“জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন এবং সমৃদ্ধ ভবিষতের প্রত্যাশা” শীর্ষক ওয়েবিনার
চট্টগ্রাম: দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (সিসিসিআই), জাপান এক্সটার্ণাল ট্রেড অর্গানাইজেশন
(জেটরো), ঢাকা এবং জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (জেবিসিসিআই)’র যৌথ উদ্যোগে
“জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতর প্রত্যাশা ” শীর্ষক ওয়েবিনার ১৫
ফেব্রুয়ারি বিকালে অনলাইন প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি , বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস, জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ, জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্শিয়াল এন্ড ইকনোমিক কোঅপারেশন (জেবিসিসিইসি)’র চেয়ারম্যান তেরু আসাদা সিবিই , চিটাগাং চেম্বার
সভাপতি মাহবুবুল আলম, টোকিও জেটরো হেডকোয়ার্টার’র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজুইও
নাকাজো, জাপানীজ কমার্শিয়াল এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি এসোসিয়েশন ইন ঢাকা’র সভাপতি হিকারী কাওয়াই (গৎ. ঐরশধৎর কধধির), জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি আসিফ এ চৌধুরী এবং চিটাগাং চেম্বার সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মোঃ রুহুল আমিন বক্তব্য রাখেন। জেটরো’র কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইওজি আন্দো এবং জেবিসিসিআই’র সেক্রেটারি জেনারেল তারিক রাফি ভূঁইয়া যৌথভাবে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
প্রায় ৩০০ ভিউয়ার অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেন-স্বাধীনতা পরবর্তীতে বাংলাদেশকে প্রথমেই স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশসমুহের মধ্যে জাপান অন্যতম। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে জাপান সফর করেন এবং সীমিত সম্পদ, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা থাকা বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করেন। উভয়দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে জাপান এককভাবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ অবদান রেখে এসেছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে জাপান সফরকালে উভয়দেশের মাঝে কমপ্রেহেন্সিভ পার্টনারশীপ স্বাক্ষর করেন এবং সময়ের সাথে সাথে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে জাপান এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী দেশের অবদান অপরিসীম। জাপানকে এশিয়ায় বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য উল্লেখ করে বলেন-বর্তমানে তৈরি পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যেরও রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে। গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ৪০% থেকে ২০% এর নীচে নেমে এসেছে এবং মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬শ ডলারে যা ২০০৮ সালের তুলনায় সাড়ে চার গুণ। তিনি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে এবং চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ইকনোমিক জোনে অধিক পরিমাণে জাপানী বিনিয়োগের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন-১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু জাপান সফরের পর ১৯৭৪ সালে জাপানের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করেন এবং যমুনা ব্রিজ, চট্টগ্রাম বিমান বন্দর ও ঘোড়াশাল সার কারখানা স্থাপনে সহায়তা করে। চিটাগাং চেম্বার, জাপান চেম্বার এবং জেটরো দুই দেশের ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করে চলছে। জাপান-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো দৃঢ় করবে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরনার্থীদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে জাপান সহযোগিতা করবে জানিয়ে চলমান মহামারী শেষে অদূর ভবিষ্যতে চট্টগ্রামে বে অব বেঙ্গল গ্রোথ সামিট আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস উভয়দেশের প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফর এবং সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখার যে ঘোষণা তা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরো ত্বরান্বিত করবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপান আমাদের সহযোগিতা করে আসছে যার মধ্যে কিছু প্রকল্প ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং আরো কিছু বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। জাপানের সহযোগিতায় ঢাকা এমআরটি, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর তৃতীয় টার্মিনাল এবং মাতারবাড়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে যাবে।
জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন-১৯৭২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যূতে বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য, পারস্পরিক আস্থা, সমঝোতা এবং সমর্থনের ভিত্তিতে উভয় দেশ একসাথে অতিক্রম করেছে।
টোকিওস্থ জেবিসিসিইসি’র চেয়ারম্যান তেরু আসাদা সিবিই বলেন-১৯৮০ সালে স্থাপিত হওয়ার পর থেকে এফবিসিসিআই’র সাথে সমন্বয়ে জেবিসিসিইসি দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার উন্নয়নে বিশাল অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩০০ এর অধিক জাপানী কোম্পানী ব্যবসা পরিচালনা করছে। আড়াইহাজার স্পেশাল ইকনোমিক জোন-সহ বাংলাদেশে এসব কোম্পানী তাদের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে আগ্রহী। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশ-জাপান পাবলিক প্রাইভেট জয়েন্ট ইকনোমিক ডায়ালগ (পিপিইডি) সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। খুব শীঘ্রই হয়তো পিপিইডি’র পরবর্তী সভার তারিখ নির্ধারিত হবে এবং এই সভাকে ঘিরে আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন-বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক রপ্তানি বাজারকে কেন্দ্র করে উভয়দেশের বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। কাজেই, আমাদের কমপ্রেহেন্সিভ পার্টনারশীপ-কে কাজে লাগিয়ে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার নতুন দিক উন্মোচন এবং উভয়দেশের বেসরকারি খাতের মধ্যে সম্পর্কে আরো শক্তিশালী করার এটি উপযুক্ত সময়। আমাদের সম্পর্কের এই সুবর্ণ সময়ে বিনিয়োগের নতুন নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার ও তা সদ্ব্যবহারে বিটুবি কর্ম কাঠামো সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে উভয় সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
টোকিও জেটরো হেডকোয়ার্টার’র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজুইও নাকাজো বলেন-চট্টগ্রাম এবং মাতারবাড়ীর ভৌগোলিক অবস্থানকে কার্যকর করে ভারত, দক্ষিণ এশিয়া, আসিয়ান ও জাপানের মধ্যে ভেল্যু চেইনে সংযুক্ত হয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগের আকর্ষণীয় স্থানে রূপান্তরিত হতে পারে। ব্যবসায়িক পরিবেশ এবং ইজ অব ডুয়িং বিজনেস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও অংশীজনদের সাথে জেটরো অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
জাপানীজ কমার্শিয়াল এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি এসোসিয়েশন ইন ঢাকা’র সভাপতি হিকারী কাওয়াই বলেন-১৯৭২ সালে মাত্র ১২টি জাপানী কোম্পানী আমাদের সদস্য ছিল। বর্তমানে আমাদের সদস্য সংখ্যা ১২০ অর্থাৎ ৫০ বছরে কোম্পানীর সংখ্যা দশ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর চট্টগ্রামসহ এর আশে পাশের এলাকা যেমনঃ মাতারবাড়ী, মিরসরাই ইত্যাদি জায়গায় আরো অনেক কোম্পানী সক্রিয় হচ্ছে। চিটাগাং চেম্বারে স্থাপিত জাপান ডেস্ক চট্টগ্রামের প্রতিশ্রুতিশীল ব্যবসা-বাণিজ্যে আরো বেশী কোম্পানীকে সহযোগিতা করবে বলে আশা করছি।
জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি আসিফ এ চৌধুরী বলেন-বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আর্থ সামাজিক থেকে শুরু করে পিপল টু পিপল পর্যন্ত বিস্তৃত। এফটিএ স্বাক্ষর করা, স্পেশাল ইকনোমিক জোনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যৌথভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সম্পর্ক জোরদার করার এখনই সময়।
-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি