বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: ডিমের দাম কমেছে। খাদ্য ও ভ্যাকসিনের আকাশ ছোঁয়া দাম প্রান্তিক খামরিদের গলার কাঁটা। প্রতি কেজি খাদ্যে ১ থেকে দেড় টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে হতাশ খামারিরা। আগ্রহ হারাচ্ছে ডিম-ব্রয়লার মাংস উৎপাদনকারী খামারিরা।
খামারিরা বলছে, খাদ্যের দামে নাভিশ্বাস। সিন্ডিকেট আর অদৃশ্য হাতেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্প। বস্তাপ্রতি ৬০-৮০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিনের ব্রয়লার বাচ্চা ৩০-৩৫ টাকায় কিনে বিক্রির উপযোগী করতে প্রায় ৭০-৭৫ টাকা খরচ হয়। কিন্তু বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার ৮৮-৯০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রমাগত বাড়ছে বাচ্চার দাম, অপরদিকে কমছে মাংসের দাম।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই কমেছে ডিমের দাম। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে প্রতি এক’শ লাল বাদামি ডিমে গড়ে কমেছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, সাদা ডিমে কমেছে ৯০ থেকে ১২০ টাকা। এছাড়াও অঞ্চলভেদে এ দাম আরোও কমেছে বলে জানা গেছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমে নাই হয়ে গেছে প্রায় দেড় থেকে ২ টাকা। তবে, এ দামে লাভ না হলেও লোকসান হবে না। এর বেশি দাম কমলে অবস্থা বেগতিক হবে।
পোল্ট্রি সেক্টরের সাথে জড়িতরা জানান, বর্তমানে একটি ডিমের উৎপাদন ও তা’ পাইকারী পর্যায়ে বিক্রি পর্যন্ত খামারীদের খরচ পড়ে ৬ টাকা, অথচ এই মুহূর্তে পাইকারী পর্যায়ে উৎপাদক খামারিরা একটি ডিমের দাম পাচ্ছে মাত্র ৬.৬০ থেকে ৬.৭০ টাকা। লোকসান না হলেও এভাবে চলতে থাকলে খামারে কর্মরত শ্রমিক, মুরগির ভ্যাকসিন, খাদ্যেও দাম বৃদ্ধি সব মিলিয়ে ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। কয়েকমাসে তা মূলধনে আঘাত হানবে।
তাদের অভিযোগ, ডিমের পাইকারি বাজারে সিন্ডিকেট আছে। ব্রয়লার এর বাচ্চা উৎপাদকদের সিন্ডিকেট আছে। পোল্ট্রি ফিডের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে খাদ্যের দাম এভাবে বৃদ্ধি পায়। তাদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ আছে এবং সংখায়ও তারা কম। ফলে তারা তাদের পক্ষে সিন্ডিকেট করা সহজ হয়। বড়বড় কোম্পানি ডিম ও মাংস উৎপাদনে নামার কারণে ও সিন্ডিকেটের কবলে প্রান্তিক খামরিরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
এ বিষয়ে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, খুচরা পর্যায়ে ও উৎপাদক খামারি পর্যায়ে সম্প্রতি ডিমের দাম কমে গেছে। অপরদিকে খাদ্যের দাম বস্তাপ্রতি বেড়েছে । উভয়সঙ্কটে পড়েছে খামারি ও উদ্যোক্তারা। তারা পারছে না উৎপাদন বন্ধ করে দিতে। কারণ ডিমপাড়া লেয়ার মুরগি পালন দীর্ঘমেয়াদি প্রজেক্ট। করোনায় একবার লোকসান পুষিয়ে নেয়ার সময় আবারো দাম কমে গেছে।
তবে, প্রতি বছর শীতের শুরুতে ডিমের দাম কমে যায়, আবার বাড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা ঋণ সহজ করা, খাদ্যের দাম কমানো, তুলনামূলক ভ্যকসিনের দাম কমালে খামারিদের রক্ষা হতে পারে। সরকারের সু-দৃষ্টি ছাড়া এ খাম রক্ষা করা মোটেও সম্ভব হবে না বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
খুচরা ও পাইকারি ডিম-মাংস বিক্রেতারা জানান, করোনা কালে ডিম-মাংসের বাজারে বড় ধরণের গ্যাপ তৈরি হয়েছিল। এখন উৎপাদন বাড়ায় সে গ্যাপ পূরণ হতে শুরু করেছে। বাজারে ক্রমাগত বাড়ছে ডিম ও মুরগির মাংস। এ কারণেই দাম কমছে। এছাড়া শীত মৌসুমের শুরুতে ডিমের উৎপাদন অনেকটাই বেড়ে যায়। উৎপাদন বাড়ার কারণে দাম কমতে শুরু করে। শীতে বিভিন্ন রোগের আক্রমণে মুরগি মারা যায়, তখন দাম বাড়তে শুরু করে।
সরকারি প্রণোদনা বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ডাঃ মো. রুহুল আমিন আল ফারুক বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের আর্থিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে একটি তালিকা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে। প্রণোদনার টাকা আসলে খামারিরা পাবেন। এছাড়া খামারিরা ব্যাংক থেকে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ নিতে পারেন।