চীনে চলছে বসন্ত উৎসব কিংবা চান্দ্র নববর্ষের আনন্দমুখর আয়োজন। সারা দেশে এই উৎসব ঐতিহ্যবাহী প্রথা, বাহারি খাবার, সজ্জা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং নানান রীতি–রেওয়াজের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হচ্ছে। এবারের উৎসব শুরু হয়েছে ২৯ জানুয়ারি। চলবে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই বর্ণিল আয়োজন উপভোগ করতে চীনের নাগরিকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যটকেরাও। এই পুরোটা সময় চীনের বিভিন্ন রাজ্য ঘুরে এই উৎসব উপভোগ করবেন তাঁরা।
চীনের রাজধানী বেইজিংসহ শাংহাই, ছোংছিং, ফুচিয়ান, চ্যচিয়াং, হেইলংচিয়াং, চিলিন, হ্যপেই, থিয়ানচিন, ইয়ুননানসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো সেজে উঠেছে নানান রঙে। সিংহ নৃত্য, ড্রাগন নৃত্য এবং সর্প নৃত্যের আয়োজন বসেছে। এর ফলে শহরগুলোতে পর্যটকের সংখ্যা সাধারণভাবে বেশি।
চীনের সংস্কৃতি অনুসারে, চান্দ্র ক্যালেন্ডারের ১২টি প্রাণীকে রাশিচক্রের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট প্রাণীর নাম অনুসারে চান্দ্র নববর্ষ উদ্যাপিত হয়। এবারের বছরটি সর্পবর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে।
চীনের এই উৎসব ঘিরে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। পর্যটকের এই চাপ চীনের অর্থনৈতিক গতিশীলতায় ভূমিকা রাখে। প্রায় ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ চীন পৃথিবীর বড় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর জনপ্রিয় স্থান। তাই আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যটকদের জন্য বিশেষ আয়োজন থাকে প্রতিবছর। হোটেল বুকিং সুবিধা থেকে শুরু করে উৎসবটি যেন পর্যটকেরা আনন্দ ও নিরাপত্তার সঙ্গে উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য নেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থা।
এ সময় চীনের পর্যটন ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন সেবার অফার নিয়ে হাজির হন। সেগুলোর মধ্যে থাকে কাস্টমাইজড ট্যুর প্যাকেজ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত ভ্রমণ সহায়িকা চীনে ভ্রমণকে আরও সহজ ও সুন্দর করে তুলেছে। উইচ্যাট, টিকটক বা উইবোর মতো সামাজিক মিডিয়াগুলো পর্যটকদের নতুন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। ভ্রমণ ভ্লগাররা তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে নতুন জায়গায় যেতে অনুপ্রাণিত করেন দেশি–বিদেশি নতুন পর্যটকদের।
যদিও বসন্ত উৎসব মূলত চীনা সংস্কৃতির অংশ, কিন্তু এর বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। পর্যটনশিল্পের জন্য এটি নতুন দ্বার উন্মুক্ত করেছে।
চীনের লোকজ সংস্কৃতি অতি সমৃদ্ধ। হাজারো বছরের সভ্য এ দেশে রয়েছে সাংস্কৃতিক নানা উৎসব অনুষ্ঠান। রয়েছে বিশেষ রীতিনীতি। বলতে গেলে বিশাল এই দেশে নানা উৎসব অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের শেষ নেই।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
২। চীনের বসন্ত উৎসবে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
ফেব্রুয়ারি ৩, সিএমজি বাংলা ডেস্ক: চীনের বসন্ত উৎসবের আয়োজনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে রোবটের মতো নতুন পণ্যগুলোও আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।
পারিবারিক পুনর্মিলন, সাংস্কৃতিক উৎসব ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যম এই বসন্ত উৎসব, যা চীনা চান্দ্র নববর্ষ নামেও পরিচিত। এ বছর দিবসটি ২৯ জানুয়ারি পালিত হয়েছে। চীনা রাশিচক্রে এবারের বছরটি সর্পবর্ষ।
চীনের হ্যপেই প্রদেশের এনশি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন সিনিক অঞ্চলে দেখা যায় ভিন্নধর্মী পরিবেশনা। রোবট কুকুরের নাচ ও লায়ন ডান্স বিমোদিত করে শিশুদের।
মন্দির মেলা বসন্ত উৎসবের একটি ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। বেইজিং এই বছর প্রথমবারের মতো এআই–থিমযুক্ত মন্দির মেলার আয়োজন করে, যা নজরকাড়ে দর্শনার্থীদের। এ আয়োজনের সবচেয়ে আকর্ষণ ছিল চারটি রোবটের ড্রাম, কীবোর্ড, বেস ও গিটার বাজানো। সেইসঙ্গে যন্ত্র, ইলেকট্রনিক্স,সফটওয়্যার ও গতি নিয়ন্ত্রক অ্যালগরিদমের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সুর–সঙ্গীতের নিখুঁত সংমিশ্রণ। রোবটের হাতের চীনা ক্যালিগ্রাফ, ফুটবল খেলা বা অপেরা উপস্থাপনায় দেখা যায় উচ্চপ্রযুক্তির ছোঁয়া।
এআই মন্দির মেলায় শতাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৃশ্য প্রদর্শিত হয়েছে, যা হাজার হাজার পর্যটকের দৃষ্টিকাড়ে। চিনির মূর্তি, ককটেল ও ডেজার্ট তৈরিও করছে রোবট। এই সৃজনশীল ডিজাইনগুলোর মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধুর্য নিবিড়ভাবে উপলব্ধির সুযোগ পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা ।
প্রতিবেদন- শাহানশাহ রাসেল।সম্পাদনা- আফরিন মিম
৩। দক্ষিণ চীনের চেনশান গ্রামের মনভোলানো ছবি
পর্যটকরা যখন মনস্থির করতে পারেন না তারা পাহাড়ের দৃশ্য বেশি ভালোবাসেন না বেলাভূমির দৃশ্য—তখন তারা বেছে নিতে পারেন চেনশান গ্রামকে। চীনের এই গ্রামে গেলে আপনি পাবেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি আধুনিকতার ছোঁয়া।
দক্ষিণ পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের কুইইয়াং শহর সংলগ্ন একটি গ্রাম হলো চেনশান। উপদ্বীপ এই গ্রামটির তিনদিকে রয়েছে জল। আরও রয়েছে পাহাড়। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে দেখা যায় চারিদিকে সুনীল জলের দৃশ্য। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিই নয়, এই গ্রাম সাংস্কৃতিক দিক থেকেও সমৃদ্ধ।
একসময় এই গ্রাম ছিল সামরিক দূর্গ। পরবর্তীতে ১৫৭৩ থেকে ১৬২০ সালের মধ্যে এই গ্রাম গড়ে ওঠে। এখানকার অধিকাংশ অধিবাসী বুয়ি এথনিক গ্রুপের মানুষ। এছাড়াও এখানে মিয়াও জাতিগোষ্ঠীর বাসিন্দা।
পুরো গ্রামটি একটি পাথরের দুর্গের মতো, যেখানে রয়েছে পাথরের দরজা টাওয়ার, পাথরের প্রাচীর, পাথরের বাড়ি । এমনকি পাথরের রাস্তাও রয়েছে। এমনকি এই গ্রামের অনেক পরিবারের ব্যবহৃত সামগ্রীও পাথরের তৈরি। , এখানে প্রায় ১২০টি পরিবার রয়েছে। যার মধ্যে তিন চতুর্থাংশ বুয়ি এবং এক চতুর্থাংশ মিয়াও।
এখানে পর্যটকদের বেশি আকৃষ্ট করে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা। স্থানীয় একটি পরিবার পরিদর্শন করার পাশাপাশি বুয়ি জাতিগোষ্ঠীর রান্নার স্বাদও নিতে পারেন, উপভোগ করতে পারেন এই জাতিগোষ্ঠীর পরিবেশিত নানা পরিবেশনা। এছাড়া হুয়াশি হ্রদে নৌকা ভ্রমণও করতে পারেন।
২০০০ সালে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ইকোমিউজিয়াম। বুয়ি সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্য স্থাপিত এই মিউজিয়ামে রয়েছে অনেক প্রাচীন নিদর্শন। এই গ্রামে রয়েছে মিং রাজবংশের সময়ে নির্মিত মন্দির। মন্দিরের প্রধান হলটি আজও সংরক্ষিত রয়েছে, যেখানে খোদাইকৃত নকশা এবং ধূসর টালি রয়েছে, যা আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।
চীনে বর্তমানে যে গ্রাম পর্যটন জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাতে পর্যটকদের কাছে চেনশান গ্রামের আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সৌজন্যে: সিজিটিএন