Home First Lead প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে সাজ সাজ রব পটুয়াখালীতে

প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে সাজ সাজ রব পটুয়াখালীতে

  • ২১ মার্চ পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধন
  • প্রধানমন্ত্রীকে বরণ প্রস্তুত সাগরকন্যা পটুয়াখালী
  • প্রকল্পে একশ মিলিয়ন ডলার কম খরচ
  • সঞ্চালন লাইন না হওয়ায় সব বিদ্যুৎ
  • ৮০ কিলোমিটার চ্যানেল ড্রেজিং করে সচল রাখতে হবে
পটুয়াখালী থেকে রাকিবুল ইসলাম তনু: ২১ মার্চ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন।
  সেখানে একটি মতবিনিময় সভায়ও বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়েছে সাগর কন্যা পটুয়াখালী। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে উচ্ছ্বসিত এলাকার মানুষ।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের  প্রকল্প পরিচালক শাহ মোহাম্মদ গোলাম মাওলা, সাংবাদিকদের জানান, কভিড মহামারীর প্রতিকূলতার মধ্যেও কোন রকম ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রথম ফেজে দুটি ইউনিটকে উৎপাদনে আনতে সক্ষম হয়েছেন তারা।
তিনি জানান, ২.৪৫ বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পে একশ মিলিয়ন ডলার কম খরচ হয়েছে। বর্তমানে তারা ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনে সক্ষম হলেও সঞ্চালন লাইনের কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় পুরো ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে দিতে পারছে না। পায়রা থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ হলেও গোপালগঞ্জ থেকে আমিন বাজার পর্যন্ত লাইনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে লাইনের কাজ শেষ হলে পুরো ১৩২০ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী রেদোয়ান আহমেদ জানান, প্রতিদিন পায়রা পাওয়ার প্লান্টে ১৩ হাজার মেট্রিকটন কয়লা প্রয়োজন হবে। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ যদি তাদের ৮০কিলোমিটার চ্যানেল ড্রেজিং করে সচল না রাখে তাহলে লাইটারেজ জাহাজে কয়লা মাদার ভ্যাসেল থেকে আনতে হয়। সেক্ষেত্রে কয়লার মূল্য বেড়ে যায়। চ্যানেল সচল রাখতে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) সুত্র জানায় বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি কর্পোরেশন (সিএমসি) এর মধ্যে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়ার্ট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে কয়লা ভিত্তিক এ বিদ্যুত কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর  স্থাপন  করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্মাণ শুরুর পর ২০২০ সালের ১৫ মে প্রথম ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড(বিসিপিসিএল)। পরে একই বছরের ৮ ডিসেম্বর আল্ট্রা সুপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এ বিদ্যুত কেন্দ্রটি।
এক হাজার একর জমির উপর নির্মিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটির প্রথম ফেজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২.৪৫ বিলিয়ান ডলার। প্রতিদিন এ কেন্দ্র চালু রাখতে প্রয়োজন হবে ১৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। এ কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় ফেজে আরো ১৩২০ মেগাওয়াট অর্থাৎ ২৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে ২০২৪ সাল নাগাদ যুক্ত হবে বলে আশাবাদী কোম্পানী সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে করোনা মহামারীর পর গোপালগঞ্জে জাতির জনকের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের পর  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বশরীরে পটুয়াখালী আসবেন এমন খবরে আনন্দে ভাসছে এখানকার সাধারণ মানুষ। তাঁকে বরণ করতে প্রস্তুত জেলাবাসী । ইতিমধ্যে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়েছে পুরো জেলা। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে ২২০টি নৌকাকে সজ্জিত করা হয়েছে বর্ণিল সাজে। রামনাবাদ নদীর মোহনায় এ  নৌকা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানাবেন উপকূলের প্রায় এক হাজার একশ মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা ও ফটো সাংবাদিক আরিফুর রহমান জানান, উন্নয়নের প্রতিক নৌকা সজ্জিত করার কাজ শেষ। এখন সেগুলো রামনাবাদ চ্যানেলের জেটির নিকটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । সেখানে ২১ তারিখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানানো হবে। বরিশাল চারুকলার ২০ জন শিক্ষার্থী এ নৌকাগুলোকে সজ্জিত করেছেন বলে জানান তিনি।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ কাজী আলমগীর জানান, তাদের প্রত্যাশা ছিলো জননেত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীতে একটি জনসভা করবেন। প্রথমে কর্মসূচীর মধ্যে এটি থাকলেও পরে তা বতিল করা হয়েছে।  এই তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলটি তৃতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, পায়রা সেতু, কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র এবং প্রস্তাবিত ইপিজেড এ অঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেবে। পটুয়াখালীবাসীর পক্ষ থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সর্বোচ্চ  নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রনয়ণ করা হয়েছে। এই নিরাপত্তা পরিকল্পনার মধ্যে কোভিড প্রটোকলও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচীতে যারা অংশ গ্রহণের সুযোগ পাবেন তাদের অবশ্যই করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট সাথে নিয়ে যেতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান,  সেখানে একটি মতবিনিময় সভায় চায়নাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রী পরষিদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তাসহ পাঁচ শতাধিক সদস্য উপস্থিত থাকবেন।  প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি  ইতিমধ্যে গ্রহন করা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।