চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরে অতীতে অনেক অনিয়ম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহণ এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরকে ধীরে ধীরে জঞ্জালমুক্ত করা হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এরপর বন্দর ভবনে তিনি বন্দর ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। নৌপরিবহণ উপদেষ্টা রোববার চট্টগ্রাম আসার পর তিন দিন ধরে তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের সময়ে কোনো দুর্নীতি হবে না- এটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। এখানে (চট্টগ্রাম বন্দরে) অনেক অনিয়ম হয়েছে। অনেক লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে- কারও মামা, কারও চাচা, কারও দাদার নামে। তারা কাজ করছেন না। লাইসেন্স নিয়ে হয়তো অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এ সবই আমাদের নজরে আছে। এই বন্দরকে জঞ্জালমুক্ত করতে হবে। একে আরও কুইক রেসপন্স করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ২২ বছরের জঞ্জাল ২২ মিনিটে দূর করা সম্ভব নয়। আমরা ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে এগুচ্ছি। এমন কিছু করতে চাই না, যাতে ইন্টারেস্টেড লোকজন সুযোগ পেয়ে যায়। সমুদ্রবন্দরের বাইরে অনেক স্থলবন্দরও আছে, সেখানে আরও বেশি দুর্নীতি। মাত্র দুই মাসের মধ্যে এই দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। এজন্য সময় লাগবে। ধৈর্য ধরতে হবে।
গত সরকারের শেষ সময়ে বন্দরের ভেতরে বিদেশি অপারেটর আনার চেষ্টা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এ বিষয়ে কমিটি হবে। যদি বন্দরের আয় বেশি হয়, প্রতি বছর যদি সেই আয় বাড়ে, টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনে যদি হয়, আমাদের নেগোসিয়েশন সেটেলমেন্টে যদি হয় এবং আমাদের যারা কাজ করছে তাদের যদি ক্ষতি না হয়, তাহলে আমরা এটা চিন্তা করতে পারি। প্লাস-মাইনাস দেখার পরে এবং যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হয় তা অত্যন্ত স্বচ্ছ হবে। প্রত্যেক পর্যায় আপনারা জানতে পারবেন কমিটি কী আলোচনা করল, কী সিদ্ধান্ত নিল। সব কিছু প্রকাশ করা হবে।
আর কোনো কিছুই ডিপিএম মেথডে (সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি) হবে না উল্লেখ করে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা বলেন, সব কিছু ওপেন টেন্ডারে হবে। টেন্ডারের শর্তগুলো আমরা রিভিউ করব যাতে স্থানীয়, বিদেশি সবাই অংশ নিতে পারে। ডিপিএম শুধু হবে ‘জি টু জি’ প্রকল্প যদি হয়। ওইটাও আমরা ডিপিএম-এ করতে চাই না, যদি বিশেষ প্রয়োজন না হয়।
বে-টার্মিনাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপাত দৃষ্টিতে এই প্রকল্পে কোনো সমস্যা দেখছি না। এখানে ইনভেস্টমেন্ট আসছে। বিদেশি ইনভেস্টমেন্ট বসে আছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকও এর জন্য বসে আছে। মন্ত্রণালয়ে এর একটি ডিটেইলস প্রেজেন্টেশন হবে। এরপর স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলব। আমাদের দিন দিন আমদানি-রপ্তানি বাড়ছে। বে-টার্মিনাল হলে আগামী অনেক বছর আর নতুন বন্দর লাগবে না। বিদেশি বিনিয়োগ আমাদের দরকার। আমরা সব ইনভেস্টমেন্টকে যদি প্রশ্নবিদ্ধ করি তাহলে বাইরের বিনিয়োগকারীরা আসবে না। আমাদের স্বার্থ আমরা বেশি করে দেখব। দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে এমন কিছুই করব না। বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ বন্দরের অধীনে পরিচালনার চেষ্টা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের লাইফলাইন। এটি যদি ঠিকমতো না চলে, এফিশিয়েন্ট না হয়, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক লাইফলাইনের মধ্যে অসুবিধা হবে। ম্যানুয়ালি হওয়ায় লোডিং-আনলোডিংয়ে কিছু বেশি সময় লাগছে। আমরা যদি অটোমেশন করতে পারি তাহলে এ সময় আরও কমে যাবে। অটোমেশনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।
দীর্ঘদিন নিলামযোগ্য পণ্য বন্দরে পড়ে থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখানে ২০ বছর আগের কনটেইনার পড়ে আছে। ১২-১৪ বছর ধরে গাড়ি পড়ে আছে। এগুলো নিলাম করার দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এখনো জানি না ওদের সমস্যাটা কী। ৪০-৬০ শতাংশ জায়গা এগুলো দখল করে রেখেছে। এ নিয়ে আমি এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলব। যদি প্রয়োজন হয় আইন পরিবর্তন করতে হবে। বন্দরকে ফ্রি করতে হবে।
তিনি বলেন, বাইরের যে ডকগুলো আছে, সেখানে কাস্টমস যায় না। অফডকে নিয়ে কনটেইনার খুলে পণ্য ডেলিভারি দিলে বন্দরে কনজেশন কম হয়।