Home অন্যান্য বাংলার আদি অধিবাসী কারা (২)

বাংলার আদি অধিবাসী কারা (২)

ড. আহমেদ আবদুল্লাহ

হজরত নূহ আ: এর পুত্র সামের নাম অনুসারে আরবদের সেমিটিক বলা হয়। এরাই মূলত টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস নদী অববাহিকায় সুমেরীয়, অ্যাসীরীয় ও ব্যবিলনীয় সভ্যতার সূচনা করেছিল। সেমেটিকদের আদি পুরুষ হজরত আদম আ: যার কথা পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে।

বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে যে জঙ্গলাকীর্ণ জনবসতি গড়ে উঠেছিল তারা মূলত আরবীয় সেমেটিক গােষ্ঠীর উত্তরপুরুষ। তাই বলা যায়, প্রাচীন যুগ থেকেই আরবদের সাথে বঙ্গভূমির একটা আত্মিক যােগাযােগ ছিল। রিয়াজুস সালাতীন গ্রন্থে ঐতিহাসিক গােলাম হােসেন সলীম বাংলা নামের উৎপত্তি প্রসঙ্গে বলেছেন, হজরত নূহ আ:-এর সময়কালে যে মহাপ্লাবন হয়, তাতে খােদাদ্রোহী শক্তি সমূলে বিনাশপ্রাপ্ত হয়।

যারা ওই মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পায় তারাই বিরান পৃথবীতে নতুন করে বসতি গড়ে তােলে। হজরত নূহ আ: এর এক পুত্রের নাম ছিল হাম। তিনি পৃথিবীর দক্ষিণ অংশে বসতি গড়ে তােলেন। হামের প্রথম পুত্রের নাম হিন্দ, দ্বিতীয় পুত্রের নাম সিন্দ, তৃতীয় হাবাস, চতুর্থ জানাঞ্জ, পঞ্চম বার্বার, ষষ্ঠ মিউবাহ। তাদের নামানুসারে অঞ্চলগুলাের নতুন নামকরণ হয়।

হিন্দের পুত্র দখিলের আবার তিন পুত্র ছিল এবং দক্ষিণ (দক্ষিণাত্য) তাদের মধ্যে তিন ভাগে ভাগ হয়। হিন্দের পুত্র বং (বঙ্গ) বাংলায় বসতি স্থাপন করেন বলে জানা যায়। বং-এর সাথে আল’ যুক্ত হওয়ার কারণ বাংলা ভাষায় আল’ অর্থ বাঁধ। বন্যার পানি যাতে আবাদি জমিতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য ওই সময় জমির চার দিকে বাঁধ দেয়া হতাে।

প্রাচীন বাংলার পুরুষরা পাহাড়ের পাদদেশে নিচু জমিতে ১০ হাত উঁচু ও ২০ হাত চওড়া স্তুপ তৈরি করে তাতে বাড়িঘর নির্মাণ করে চাষাবাদ করত। লােকেরা এগুলােকে বলত বাঙ্গালা। অন্য একটি বিষয়ও এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযােগ্য। আরবি আহল শব্দটি বংশ বা উত্তরাধিকার অর্থে ব্যবহৃত হয়। বংগ এর বংশ বা আহল’ বােঝাতেই বংগাল বা বাংলা শব্দের উৎপত্তি।

সেমিটিক ভাষায় আল’ মানে আওলাদ, সন্তান-সন্ততি বা বংশধর। এই অর্থে (বঙ+আল) বঙ্গাল বা বংগাল। সুতরাং এ কথা বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলা যায়, এ দেশের অধিবাসীদের শরীর ও রক্তে সেমিটিক ধারাই বেশি বহমান।

-লেখক: জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী পরিচালক