বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার মিষ্টিপান ও সাঁচিপানের খ্যাতি দেশজোড়া। প্রচুর চাহিদা এই পানের। বিদেশেও চাহিদা কম নয় চুয়াডাঙ্গার পানের। কিন্তু বর্তমানে ব্যাপক দরপতনে হতাশ চাষিরা।
অনুকূল আবহাওয়ার কারণে প্রচুর পান উৎপন্ন হয়ে থাকে এখানে। তুলানামূলক উঁচু জমিতে পান আবাদ ভালো হওয়ায় যুগ যুগ ধরে পানের আবাদ করে আসছে চাষিরা। পানকে জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল বলা হলেও বর্তমানে তা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। অনেকেই পানের পরিবর্তে শুরু করেছেন ভুট্টা, ধানসহ অন্য আবাদ।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে ১৭৭৪ হেক্টর, ২০১৯ সালে ১৭৩০ হেক্টর, ২০২০ সালে ১৬৭০ হেক্টর, ২০২১ সালে ১৬০৯ হেক্টর ও ২০২২ সালে ১৬৩৩ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। তবে ক্রমান্বয়ে এই পান চাষে কৃষকদের আগ্রহ কমেছে বলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়। মাথাভাঙ্গা নদীবেষ্টিত এ জেলার ছোট-বড় প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে বারমাসি ফসল পানের বিস্তীর্ণ ক্ষেত।
সম্প্রতি জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের পানবাজারে আড়তে গিয়ে দেখা যায়. বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রির জন্য চাষিরা পান নিয়ে এসেছেন। আগের মতো বাইরের ক্রেতা তেমন একটা নেই।
চুয়াডাঙ্গা সদর, মুন্সীগঞ্জ, নীলমনিগঞ্জ, ভালাইপুর, আসমানখালী ও আলমডাঙ্গা বাজারে সপ্তাহে ২ দিন পানের পাইকারি হাট বসে থাকে। দেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল থেকে ব্যবসায়ীরা উল্লেখিত বাজারগুলো থেকে পান কিনে ট্রাকযোগে নিয়ে যায়।
প্রতি পণ পান সর্বোচ্চ ৭০-৮০ টাকা ও সর্বনিম্ন ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরে ২শ টাকার উপরে ছিল। বর্তমানে পানের দরপতনে হতাশ জেলার সকল কৃষকরা।
চাষিদের কয়েকজন জানালেন, বাজারে পানের দাম প্রতিনিয়ত কমছে। আগে যেখানে এক পণ পান বাজারে প্রকারভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন সেই পানের দাম কমতে কমতে ৫০ থেকে ৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। আবার পান চাষের উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়া ও পানের রোগ বালাইয়ে প্রতি বছরই উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এ অবস্থায় লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই তুলতে পারছি না। অব্যাহত লোকসানের কারনে চরম হতাশ হয়ে অনেক পান চাষিই দীর্ঘ দিনের পানের বরজ ভেঙে ফেলছেন।
পান চাষিরা বলছেন, আগের মতো যদি পান বিদেশে রপ্তানি করা যায় তাহলে তারা হয়তো আবার লাভের মুখ দেখবেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, চাষিদের পান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছি। আধুনিক পদ্ধতিতে পানের আবাদে চাষিদের লাভ বেশি হবে।
উপ-পরিচালক ড. আবদুল মাজেদ বলেন, পানচাষিরা বহুমুখী সঙ্কটে রয়েছেন। পানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। চাষিরা যেন সিন্ডিকেটের কবলে না পড়েন সেজন্য নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে।