বয়স মাত্র ২৩। এর মধ্যেই ৩৬ দিন ধরে গোটা দেশের ২১টি পর্যটনক্ষেত্র ও তীর্থস্থান ঘুরে দেখেছেন তিনি। আর এই গোটা ভ্রমণ পর্বে তাঁর খরচ হয়েছে মাত্র চল্লিশ টাকা!
শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, এমনটাই দাবি করছেন কেরালার মলপ্পুরমের তরুণ পর্যটক ফৈয়াজ। পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার তিনি। কিন্তু কাজকর্ম বাদ দিয়ে বেরিয়ে পড়ার নেশাতেই এমন দুর্দান্ত এক কীর্তির অধিকারী হয়েছেন তিনি।
কিন্তু এত বড় দেশ, এতগুলো জায়গা! মাত্র চল্লিশ টাকায় কী ভাবে ঘুরলেন তিনি? ফৈয়াজের কীর্তির কথা শুনে সবার আগে এই প্রশ্নটিই করছেন যে কেউ। ফৈয়াজ বলছেন, “আমার মতো খালি হাতে ভ্রমণ করতে গেলে যথেষ্ট সাহসী হতে হবে। সব কিছুতে মানিয়ে নেয়া জানতে হবে। বেপরোয়া হতে হবে। যেমন ধরুন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়িতে লিফট চাইলে অনেকেই যেমন প্রত্যাখ্যান করবেন, তেমনই কেউ কেউ লিফট দিতে রাজিও হবেন। আমি এ ভাবে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গা গেছি।”
পণ্যবাহী লরি বা ট্রাক, পর্যটকদের বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ির সাহায্য নিয়ে ফৈয়াজ পৌঁছে গেছেন গন্তব্যে। বড় কোনও ভাড়ার ব্যাপারই নেই। বিভিন্ন জায়গায় মন্দির বা মসজিদে বা পথের পাশে কোনও বাড়িতে বা তাঁবু টাঙিয়ে থেকেছেন। টাকাপয়সা লাগেনি।
খাওয়াদাওয়াও সে ভাবেই ন্যূনতম খরচে সেরেছেন ফৈয়াজ। যেখানে যেখানে গুরুদ্বারা বা দরগা পেয়েছেন, পেট পুরে খেয়েছেন। কোথাও খেয়েছেন মন্দিরের প্রসাদ। কখনও আবার পথের কোনও দোকানে অনুরোধ করেছেন, খেতে চেয়ে। কেউ ফিরিয়ে দিয়েছেন, কেউ বা পেট পুরে খাইয়েছেন। সব মিলিয়ে জমজমাট অভিজ্ঞতা নিয়ে, মোটে ৪০ টাকা খরচ করে বাড়ি ফিরেছেন ফৈয়াজ।
ভ্রমণের নেশায় মাতোয়ারা এই সাহসী তরুণ মার্চ মাসের মাঝামাঝি করে বেরোন বাড়ি থেকে। প্রথমে তিনি পৌঁছন কর্নাটকের ম্যাঙ্গালোর। সেখান থেকে কর্নাটকের উদুপি, তার পরে গোয়া, মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, গুজরাতের সুরাত ও আহমেদাবাদ, রাজস্থানের উদয়পুর, আজমের ও জয়পুর, উত্তরপ্রদেশের আগ্রা এবং দিল্লি হয়ে পৌঁছে যান শিমলা।
এর পরে একে একে হিমাচল প্রদেশের কুলু ও মানালি, উত্তরাখণ্ডের হৃষিকেশ। সব শেষে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর হয়ে নেপালের কাঠমাণ্ডুতেও পৌঁছে যান তিনি। এর পরে বিহারের রক্সৌল সীমান্ত দিয়ে ফের ভারতে ফেরেন তিনি। তার পরে কলকাতা এবং বেঙ্গালুরু হয়ে ফেরেন কেরালার বাড়িতে। তার পরেই অভিনন্দনের জোয়ারে ভেসে যান ফৈয়াজ।
ফৈয়াজ জানান, এত দীর্ঘ পথ এত অল্প টাকায় পরিক্রমা মোটেই সহজ ছিল না। “তবে আমিও মনের জোরে বেরিয়ে পড়েছিলাম। গোটা যাত্রাপথে বহু মানুষ নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ গাড়িতে করে পৌঁছে দিয়েছেন অনেক মানুষ। অনেকে থাকতে দিয়েছেন। খেতে দিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকের কাছেই আমি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ।”– বলছেন ফৈয়াজ।
তাঁর মতে, ভ্রমণ-পিপাসু হিসেবে ভারতীয়দের নাম গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত। ঘুরতে যাবেন বলেই অনেকে সারা বছর ধরে টাকা জমান, কর্মক্ষেত্রে ছুটি বাঁচিয়ে রাখেন। দেশেবিদেশে ঘোরার জন্য ভারতবাসী বিস্তর টাকাপয়সা খরচ করতেও পিছপা হন না।
ফৈয়াজ বলেন, “আমিও চেষ্টা করে দেখলাম, নামমাত্র খরচেও গোটা দেশ ঘুরে দেখা যায়। এ দেশের মানুষ আপনার পাশে দাঁড়াবে। কারণ তাঁদের বিশ্বাস ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’। বিশ্বের সকলেই আমাদের আত্মীয়।”