প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর করোনা আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি ৯৯.৫ ভাগ কমে যায় বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রামের একদল গবেষক। এছাড়া আক্রান্ত ৯২ ভাগ রোগীরই বাড়তি অক্সিজেন প্রয়োজন হয়নি। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) গবেষকরা দুই মাস গবেষণা শেষে এই ফলাফল পেয়েছেন।
গবেষণায় ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সিভাসু ল্যাবে পরীক্ষা করা ছয় হাজার ১৪৬ জনের নমুনার মধ্যে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়া এক হাজার ৭৫২ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণা চালায় চট্টগ্রামের ৭ জনের এক গবেষক দল।
গবেষকরা জানান, টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার পর করোনা আক্রান্ত ২০০ মানুষের ওপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে করোনাভাইরাসের উল্লেখযোগ্য উপসর্গ শ্বাসকষ্ট ৮৮ ভাগের মধ্যে তেমন ছিল না।
আক্রান্তদের মধ্যে ৮২.৫ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে যেতে হয়নি। বাকি ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ (৩৫ জন) ভর্তি হলেও তাদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যায়নি। কেবল বার্ধক্যজনিত ও অন্যান্য সমস্যায় ভোগা রোগীরা টিকা নেয়ার পর করোনা আক্রান্ত হলে অতিরিক্ত অক্সিজেন দিতে হয়েছে বলেও জানান তারা।
এদিকে দ্বিতীয় ডোজের পরও কমপক্ষে তিনসপ্তাহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এন্টিজেন পরীক্ষা জরুরী বলেও মতামত দিয়েছেন গবেষকরা।
এছাড়া করোনার উপসর্গ স্বাদ ও ঘ্রানে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি ৫৬.৫ এবং ৫৫.৫ ভাগ রোগীর। ১ম ডোজ টিকা গ্রহণকারী করোনা আক্রান্তদের গড়ে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিল ৯৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে টিকা না নেওয়া রোগীদের গড় অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিল ৮৫ শতাংশ।
গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজের কার্যকারিতা কতটুকু তা বুঝতে এ গবেষণা চালানো হয়। টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর আক্রান্ত ২০০ জনের মধ্যে ১৬৫ জনের মৃদু উপসর্গ ছিল এবং ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে তাদের নমুনা পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ’ ফল এসেছে বলেও জানান তিনি।
এসময় গৌতম বুদ্ধ দাশ আরো বলেন, যে ২০০ জনের ওপর গবেষণা চালানো হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণের পরও আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কেবল একজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সেবা নিতে হয়েছে। ছয় দিন পর তিনি মারা যান। ৪৮ বছর বয়সী এই রোগী আগে থেকে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. অজয় কুমার ঘোষ জানিয়েছেন, করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে টিকা নেওয়ার পরেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কারণ টিকা নেয়ার পর কার শরীরে এন্টিবডি তৈরি হচ্ছে সেটি পরীক্ষা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। টিকা কর্মসূচীর পাশাপাশি এন্টিবডি পরীক্ষায়ও জরুরী, বলছেন তিনি।
গৌতম বুদ্ধ দাশ আরো জানান, টিকার নেওয়ার পর শরীরে এন্টিবডি তৈরি হওয়া নিয়েও একটি গবেষনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দলটি।
গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন সিভাসুর অধ্যাপক ড. শারমিন চৌধুরী ও ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ভেটেরিনারি চিকিৎসক ত্রিদীপ দাশ, প্রনেশ দত্ত, মো. সিরাজুল ইসলাম ও তানভীর আহমদ নিজামী।-ইনডেপেন্ডেন্ট