Home Uncategorized ফুসফুসে কীভাবে করোনা ছড়াচ্ছে

ফুসফুসে কীভাবে করোনা ছড়াচ্ছে

ফুসফুসে কীভাবে করোনা ছড়াচ্ছে সে নিয়ে এতদিন গবেষণা করছিলেন নানা দেশের বিজ্ঞানীরা। সায়েন্স জার্নালে সম্প্রতি এ বিষয়ে রিপোর্ট সামনে এনেছেন ন্যাশনাল ইমার্জিং ইনফেকসিয়াস ডিজিজ ল্যাবোরেটরিজ, সেন্টার ফর রিজেনারেটিভ মেডিসিন ও সেন্টার ফর নেটওয়ার্ক সিস্টেম বায়োলজির গবেষকরা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে আগে আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুস। শ্বাসপ্রশ্বাসের পথ বন্ধ হলে খুব তাড়াতাড়ি কাবু হয়ে পড়ছে রোগী। বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাস পরিবারের সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন মূলত শ্বাসযন্ত্রের রোগের জন্যই দায়ী। এরপরে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে নানা অঙ্গে, মাল্টি-অর্গ্যান ফেলিওর দেখা দিচ্ছে রোগীর। তবে করোনার ফোকাসই হল ফুসফুস। এই ফুসফুসকে ঘাঁটি করেই সারা শরীরে জাল ছড়াচ্ছে ভাইরাস। কীভাবে এবং কোন পথে ফুসফুসে হানা দিচ্ছে সার্স-কভ-২, তার বিস্তারিত তথ্য সামনে আনলেন বিজ্ঞানীরা।
ফুসফুসে কীভাবে করোনা ছড়াচ্ছে সে নিয়ে এতদিন গবেষণা করছিলেন নানা দেশের বিজ্ঞানীরা। সায়েন্স জার্নালে সম্প্রতি এ বিষয়ে রিপোর্ট সামনে এনেছেন ন্যাশনাল ইমার্জিং ইনফেকসিয়াস ডিজিজ ল্যাবোরেটরিজ, সেন্টার ফর রিজেনারেটিভ মেডিসিন ও সেন্টার ফর নেটওয়ার্ক সিস্টেম বায়োলজির গবেষকরা। রিপোর্টে বিজ্ঞানীরা বলছেন, সংক্রমণ ছড়ানোর এই বিশেষ পদ্ধতি সামনে আসায় ভাইরাসকে রোখার উপায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। শ্বাসযন্ত্র থেকে কীভাবে ভাইরাসকে নির্মূল করা যায় সে থেরাপি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়েছে।
ফুসফুসে প্রোটিনের বিন্যাস বদলে দিচ্ছে করোনা
গবেষকরা বলছেন, যে কোনও দেহকোষে যাতে বার্তা ঠিকঠাকভাবে পৌঁছয়, কোষ সুস্থ ও সতেজ থেকে কাজ করতে পারে তার জন্য প্রোটিনের কার্যকারিতা বিশেষ ভূমিকা নেয়। প্রোটিনের নির্দিষ্ট বিন্যাস থাকে যা কোষকে ঠিকভাবে চালনা করে। ফুসফুসের কোষেও তেমনই থাকে। প্রোটিনের এই বিন্যাস ও কার্যকারিতাকে বলে প্রোটিন ফসফোরাইলেশন (Protein Phosphorylation) । সার্স-কভ-২ ভাইরাস এই প্রোটিনের বিন্যাসকেই নষ্ট করে দিচ্ছে। ফলে কোষে বার্তা বা সিগন্যাল পৌঁছতে পারছে না। প্রোটিনের কার্যকারিতা যদি নষ্ট হয়, তাহলেই ম্যালফাংশন তথা উল্টো ক্রিয়া-বিক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। কোষে প্রদাহ শুরু হবে, কোষ নষ্ট হতে থাকবে।
How does coronavirus kill? Clinicians trace a ferocious rampage through the  body, from brain to toes | Science | AAAS
সেন্টার ফর রিজেনারেটিভ মেডিসিনের ডাক্তার ড্যারেল কটন বলেছেন, ফুসফুসের কোষে ঢুকে প্রথম ধাক্কাতেই প্রোটিনের সাজসজ্জা বদলে দিচ্ছে ভাইরাস। যার ফলে কোষে বার্তা পৌঁছনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রোগ প্রতিরোধের স্বাভাবিক ক্ষমতা নষ্ট হচ্ছে। সংক্রামক ভাইরাস হানা দিয়েছে, এই সঙ্কেত কোষ আর পৌঁছে দিতে পারছে না। অর্থাৎ যোগাযোগ ব্যবস্থাটাই বন্ধ করে দিচ্ছে। এরপরে নিজেদের রিপেসটর প্রোটিন খুঁজে নিয়ে কোষের ভেতরে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করে ফেলছে।
এর পরের ধাপটাই হল শ্বাসনালীতে অক্সিজেন পৌঁছনো বন্ধ করে দেওয়া। তার জন্য ফুসফুসের কোষে ভাইরাসের সেই বন্ধু প্রোটিন তথা ACE2 (অ্যাঞ্জিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ২) এর সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের স্পাইক (S) প্রোটিন। এর সাহায্যে ফুসফুসের কোষে ঢুকে বিভাজিত হয়ে সংখ্যায় বাড়তে থাকছে ভাইরাস। এমনভাবে সংক্রামিত হচ্ছে যে শ্বাসনালীর মাধ্যমে অক্সিজেন ঢোকার রাস্তাটাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোম দেখা দিচ্ছে। শ্বাসের সমস্যা, শুকনো কাশি এমনকি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে রোগী। অক্সিজেন সরবরাহ কমে গেলে রক্তের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে, পালমোনারি থ্রম্বোসিসে (Pulmonary Thrombosis)আক্রান্ত হচ্ছে রোগী। আরও একটা বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন গবেষকরা, সেটা হল ভাইরাস ফুসফুসের এন্ডোথেলিয়াল কোষের (Endothelial Cells)মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যাচ্ছে। রক্ত জমাট বাঁধছে। সাইলেন্ট নিউমোনিয়া’,  ‘সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া আক্রান্ত হচ্ছে রোগী।

-দি ওয়াল