Home আন্তর্জাতিক ভারতীয় দম্পতিদের বেশিরভাগই ভুগছেন বন্ধ্যাত্বে

ভারতীয় দম্পতিদের বেশিরভাগই ভুগছেন বন্ধ্যাত্বে

ছবি সংগৃহীত

এখনকার সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে সকলেই ছুটছেন। তারপর এখন অনেকেই বেশি বয়সে বিয়ে করছেন। তাই সন্তানধারণে অনেক রকম জটিলতা হচ্ছে। সে নিয়ে ভয় ও দুশ্চিন্তাও বাড়ছে। বন্ধ্যত্বের সমস্যা বাড়ছে। আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগেও বন্ধ্যত্বের (Infertility) সমস্য়া এত বাড়েনি। এখন প্রতি ৭ জন দম্পতির মধ্যে একজন দম্পতি (১৫%) বন্ধ্যত্বের শিকার।

 

বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ জানাচ্ছে, যদি দেখা যায় কোনও দম্পতি বছরের পর বছর অসুরক্ষিত যৌনমিলন করার পরেও সন্তান আসছে না তখন তাকে বন্ধ্যত্ব বলা হবে। আবার যদি দেখা যায় মেয়ের বয়স ৩৫ বছর বা তার বেশি এবং বার বার চেষ্টা করেও মা হতে পারছেন না, তখন তাকে বন্ধ্যত্ব বলা যাবে। এর কারণ হতে পারে বেশি বয়সে বিয়ে বা বেশি বয়সে সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা। বয়স যত বাড়বে মহিলাদের ডিম্বানুর গুণগত মান ও সংখ্যা কমতে থাকবে। তার ওপর সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে কাজের চাপ, অত্যধিক মোবাইল-ল্যাপটপের ব্যবহার, খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, মানসিক চাপ সবই বন্ধ্যত্বের কারণ হতে পারে। মানসিক চাপ বাড়লে হরমোন ক্ষরণে তারতম্য হয় যা প্রেগন্য়ান্সির ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করতে পারে।

 

 

একজন পুরুষের স্পার্ম কাউন্ট হওয়া দরকার ১৫ মিলিয়ন/ মিলিলিটার। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ও অনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইলের কারণে স্পার্ম কাউন্টে হেরফের হচ্ছে। বন্ধ্যত্বের কারণ যদি খতিয়ে দেখা হয়, তাহলে বোঝা যাবে বন্ধ্যত্বের সমস্যার জন্য এক তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে শুধু মহিলারা, এক তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে পুরুষরা ও এক তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে উভয়েই দায়ী। পুরুষদের ক্ষেত্রে নানারকম ফ্যাক্টর বন্ধ্যত্বজনিত সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে। যেমন– ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা ইজাকুলেশনে সমস্যা থাকলে, অতিরিক্ত ধূমপান ও অ্যালকোহলের নেশা, ছোটবেলায় কোনও রকম ভাইরাল ইনফেকশন হলে, টেস্টিস বা শুক্রাশয়ে কোনও রকম সার্জারি হয়ে থাকলে।

 

বন্ধ্যত্বের কী কী চিকিৎসা আছে?

চার রকমের পদ্ধতি আছে–ওষুধ, সার্জারি, আইইউআই ও আইভিএফ (ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন)। এই সার্জারিগুলোকে বলা হয় ফার্টিলিটি এনহ্যান্সিং সার্জারি (Infertility)। এর মধ্যে রয়েছে ল্যাপারোস্কোপি ও হিস্টেরোস্কোপিক সার্জারি। ক্যামেরা ঢুকিয়ে জরায়ুর অবস্থা পরীক্ষা করা হয়। ইউট্রাইন পলিপ, ইউট্রাইন সেপটা, ইউট্রাইন অ্যাডহেশন ও টিউবাল ব্লক থাকলে হিস্টেরোস্কোপিক সার্জারি করা যেতে পারে।

ওভারিতে যদি সিস্ট থাকে সেক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচার করা হয়। তাছাড়া চকলেট সিস্ট, এন্ডোমেট্রিওসিস, পেলভিক অ্যাডহেসিওলাইসিস, ইউট্রাইন ফাইব্রয়েড ও টিউবাল ব্লকের ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করা হয়ে থাকে।

আইভিএফ পদ্ধতির সাফল্যের জন্য প্রাথমিকভাবে এই সার্জারিগুলো করা হয়। যদি জরায়ুতে পলিপ থাকে তাহলে সেটা বের করে দেওয়া বা সেপটা কেটে দেওয়া ইত্যাদি। প্রাথমিকভাবে এই সার্জারিগুলো করা থাকলে পরে আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তানধারণ করা সহজ হয়।

ল্যাপারোস্কোপি সার্জারি করে ফ্যালোপিয়ান টিউবের জট ছাড়ানো যায়। তবে এই অপারেশন করার আগে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হয়। প্রথমত, মহিলার বয়স যদি কম হয় এবং স্বামীর শুক্রাণু সচল ও সক্রিয় থাকে তাহলে টিউবার অপারেশনের পরে স্বাভাবিক উপায়ে মাতৃত্ব লাভ সম্ভব। অনেক সময় দেখা যায় টিউবাল সার্জারির পরে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ঝুঁকি বেড়েছে। জরায়ুর বদলে ভ্রূণ ফ্যালোপিয়ান টিউবে বেড়ে উঠতে শুরু করে। তখন পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। এমন সমস্যা তৈরি হলে তখন মাতৃত্ব লাভের একমাত্র উপায় হল ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ পদ্ধতি।