Home Third Lead ফের তালিবানি দখলে আফগানিস্তান

ফের তালিবানি দখলে আফগানিস্তান

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

কাবুল দখল করে ফেলল তালিবান। প্রেসিডেন্ট ভবনের অন্দরে সারা হয়ে গেল দায়িত্বের হস্তান্তর, তালিবানকে ক্ষমতা বুঝিয়ে পদত্যাগ করলেন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। বিশ্বের কূটনীতি মহল মনে করছে, এবার পাকাপাকি ভাবেই তালিবানের হাতে চলে গেল আফগানিস্তান।

যদিও এই প্রথম বার নয়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল তালিবানি দখলেই ছিল আফগানিস্তান। তার পরে আমেরিকার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বদলায়। তালিবান-আমেরিকা চুক্তি অনুযায়ী এ বছর ৯ মার্চ থেকে আফগানিস্তান থেকে সেনা সরাতে শুরু করে আমেরিকা। তার পরেই আফগানিস্তানের ওপর যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে তালিবান। জুন মাসের শেষে আফগান বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ বাঁধে তাদের। তার পরে দেড়মাসের মাথায় দখল হয়ে গেল কাবুল!

কিন্তু কারা এই তালিবান, কারা তার নেতা? তালিবানের এত ক্ষমতার উৎস কী?

তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পরে আমেরিকার তরফে তালিবান-বিরোধী অভিযান শুরু হলে গা ঢাকা দেন তিনি। এর পরে ২০১৩ সালে মারা যান মোল্লা ওমর। তাঁর অবস্থান এতটাই গোপনীয় ছিল যে, দু’বছর পরে তাঁর ছেলে মৃত্যুর খবর জানানোর আগে বাইরের দুনিয়ার কেউ জানতই না মারা গেছেন তালিবান-প্রধান।

হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদা এই মুহূর্তে তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা। গোষ্ঠীর অন্দরে রাজনৈতিক, ধর্মীয় কিংবা সামরিক সব ক্ষেত্রে তাঁর শাসনই চলে। তিনি অনুগামীদের কাছে পরিচিত পরিচিত ‘বিশ্বাসীদের নেতা’ হিসেবে।

২০১৬ সালে আফগান-পাক সীমান্তে মার্কিন বাহিনীর ড্রোন হামলায় পূর্বতন নেতা আখতার মনসুরের মৃত্যুর পর তালিবানের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন আখুনজাদা। তার  আগে ১৫ বছর ধরে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শহর কুচলাকের একটি মসজিদে শিক্ষকতা ও ধর্মপ্রচার করে আসছিলেন তিনি।  মনে করা হয়, আখুনজাদার বয়স ৬০ এর আশেপাশে। তবে তিনি কোথায় থাকেন, তা কেউ জানে না।

আখুনজাদার পরেই রয়েছেন মুল্লাহ আবদুল ঘানি বরাদর। তিনি তালিবানের পলিটিক্যাল অফিসের নেতৃত্বে রয়েছেন। সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহাতে যুদ্ধবিরতি এবং আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি রাজনৈতিক চুক্তির জন্য যে আলোচনা হয় তাতে তালিবানের পক্ষে অন্যতম প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েক মাস ধরে চলা এই আলোচনায় উল্লেখযোগ্য কোনও অগ্রগতি হয়নি।

তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব দলের সামরিক বিভাগের প্রধান। তিনি এখন আফগানিস্তানেই আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তরুণ নেতা ইয়াকুবের বয়স হয়তো ৩০-৩২ হবে। তিনি তালিবানের সম্ভাব্য প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১৬ সালে, কিন্তু বয়স কম ও অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনিই হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদার নাম সুপারিশ করেন প্রধান হিসেবে। 

এছাড়া রয়েছেন সিরাজউদ্দিন হাক্কানি, প্রখ্যাত মুজাহিদিন নেতা জালালউদ্দিন হাক্কানির ছেলে। তিনি আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে তালিবানের সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পদ তদারকি করার দায়িত্বে আছেন। অনেকে বলেন, আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার সূত্রপাত এই হাক্কানির হাত ধরেই। হাক্কানির বয়স সম্ভবত ৩০ থেকে ৪০ এর মাঝামাঝি।

দুর্নীতি, অপরাধপ্রবণতা দূর করার লক্ষ্য নিয়ে জন্ম তালিবানের। কিন্তু যত দিন এগিয়েছে, তালিবান ততই হয়ে উঠেছে হিংস্র। নির্বিচারে মানুষ খুন তো বটেই, নারী অত্যাচারেও হাত পাকিয়েছে তারা। ইসলামের নামেই চলেছে যথেচ্ছ অপশাসন, অত্যাচার, জুলুম। তাই আফগানিস্তানে এখন শুধুই ভয়ের বাতাবরণ। তালিবান অবশ্য দাবি করে শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যেই তারা এগোচ্ছে, কিন্তু আতঙ্ক মুছে ফেলা সহজ নয়। এর থেকে মুক্তি কোথায়? উত্তর খুঁজছে কাবুলিওয়ালাদের দেশ।