বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: ভোজ্যতেলের পর এবার পেঁয়াজ বাজারে নৈরাজ্য। পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে খুচরা বাজারে একেক জায়গায় একেক দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বাজারে এখনো তিন মাসের পেঁয়াজ আছে। ফলে দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আমদানি বন্ধের সুযোগ নিয়ে বাজারে নৈরাজ্য তৈরি করছে। দেশের পেঁয়াজচাষিদের সুরক্ষা দিতে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, আমদানি বন্ধ থাকলেও পেঁয়াজের বাজারে প্রভাব পড়ার কোনো কারণ নেই। বছরে যে পরিমাণ পেঁয়াজ প্রয়োজন হয় তার সিংহভাগ দেশেই উৎপাদন হয়। আর এখন তো দেশি পেঁয়াজের মৌসুম। তা ছাড়া এখন যেসব বিদেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে তা আগের কেনা। ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশের কৃষকের স্বার্থে আমরা পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছি। দেশের বাজারে যে পেঁয়াজ আছে তাতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যাবে। তাই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। আমরা শ্যামবাজার ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছি। তার পরও যদি বাড়তি দাম রাখা হয়। আমরা আবারও আমদানি অনুমোদন দেব। তাতে করে কৃষকরা আবারও ক্ষতির মুখে পড়বে।’
গত ৫ মের পর নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির কোনো অনুমতিপত্র দিচ্ছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে ঈদ উপলক্ষে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় ১ থেকে ৬ মে পর্যন্ত ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসেনি।
রাজাবাজার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে পাঁচটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, একেক দোকানে একেক দাম। বিক্রেতারা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের মধ্যে ভালো-খারাপ রয়েছে। যেটা একটু ভালো মানের সেটা বিক্রি করা হচ্ছে ৪৫ টাকা। আর একটু কম মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। বাজারের ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন বলেন, ‘পাইকারি প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৫-৬ টাকা করে বেড়েছে। তাই বাড়তি দামে বিক্রি করছি। দাম কমলে আমরাও কমে বিক্রি করব।’
কারওয়ান বাজারে পাল্লাপ্রতি দাম ২০০ টাকা। মনিরুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী জানান, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪০ টাকায়। দুদিন আগেও এ পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৩০-৩৫ টাকায়। তিনি বলেন, সরকার নতুন করে পেঁয়াজের আইপি (আমদানির অনুমতিপত্র) দিচ্ছে না। ফলে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি স্থলবন্দরের কাছাকাছি যে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা রয়েছেন তারা মজুদ করে এখন দাম বাড়াচ্ছেন।
শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মো. মাজেদ। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশি পেঁয়াজের পাইকারি বাজার কেজিপ্রতি ৩২ টাকা। আগামী সপ্তাহে আরও ২-৩ টাকা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
মো. মাজেদ আরও বলেন, ‘খুচরা বাজারে পেঁয়াজের এত দাম হওয়ার কথা না। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ভোক্তাদের কাছ থেকে বেশি দাম নিচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার। খুচরা ব্যবসায়ীরা যদি আবার পেঁয়াজ নিয়ে কোনো সংকট তৈরি করে তখন সরকার বাধ্য হয়ে আমদানির অনুমোদন দেবে। এতে করে দেশের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
