যন্তর-মন্তর চত্বর তখন গমগম করছে স্লোগানে-প্রতিবাদে। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বহু মানুষের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন ভারতের কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ারও। বললেন, তাঁকে ভবিষ্যতে কোন দেশে যেতে হবে তিনি জানেন না। কারণ তাঁর জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানে।
কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর বলেন, “আসলে এ দেশের মুসলমানদের সমস্যায় ফেলতেই এই আইন আনা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা আইনের আড়ালে থাকা সেই উদ্দেশ্যটা খুব ভাল করে বুঝে গেছে। সে জন্যই ওরা এত রেগে গেছে। ওদের কণ্ঠস্বর নিশ্চয় ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলবে।”
তবে মণিশঙ্কর বলেন, মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষে এই আইন তৈরি হলেও, এর জেরে আরও অনেকেই বিপদ পড়বেন। নিজের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন “আমি তো পাকিস্তানে জন্মেছি। তার পরে আমার পরিবার ভারতে আসে আশ্রয়ের জন্য। আমি নাগরিকত্বের কী প্রমাণ দেখাব? তার চেয়েও বড় কথা, আমি কেন আমার পরিচয়ের প্রমাণ দিতে বাধ্য?”
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বুকে এই জমায়েতে অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গে মণিশঙ্কর আরও বলেন, “আমি এটা ভেবেই খুব খুশি যে আমি আমার নাতি-নাতনিদের বলতে পারব, ঐতিহাসিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম আমি। আমি বলতে পারব, মোদী-শাহ সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা করেছিল যে আন্দোলন, তাতে আমি অংশ নিয়েছিলাম।”
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লিতে ক্ষোভের আগুন জ্বলেছে গত সপ্তাহ থেকেই। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ লাঠি চালালে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের সমর্থনে রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। ক্ষোভ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে পুরনো দিল্লি ও পূর্ব দিল্লিতেও। সীলমপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় পুলিশের। অশান্তি রুখতে লাঠি চালায় পুলিশ, ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা।
এদিন সকাল থেকেই দিল্লির পরিস্থিতি ছিল থমথমে। লালকেল্লা, মান্ডি হাউস এলাকায় বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করেছিল দিল্লি পুলিশ। কিন্তু বেলা গড়াতেই দেখা যায় অশান্তির আগুন ছড়িয়েছে সর্বত্র। লালকেল্লা চত্বরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের। লালকেল্লার সামনে থেকে আটক করা হয় বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজকর্মী থেকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে। বিকেলের দিকে প্রতিবাদ মিছিল সরে আসে যন্তরমন্তরের কাছে। সেখানেও হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দেখা গেছে বড় জমায়েত।