বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: ছ’মাসেও হাতে মিলছে না পাসপোর্ট। অথচ পাওয়ার কথা ৩ সপ্তাহে। জরুরি পাসপোর্ট পাওয়ার কথা ৭ কার্যদিবসে। দু’মাসেও খবর নেই। ডেলিভারির জন্য এসএমএস আসে না। ৬৯৬৯ নম্বরে এসএমএস পাঠালে রিপ্লাই আসে প্রিন্টিং প্রসেসে থাকার। যতবার করা হয় কেবল সেটাই আসে। সেই প্রসেস শেষ হচ্ছে না হাজার হাজার আবেদনকারির।
আর এই সুযোগে ‘দালাল’দের কারবার জমজমাট।
খ্যাতনামা ইসলামি চিন্তাবিদ প্রফেসর ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। বিদেশে প্রচুর প্রোগ্রাম থাকে তাঁর। এত ব্যস্ততা যে অন্ততঃ ৬ মাস আগে প্রোগ্রাম নির্ধারণ করতে হয়। জানালেন, পাসপোর্ট রিনিউ করতে দেয়ার পর ৫ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। অথচ নির্ধারিত ৩ সপ্তাহে পাসপোর্ট পাওয়া হিসাব করে বিদেশে তিনি প্রোগ্রাম নিয়েছেন। মিস করেছেন। চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া প্রয়োজন। তাও হচ্ছে না। কয়েক দফায় পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে সহায়তা চেয়েছেন। কোনো সুফল মেলেনি। তিনি আবেদন করেছেন নভেম্বরে।
আর পাঁচলাইশে অবস্থিত চান্দগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মাসুম হাসান বললেন, সেপ্টেম্বরে আবেদন করা পাসপোর্টও পাওয়া যায়নি। বিজনেসটেুডে২৪ প্রতিনিধিকে এ কথা বলেছেন তিনি পাসপোর্ট সংকট প্রসঙ্গে।
জানালেন, ৬ মাসের বেশি সময় ধরে তো এমন অবস্থা। এই প্রতিনিধির সাথে যখন কথা হচ্ছিল তার মধ্যে দেখা গেল প্রতি দু’মিনিটে অন্তত একজন এসে জানালেন জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তার কথা। কেউ বলছেন ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে কর্মসংস্থানে বিদেশে যাওয়ার, কেউ জানাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা। পড়াশোনার জন্য বিদেশে কথা বলেছেন দু’য়েকজন। ডেলিভারি স্লিপে তিনি সই করে দিচ্ছেন বিশেষ ব্যবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য।
দ্রুত পাসপোর্ট ডেলিভারি পেতে দালালদের তৎপরতার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনিও শুনেছেন বলে জানান। তবে, অফিসের মধ্যে এমন কিছুর অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করেন।
কেবল ড. খালিদ নন, তার মত হাজার হাজার মানুষ পাসপোর্ট নবায়ন এবং নয়া পাসপোর্ট চেয়ে মাসের পর মাস অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের অপেক্ষার সময় কখন শেষ হবে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কর্মকর্তারা। অথচ অনেকবার উর্ধতন কর্মকর্তাদের বক্তব্য ‘পাসপোর্ট বইয়ের যে সংকট ছিল, সেটা কেটে গেছে। আমরা ২০ লাখ এমআরপি বই জরুরি ভিত্তিতে আমদানি করেছি’ তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাস্তব অবস্থা হলো ৬ মাসেও কাঙ্খিত পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছেন না মানুষ।
ই-পাসপোর্টকে কেন্দ্র করে এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) বইয়ের সংকট সৃষ্টি । জুলাই মাসে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার কথা ছিল। সেভাবে সময় ধরে মজুত ছিল এমআরপি বই। কিন্তু তা বেশ পিছিয়ে যায়। তাতে তৈরি হয়েছে সমস্যাটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সময় মত পাসপোর্ট না পেয়ে ভুক্তভোগী মানুষ শরনাপন্ন হচ্ছেন দালালদের। আগে দালালরা খুঁজতো কাস্টমার। আর এখন অনন্যুপায় কাস্টমাররা খুঁজেন দালালদের। চান্দগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে না হলেও আশেপাশে এদের সন্ধান মিলে। আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দিলে তারা দিন দশেকের মধ্যে ডেলিভারি পাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারছেন।
পাসপোর্ট পাওয়ার এমন সংকট কেবল এখানে নয়, দেশের সব বিভাগীয় ও আঞ্চলিক অফিসে। আবেদনকারিরা প্রতি সপ্তাহে যান পাসপোর্টের সন্ধানে। হতাশ হয়ে ফিরছেন তারা।