম হ্রাস এবং দুধের দাম না বাড়ানো হলে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। লোকসানে ফতুর হয়ে যাবে।

মালিক মো. ওমর ভারত, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মত বাংলাদেশেও ডেইরি খাতে সরকারি ভর্তুকি প্রদান, গুঁড়োদুধ আমদানির ওপর করভার বৃদ্ধি করা এবং কম দরে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বলেন, গুঁড়োদুধ আমদানিতে কর বাড়ানো হলে দর কিছুটা বাড়তে পারে।কিন্তু পরবর্তীতে সুফল মিলবে। ডেইরি ফার্ম করে মুনাফা দেখে অনেকে এখাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। আর যে সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হবে তাতে ভোক্তা সাধারণ ন্যায্য দরে দুধ কিনতে পারবে।