Home First Lead পেঁয়াজের রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার করলো ভারত, বেচার জন্য তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে

পেঁয়াজের রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার করলো ভারত, বেচার জন্য তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্কারোপ করায় প্রতিবেশি ভারতের মহারাষ্ট্রের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজ নিয়ে সংকটে পড়ে। তাদের চোখের পানি আর নাকের পানি একাকার হয়ে গেছে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি না হওয়ায়। এ অবস্থার মধ্যে রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ওখানকার কৃষক এবং রপ্তানিকারকরা বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রতিবেশি ভারত প্রতি বছর যে পরিমাণ পেঁয়াজ রপ্তানি করে তার ৪৮ শতাংশ বাংলাদেশে পাঠানো হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ পণ্যটির ঘাটতি পূরণের জন্য নির্ভরশীল ছিল দেশটির ওপর। আরও বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির সুযোগ থাকলেও পরিবহণে পচনশীল হওয়ায় সীমান্তবর্তী দেশ থেকে আমদানিতে বেশি আগ্রহী ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ভারতের ওপর  এই একচেটিয়া নির্ভরতা চরম দুর্গতিতে ফেলেছে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের মানুষকে। বিনা নোটিসে হঠাৎ করে কোন অজুহাতে রপ্তানি বন্ধ বা চড়াহারে রপ্তানি শুল্ক আরোপ করে এদেশে পেঁয়াজের বাজারকে অস্থির করে তুলেছে বিভন্ন সময়ে।

২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩ মে পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ছিল। গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর যখন ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল ঠিক তখন, ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করে তারা। সাথে সাথে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। আর ওপারেও বিশেষত মহারাষ্ট্রে দাম একেবারে তলানিতে নেমে যায়।

ভারত থেকে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বা রপ্তানি শুল্ক আরোপে সাময়িক কিছুটা সমস্যা হলেও ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীরা বিকল্প উৎস থেকে আমদানি করেছেন। আমদানির অর্ধেক এসেছে পাকিস্তান থেকে।  এছাড়া মিসর, মিয়ানমার, চীন, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি হয়েছে। ৮ টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ঘাটতি পূরণে। নভেম্বর থেকে স্থানীয় পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু হওয়ায় বিকল্প দেশগুলো থেকে আমদানি কমে যায়। স্বল্প পরিমাণে এসেছে মিসর ও চীন থেকে।

নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর  রপ্তানির ওপর আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্ক ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে এই নতুন নির্দেশ কার্যকর হবে। ২০২৪ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজের রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হয়েছিল। দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমার জেরেই এই সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারতের কনজ়িউমার অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়া এবং দাম নিয়ন্ত্রণে আসায় স্বস্তি ফিরেছে। ২০২৩ সালের অগস্ট থেকে পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছিল, দাম বেড়েছিল। সে জন্যই তখন রপ্তানি শুল্ক চাপানো হয়েছিল।’ প্রায় দেড় বছর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ভারত থেকে পেঁয়াজের রপ্তানিতে তেমন ভাটা আসেনি। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ১৭.১ লক্ষ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করা হয়েছিল। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১৮ মার্চ পর্যন্ত তা হয়েছে ১১.৬ লক্ষ টন। এবার রবি মওসুমে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ২.২৭ কোটি টন। গত বছর তা ছিল ১.৯২ কোটি টন। অর্থাৎ গত বছরের থেকে কেবল রবি ফসলের সময়ই ১৮ শতাংশ বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। ভারতে সারা বছর যা পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় তার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশই হয় রবি শস্যের সময়ে। এই বাড়তি উৎপাদনের জেরে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম যেমন কমেছে, তেমন খুচরো বাজারেও তা অনেকটা সস্তা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের উপর রপ্তানি শুল্ক তুলে দেয়া হযেছে ।