- বিক্রি নেমে এসেছে অর্ধেকে
- ৫০০ দোকানী দেউলিয়া: মোজাম্মেল
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: ৪ হাজার ৫শ টাকা দিয়ে শুরু হয়েছিলো তামাকুমণ্ডি লেইনের ব্যবসায়ীদের প্যাকেজ ভ্যাট দেওয়া। যা পরবর্তীতে ২৮ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছিলেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত তা বহাল ছিল।
জাতীয় সংসদে ভ্যাট আইন ২০১২ সালে অনুমোদন করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শে (আইএমএফ) তৈরি হওয়া এই আইনটির বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১৭ সাল থেকে। কিন্তু ২০১৭ সালে আইনটির বাস্তবায়ন দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়।ফলে ২০২০-২০২১ অর্থবছর থেকে, অর্থাৎ চলতি বছরের পহেলা জুলাই থেকেই আইনটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। সেই প্যাকেজ ভ্যাট আবার চাচ্ছেন করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত তামাকুমুণ্ডি লেইনের ব্যাবসায়ীরা।
এর আগে, ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর তামাকুণ্ডি লেইন বণিক সমিতি এই প্যাকেজ ভ্যাট ২৮ হাজার টাকা থেকে ১৪ হাজার টাকা রাখার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছিলো। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর এই প্যাকেজ ভ্যাট বাদ দেওয়া হয়।
তামাকুমণ্ডি লেইনের ব্যাবসায়ী রাসেদ আহমেদ জানান, করোনার থাবায় আমাদের ব্যাবসা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে আবারও আগের জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ২/৩ মাস দোকান বন্ধ থাকার ক্ষতি এখনও পুষিয়ে নিতে পারিনি। এতদিন আমরা প্যাকেজ ভ্যাট দিতাম। কিন্তু এ বছর আর সেই ব্যবস্থা থাকছে না। নতুন আইনে ভ্যাটের অনেক কিছু আনা হয়েছে, যা এখনো আমরা বুঝতেই পারছি না।
তিনি আরও জানান, ‘সরকার ইসিআর মেশিন দেয়ার কথা বলেছে, কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই এখনো পর্যন্ত এরকম কোন মেশিন দেয়া হয়নি। অবস্থা এমন হয়েছে যে, নতুন আইনের জটিল হিসাব নিকাশ করার জন্য আমাদের এখন হিসাববিদ রাখতে হবে।’
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচ -ছয় মাস পর কিছুটা বেচাকেনা শুরু হয়েছে। একটি পোশাকের দোকানের মালিক আসিফ মাহমুদ বলেন, দুই মাস ধরে বেচাকেনা কিছুটা ভালো। দোকানে প্রতিমাসে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে যেটা গড়ে ৬ লাখ টাকা হতো। তিনি বলেন, এখন আর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার চিন্তা নেই। বরং খরচ মিটিয়ে লাভও হচ্ছে। শীত বাড়লে বিক্রি আরও বাড়বে। তবে নতুন ভ্যাট আইনের কারণে আমরা ব্যাবসায়ীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই আগের প্যাকেজ ভ্যাট সিস্টেম চালু হলে আমাদের জন্য ভালো হতো।
তিন পুলের মাথা থেকে স্টেশন রোড পর্যন্ত তামাকুমন্ডি লেইনের সীমানা। তামাকুমণ্ডি লেইন বণিক সমিতির অধীনে রয়েছে ১১০টি মার্কেট। মোট দোকান ১২ হাজারের অধিক। ৫০ হাজারের মতো দোকান মালিক কর্মচারীর জীবিকা নির্বাহ হয়। এখানে জামা-কাপড় থেকে শুরু করে জুতা,কসমেটিক্স, মোবাইলের এক্সেসোরিস সবই পাওয়া যায় ।
করোনার আগে প্রতি সপ্তাহে বিক্রি হতো ১০ কোটি টাকা, এখন তা ৫কোটিতে নেমে এসেছে।
তামাকুমণ্ডি লেইন বণিক সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের এখানে পণ্যের হাত বদল বেশি কিন্ত লাভ কম। ব্যাবসা চালিয়ে রাখার জন্য অনেকে কেনা দামেই পণ্য বিক্রি করছেন। করোনার কারণে এমনিতেই মানুষের মন পরিবর্তন হয়েছে। আগের মতো তেমন ব্যাবসা নেই। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০০ দোকানী দেউলিয়া হয়ে গেছে। তার উপর আবার প্যাকেজ ভ্যাটও বাতিল। নতুন ভ্যাট আইনে আরো অনেক ব্যাবসায়ী দেউলিয়া হয়ে যেতে পারেন।
তিনি আরও জানান,আমরা গত দুটি সিজনে (পহেলা বৈশাখ ও মাহে রমজান ) মার খেয়ে গেলাম। এতে করে দোকান প্রতি কমপক্ষে কয়েক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছিলো। আমাদের এখানে ২শ থেকে ৩ শ ইম্পোর্টার আছে। কাস্টমে কড়াকড়ি আরোপের কারণে তাদের অবস্থা আরও বেশি খারাপ।