বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: পটুয়াখালীতে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লাভিত্তিক পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ‘পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’ উদ্বোধন করেন তিনি। এর মধ্যদিয়ে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণাও দেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনা মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর পর এই প্রথম কোনও প্রকল্প উদ্বোধনে সরাসরি অংশ নিলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকাল পৌনে ১১টার দিকে বিদ্যুৎ প্ল্যান্টে এসে পৌঁছান। পরে কোল জেটি এলাকার রাবনাবাদ নদীর মোহনায় ২২০টি নৌকার সমন্বয়ে এক মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান এই অঞ্চলের জেলেরা। এর মধ্যে ১০০টি পালতোলা নৌকা, ১০০ নৌকায় ছিল প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন। প্রতিটি নৌকায় রঙ-বেরঙের পোশাকে দুজন করে ৪০০ জেলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বাকি ২০ নৌকায় ছিলেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং রঙ-বেরঙের কাপড় ও কাগজ দিয়ে সাজানো হয় এসব নৌকা। সঙ্গে বাজানো হয় ‘ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে নাও ছাড়িয়া দে’ গানের যন্ত্রসংগীত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সেই প্রদর্শনীর দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪৮ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। অথচ প্রকল্পশেষে ব্যয় হয়েছে ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৯ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। দেশের বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম যা প্রাক্কলিত ব্যয়সীমার চেয়ে কমে কাজ শেষ করলো। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চে এনডব্লিউপিজিসিএল এবং সিএমসির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। দরপত্র আহবান করা হয় ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। পরের বছর ২০১৬ সালের ২৯ মার্চে ঠিকাদারের সঙ্গে নির্মাণ (ইপিসি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী ৪৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। নির্মাণশেষে ২০২০ সালের ফেব্র‚য়ারিতেই কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক উত্পাদন শুরু হয়। এরপর কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে এবং দ্বিতীয় ইউনিটে বাণিজ্যিক উত্পাদন শুরু হয় যথাক্রমে ২০২০ সালের ১৫ মে এবং একই বছরের ৮ ডিসেম্বর। বর্তমানে একই কমপ্লেক্সে আরেকটি পৃথক ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সেই কেন্দ্রটির ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যে ২১ শতাংশ এগিয়েছে।
এনডব্লিউপিজিসিএল সূত্র জানায়, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩তম দেশ হিসেবে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহারকারী দেশের তালিকায় নাম লেখালো। এশিয়ায় চীন, তাইওয়ান, জাপান ও মালয়েশিয়াতে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এই প্রযুক্তির কেন্দ্রগুলোর মধ্যে চীন ও বাংলাদেশ শুধু ঢাকনাযুক্ত কোল ইয়ার্ড ব্যবহার করে। ফলে পরিবেশগত ঝুঁকি আরও কমানো সম্ভব হচ্ছে। কেন্দ্রটিতে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরোদমে কেন্দ্রটি চালু হলে দিনে ১৩ হাজার টন কয়লার দরকার হবে। বর্তমানে দৈনিক গড়ে অর্ধেক ক্ষমতায় চলছে কেন্দ্রটি। গত শনিবার ৫৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদন করেছে কেন্দ্রটি। সঞ্চালন লাইন প্রস্ত্তত না হওয়ায় এটি পূর্ণ সক্ষমতায় উত্পাদন চালু করতে পারছে না। চলতি বছরের মধ্যেই তা সম্ভব হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা