
চট্টগ্রামে বিশ্ব পানি দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আলোচনা সভা
চট্টগ্রাম: বিশ্ব পানি দিবস উদযাপন উপলক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলফমেন্ট (এএলআরডি) এর সহযোগিতায় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আএসডিই বাংলাদেশ, ও ক্যাব চট্টগ্রাম কর্তৃক আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা
সভায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বন এবং হালদা কর্ণফুলি নদী রক্ষা করা না গেলে চট্টগ্রামে আগামীতে সুপেয় পানির সংকট হবে। আলোচকরা উল্লেখ করেন, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম মহানগরী একদিকে বর্ষাকালে পুরো শহর পানিতে থলিয়ে যায় আবার শুকনো মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। উপকূলীয় অঞ্চলে পানির স্তর দ্রুত নীচে নেমে যাওয়ায় ও সমুদ্রপৃষ্ঠে উচ্চতা বাড়ায় লবণাক্ততা বাড়ছে প্রতিনিয়তই। সেকারনে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে কৃষি কাজ, বাসাবাড়ির কাজও পুরোপুরি বিপর্যস্ত। আর এগুলোর পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রামের বন বিনষ্ট, জলাধার, নদী ও খাল দখল অন্যতম কারণ। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির মূল উৎস এই দুই নদীর এ অবস্থা চলমান থাকলে আগামীতে লবনাক্ত পানিও ওয়াসা সরবরাহ করতে পারবে না। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের বন, কর্ণফুলী ও হালদা নদী বাঁচানো যেরকম প্রয়োজন, তেমনি জরুরি ভাবে লবণাক্ত পানিকে বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় লবণ সরিয়ে ফেলার উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে আসতে হবে।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি ও এনভায়রনমেন্ট সাইন্স ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডঃ খালেদ মিজবাহউজ্জামান। ধারণা পত্র উপস্থাপন করেন আইএসডিই এর প্রকল্প কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম।
মুল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, প্রায় ৫০০ বছর আগে গোড়াপত্তন ঘটে চট্টগ্রাম শহরের। কিন্তু পরিকল্পিত নগরায়নের অভাবে আজও একটি পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত নগরী হতে পারেনি এটি। উল্টো সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর যথাযথ পদক্ষেপ না থাকায় সমস্যাগুলো দিনে দিনে বাড়ছে। চট্টগ্রামের প্রাণখ্যাত কর্ণফুলী ও হালদা নদী দূষণ, দখল, ভরাটের শিকার। নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৩০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য নিঃসৃত হচ্ছে। যা ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন ৫১ কোটি লিটারে উন্নীত হবে। নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা না হলে নগরীর একমাত্র সুপেয় পানির উৎস এ দুটো নদী ভয়াবহ দূষণের শিকার হবে। এতে চট্টগ্রামের পরিবেশ দূষণসহ নগরীর সুপেয় পানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হবে। অথচ এ দুটি নদীই ওয়াসার সুপেয় পানির প্রধান উৎস। প্রতিদিন এ দুইটি নদী থেকে ওয়াসা ৪৩ থেকে ৪৫ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করছে। আগামীতে আরো ১০ থেকে ১২ কোটি লিটার পানি উত্তোলন হবে। এছাড়া নগরীতে দৈনিক প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য হয়। তার একটি অংশও নদীতে গিয়ে পড়ছে। নগরীর তরল ও কঠিন বর্জ্য ছাড়াও নদীর দুই ধারের শিল্পকারখানার দূষিত কেমিক্যালও হালদা ও কর্ণফুলী গিয়ে পড়ে। এ কারণে ক্রমাগত দূষণের শিকার হচ্ছে এ দুইটি নদী। উচ্ছেদ হচ্ছে না কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা। উল্টো দখল হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকা।
আলোচনা অংশনেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, নারী নেত্রী ও এডাব চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, বোয়ালখালী উপজেলা বাংলাদেশ ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সাবেক সভাপতি নুর মোহাম্মদ, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন এর কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্ম জানে আলম প্রমুখ
-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি