আলমগীর সিদ্দিকী, শ্যামনগর থেকে :নাম বঙ্গবন্ধু চর হওয়ায় এর প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। এই চর যদি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় তাহলে সুন্দরবনের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়বে। সুন্দরবন উপকূলের দুবলার চর সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা বঙ্গবন্ধু চর পর্যটকদের কাছে এক নতুন আকর্ষণ।
চলতি মৌসুমে সুন্দরবন ট্যুর অপারেটরদের অনেকেই পর্যটকদের আগ্রহের কারণে এই দ্বীপ ঘিরে তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট ও দুবলার চরের মাঝখানে এই চর অবস্থিত। প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বঙ্গবন্ধু চর যেন সমুদ্রের বুকে নতুন এক টুকরো বাংলাদেশ। শ্যামনগরে দরদীয়া টুরিস্ট, বরসা টুরিস্টসহ ছোটবড় ৫০/৬০টি ট্যুরিস্ট বোট রয়েছে। যেগুলোর ধারণক্ষমতা ১০ থেকে ৭০ জন। পর্যটন মৌসুমে সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য ৮টি পর্যটন এলাকায় পর্যটক অবস্থান করে। এতে যোগ হতে চলেছে ‘বঙ্গবন্ধু চর’।
শ্যামনগরের ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান ‘দরদীয়া ট্যুরিস্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হুমায়ুন কবীর সাকী জানান, এ বছর মৌসুমের শুরুতে তিনি বগুড়ার একদল তরুণের অনুরোধে বঙ্গবন্ধু চরে গিয়েছিলেন। চরে দেখা যায়, লাল কাকড়া আর নানা প্রজাতির পাখি। জন্ম নিয়েছে নানা প্রজাতির গাছ আর লতাগুল্ম, তার মধ্যে ফুটেছে ফুল, রয়েছে বানর, হরিণ ও বন্য শূকর। বাঘের পায়ের ছাপ ও চোখে পড়ে ভাগ্যে থাকলে চলার পথে নদীর চরে দাঁড়ানো বাঘও দেখতে পারেন।
নদীতে ডলফিনের ঝাঁক দেখা যায় মাঝে মধ্যে। চরে নামার সঙ্গে সঙ্গে বানর দল দেবে আপনাকে অভ্যর্থনা। এতে তাদের স্বার্থ রয়েছে, তারা জানে আপনি গেলে তাদের জন্য মুড়ি, বিস্কুট বা অন্যান্য খাবার নিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ‘এর নাম বঙ্গবন্ধু চর’ হওয়ায় এর প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। চরকে যদি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় তাহলে সুন্দরবনের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়াবে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম বলেন, আমাদের নির্ধারিত পর্যটন কেন্দ্রের পাশাপাশি এ বছর বঙ্গবন্ধু চর ও মান্দারবাড়িয়া অভয়ারণ্য যেতে অনেক পর্যটক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই জেগে ওঠা বঙ্গবন্ধু চর দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও সেখানে কোনো অবকাঠামো না থাকায় এবং বনবিভাগের অনুমতি না থাকায় সেখানে যেতে পারছি না।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন নেতা সাকী বলেন, অনেক পর্যটক বহুবার সুন্দরবন ভ্রমণ করলেও শুধু বঙ্গবন্ধু চর দেখার জন্য আবার সুন্দরবন যেতে চান। সুন্দরবনে পর্যটকদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামো সুবিধা বাড়লে দেশি-বিদেশি পর্যটক আরও বাড়বে। বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা বঙ্গবন্ধুর চর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।
শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলমগীর বলেন, বঙ্গবন্ধু চরে বন বিভাগের পক্ষ থেকে একটা টহল ফাঁড়ি হলে পর্যটকরা আর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, জেগে ওঠা চরটিতে বিভিন্ন ধরনের গাছ জন্ম নিচ্ছে। এ ব্যাপারে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক এমএ হাসান বলেন, এই চরকে পর্যটনমুখর করতে সরকার সব ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে তাতে সুন্দরবন থেকে আরও রাজস্ব যোগ হবে দেশের অর্থনীতিতে।