Home First Lead বন্দর পরিস্থিতি উত্তরণে এগিয়ে আসতে হবে আমদানিকারকদেরকে: তরফদার আমিন

বন্দর পরিস্থিতি উত্তরণে এগিয়ে আসতে হবে আমদানিকারকদেরকে: তরফদার আমিন

তরফদার মো. রুহুল আমিন

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা: চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর  সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহত্তম অপারেটর সাইফপাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য প্র্রয়োজন চট্টগ্রাম বন্দরকে দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা। তারজন্য ইতিমধ্যে সরকার বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, সেই সঙ্গে আরও কিছু সুবিধা দরকার। বন্দরকে স্বাভাবিক করতে আমদানিকারকদের এগিয়ে আসতে হবে, যাতে তাদের পণ্য দ্রুত ডেলিভারি নেয়া হয়।

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধির সাথে চট্টগ্রাম বন্দর পরিস্থিতি নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে এই অভিমত দেন তিনি। বলেন, মার্চের চব্বিশ পঁচিশ তারিখের পর থেকে ডেলিভারি কমে যাওয়া শুরু হয় বন্দরে। সাধারণত প্রতিদিনি সাড়ে ৪ হাজার টিইউস কন্টেইনার ডেলিভারি হয় এবং প্রায় একই সংখ্যক খালাস হয় জাহাজ থেকে। খালাস এবং ডেলিভারির মধ্যে অবশ্য সামান্য ৩০/৩৫ টিইউসের গ্যাপ থাকে। লকডাউনে পরিবহন বন্ধ থাকায় কমে যায় ডেলিভারি। তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প-কারখানা চালু থাকলে এবং পরিবহনও যদি সচল থাকতো তাহলে এ অবস্থা হতো না। আমদানি করা সব পণ্যের কন্টেইনার অফডকে নেয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদন এবং বন্দর কর্তৃক তাদের স্টোর রেন্ট মওকুফের ঘোষণা দেয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে শুরু করেছে।

জানান, বন্দরের এনসিটি সিসিটিতে নিয়োজিত কর্মিরা বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছেন। প্রবেশমুখে দেখা হচ্ছে তাদের শরিরে তাপমাত্রা সঠিক আছে কী না, হাত ধোয়ানো হচ্ছে। মাস্ক রয়েছে সবার। এভাবে কাজে নিয়োজিত রযেছেন তারা। বন্দরে চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে নিরাপত্তা কর্মি পর্যন্ত সবাই, আমরা অপারেটররা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছি। সরকারও চেষ্টা করছে বন্দর পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য। করোনার ধাক্কার মধ্যে বন্দরও যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে অর্থনীতি বন্ধ হয়ে যাবে।

অভিমত দেন, রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক সব পণ্যের কন্টেইনার অফডকে নেয়ার অনুমোদন এবং বন্দর কর্তৃক স্টোর রেন্ট মওকুফ হলেও বন্দর পরিস্থতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমদানিকারকদের এগিয়ে আসা। অফডক থেকে দ্রুত ডেলিভারি নিতে হবে পণ্য। অফডকগুলোর কন্টেইনার রাখার ক্ষমতা ৬৫ হাজার টিইউস। বন্দরের ৪৯ হাজার টিইউস। বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজগুলোতে রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার টিইউস। অফডকগুলোতে যতটুকু জায়গা খালি আছে তা’ কয়েকদিনের মধ্যে ভর্তি হয়ে যাবে। এরমধ্যে যদি আমদানিকারকরা দ্রুত তাদের পণ্য ডেলিভারি নিয়ে যান তাহলে সুফল মিলবে। নতুবা আবারও একই অবস্থা তৈরি হবে। অবশ্য আমদানিকারকদেরে এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। ব্যাংকের এবং কাস্টম হাউসের কর্মঘণ্টা পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়া প্রয়োজন, যাতে আমদানিকারকরা তাদের ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে শুল্ক বাবৎ অর্থ জমা করার সুযোগ পায়। কাস্টম হাউসে গিয়ে এসেসমেন্ট, আবার শুল্কের টাকা জোগাড় এবং জমা করতে হয়। এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীরা অর্থকড়ির সমস্যায় রয়েছেন একমাসের অচলাবস্থায়। সব ব্যবসায়ীর এই দুরবস্থা। তাই প্রয়োজন ব্যাংক, কাস্টমস এবং শিপিং এজেন্টদের সাপোর্ট। যে কোনোভাবে বন্দরকে সচল করতে হবে।

চিটাগাং চেম্বারের সহ-সভাপতি তরফদার রুহুল আমিন বলেন,  আমাদের দেশে বছরে ১২০ বিলিয়ন ডলারের ট্রেড হয়। সেই হিসেবে মাসে ১০ বিলিয়ন ডলারের ট্রেড। কিন্তু গত একমাস ধরে তা নেই। করোনার বিরূপ প্রভাবের মধ্যে ট্রেড না থাকার নেতিবাচক প্রভাব কতটা তা সবার চিন্তা করতে হবে। সবকিছু করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। কিছু কিছু পর্যায়ে রিলাক্স শুরু হয়েছে। যারা কাজ করবে সেফটি নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা যে স্ট্র্যাকচারে বসবাস করি, আমাদেরকে যদি বলা হয়, কোরিয়া জাপান, ইউরোপের মত হতে হবে, তাহলে আমরা পারবো না। পশ্চিমা দেশগুলোতে সবার ডাটাবেজ আছে। একটা লোক কোথায় বসবাস করে, তার ব্যাংক একাউন্ট, সেন্ট্রাল মনিটরিংয়ে তা পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের দেশে এখনও তা গড়ে ওঠেনি। অবশ্য আস্তে আস্তে হচ্ছে। সবাই যদি ঘরে বসে থাকি, তাহলে খাবারের ইস্যু থাকবে, ঠিকমতো খাওয়ার পৌঁছাতে পারছে কি না তার ইস্যু থাকবে। কিছু জায়গা রিলাক্স করে বন্দরটাকে চালু করে অর্থনীতিটাকে সচল করতে হবে।

উল্লেখ করেন, জাহাজ আগে ৫/৭ দিনে চলে যেতো। এখন আউটারে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ১৮ দিন পর্যন্ত। চার্টার জাহাজগুলোর দৈনিক ডেমারেজ ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার ডলার।  তাই প্রয়োজন বন্দর পরিস্থিতি দ্রুত সহনীয় করা। তার জন্য ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে, সে সঙ্গে প্রয়োজন পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা। তাহলে মাস দুয়েকের মধ্যে বন্দর পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে আশা করেন তিনি।