Home Uncategorized ফুডপান্ডার ভ্যাট ফাঁকি

ফুডপান্ডার ভ্যাট ফাঁকি

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:

ঢাকা: অনলাইন খাবার সরবরাহকারী ফুডপান্ডা প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া তথ্য ও প্রযুক্তি সেবা দেখিয়ে ভ্যাট নিবন্ধন নিয়ে বাড়ি ভাড়ার বিপরীতে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে। প্রায় ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন ও মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। বুধবার এ মামলা করা হয়। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দেশের প্রায় পাঁচ হাজার ফুড স্টোর থেকে ফুড সংগ্রহ করে ভোক্তার কাছে বাইকারদের মাধ্যমে সরবরাহ করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফুড পান্ডার চুক্তি রয়েছে, যার আওতায় ফুড পান্ডা কমিশন পায়।

প্রতিষ্ঠানটি সেবার কোড এস-০৯৯.১০-এর আওতায় অসংগতিপূর্ণ নিবন্ধন নেওয়ায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা এ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়ার ওপর কোনো ভ্যাট পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সময়ে বাড়ি ভাড়া বাবদ দুই কোটি ৫০ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯৯ টাকা প্রদর্শন করা হয়েছে। যার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ২৯ লাখ ৬ হাজার ২৬ টাকা। এছাড়া ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সময়ের জব্দকৃত ভাড়ার চুক্তি মোতাবেক বাড়ি ভাড়া বাবদ এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা প্রদর্শন করা হয়েছে। যার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বাড়ি ভাড়ার ওপর ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, ফুড পান্ডা হলো অনলাইনে খাবার অর্ডার করার এক ধরনের ব্র্যান্ড বা কোম্পানি। এটির প্রধান সদর দপ্তর জার্মানির বার্লিন শহরে অবস্থিত। বর্তমানে ফুড পান্ডা বাংলাদেশসহ ১১টি দেশে অনলাইনে খাবারের অর্ডার গ্রহণ ও ডেলিভারির কাজ করে থাকে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলোÑবুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, হংকং, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান, রোমানিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও জাপান। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জার্মানির ডেলিভারি হিরো নামক প্রতিষ্ঠানটি ফুড পান্ডা গ্রুপকে কিনে নেয়। বর্তমানে এটি তাদের দ্বারাই পরিচালিত হয়ে থাকে।

ড. মইনুল খান জানান, ফুড পান্ডার বিরুদ্ধে বিক্রয় তথ্য গোপন ও বাড়ি ভাড়ার বিপরীতে ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পায় এনবিআর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের নির্দেশে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় ভ্যাট গোয়েন্দা। ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক নাজমুন্নাহার কায়সার ও সহকারী পরিচালক মো. মহিউদ্দীনের নেতৃত্বে দল গঠন করা হয়। ১৫ অক্টোবর ভ্যাট গোয়েন্দা দল ফুড পান্ডা বাংলাদেশ লিমিটেড (নাভানা প্রিস্টিন প্যাভিলিয়ন, প্লট-১২৮, ব্লক-সিইন, নবম তলা) অভিযান পরিচালনা করেন।

তিনি আরও জানান, ভ্যাট গোয়েন্দা দল অভিযানের সময় ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায়। প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট-সংক্রান্ত নথিপত্র দেখাতে অনুরোধ করা হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ভ্যাট-সংক্রান্ত নথিপত্র প্রদর্শন করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত কম্পিউটার ও কর্মকর্তাদের ল্যাপটপ তল্লাশি করে প্রতিষ্ঠানের মাসিক বিক্রয়ের কিছু গোপন তথ্য পাওয়া যায়। গোয়েন্দারা সেই বিক্রয় তথ্যসহ আরও কিছু বাণিজ্যিক দলিলাদি জব্দ করেন।

এসব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তথ্যপ্রযুক্তি সেবার (সেবার কোড এস-০৯৯.১০) আওতায় নিবন্ধন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক (অনলাইন প্ল্যাটফর্ম) ব্যবহার করে পণ্য বিক্রয় করে থাকে। যার প্রকৃত সেবার কোড এস-০৯৯.৬০। এই কোডের আওতায় ভ্যাট ৫ শতাংশ এবং বাড়ি ভাড়ার ওপর উৎসে ভ্যাট ১৫ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি তথ্যপ্রযুক্তি সেবা কোডে নিবন্ধন নিয়ে বাড়ি ভাড়ার ওপর ভ্যাট পরিশোধ করে না। এই কোডটি কোনোক্রমেই তাদের ব্যবসার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও বাড়ি ভাড়ার ওপর অবৈধভাবে শূন্য হারে ভ্যাট সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে তা ব্যবহার করে আসছে।

মহাপরিচালক জানান, প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ও ল্যাপটপ থেকে জব্দ করা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি ও এপ্রিলÑমোট আট মাসে মোট ২৭ কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৭ টাকার বিক্রয় তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি গুলশান ভ্যাট সার্কেলে দাখিলপত্রে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ৯৭২ টাকা বিক্রয়মূল্য দেখিয়েছে। আট মাসে প্রতিষ্ঠানটি মোট ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৪৫ টাকা বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে। যার ওপর পরিহার করা ভ্যাট ৫৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী, মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৯ লাখ ৬৫ হাজার ৬২০ টাকা।