Home Uncategorized বাংলার আদি অধিবাসী কারা (৩)

বাংলার আদি অধিবাসী কারা (৩)

ড.আহমেদ আবদুল্লাহ

প্রাচীনকালে আর্যদের আগমনের আগে এই অঞ্চলে দ্রাবিড় জনগােষ্ঠী ছিল। এই দ্রাবিড়রা যে হজরত নূহ আ:-এর বংশধর এমন ধারণাও মনে করা যেতে পারে। প্রায় ৫-৬ হাজার বছর আগে ইন্দো-চীন থেকে আসাম হয়ে অস্ট্রো-এশিয়াটিক বা আস্ট্রিক জাতি বাংলায় প্রবেশ করে নেগ্রিটোদের উৎখাত করে বলে ধারণা করা হয়।

এরাই কোল, ভিল, মুন্ডা, সাঁওতাল প্রভৃতি জাতির পূর্বপুরুষ রূপে চিহ্নিত। বাংগালির শব্দ ও সংস্কৃতিতে তাদের প্রভাব রয়েছে। অস্ট্রো-এশিয়াটিক জাতির সময়কালে বা তাদের কিছু পরে, প্রায় ৫ হাজার বছর আগে দ্রাবিড় জাতি এ দেশে আগমন করে। উন্নত সভ্যতার ধারক হওয়ার কারণে অস্ট্রো-এশিয়াটিক জাতির চিন্তা চেতনার স্রোতধারাকে বদলে দিয়ে নতুন উন্নত সংস্কৃতি বিনির্মাণে সফলতা লাভ করে।

এভাবে অস্ট্রো দ্রাবিড় গােষ্ঠীর সংমিশ্রণেই আর্যপূর্ব জনগােষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রাক-আর্য জনগােষ্ঠী বাংগালি জনগণের তিন-চতুর্থাংশের বেশি দখল করে আছে। বস্তুত বাংগালি একটি শংকর জাতি হলেও দ্রাবিড়ীয় উপাদানের বেশিরভাগ দখল করে আছে। (বাংলাদেশে ইসলাম : আবদুল মান্নান তালিব)।

আজ থেকে ৫ হাজার বছর আগে এই দ্রাবিড় জাতি পশ্চিম এশিয়া থেকে বেলুচিস্তানের মধ্য দিয়ে হিমালয়ান উপমহাদেশে প্রবেশ করে। টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস নদীর অববাহিকায় জীবন অতিবাহিতকারী দ্রাবিড়রা স্বভাবতই ভারতের বৃহত্তম নদীগুলাের অববাহিকা ও সমুদ্র উপকূলকে নিজেদের আবাসভূমি হিসেবে বেছে নেয়। তাদেরই একটি দল গঙ্গা মােহনায় বসতি স্থাপন করে উন্নততর সভ্যতা গড়ে তােলে।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে বাংলার এই দ্রাবিড়দের শৌর্যবীর্য ও পরাক্রমের কাছে স্বয়ং বিশ্ব বিজয়ী আলেকজান্ডার নতি স্বীকার করেছেন। (প্রাগুক্ত)। ইয়েমেনের বাদশাহ আবরাহা কাবাঘর ধ্বংস করার জন্য মক্কা অভিমুখে যাত্রা করলে মহান আল্লাহতায়ালা তার অসীম কুদরতে আবাবিল পাখির ঠোটে বহন করা পাথর নিক্ষেপ করে ওই হস্তী  বাহিনীকে ধ্বংস করে দেন।

এ প্রসঙ্গটি এখানে এ জন্যই তােলা হলাে যে, প্রাচীন দ্রাবিড় রাজ্য হস্তীকে যুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করত। সুতরাং এমন ধারণায় উপনীত হওয়া যায় যে, প্রাচীন দ্রাবিড়রা আরবীয় সেমিটিক ধারারই উত্তরপুরুষ।

তাদের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানা গেলেও তারা যে কোনাে না কোনােভাবে তাওহিদবাদে বিশ্বাসী ছিল এমনটা বােঝা যায়। নয়তাে শিরকবাদী পৌত্তলিক আর্যদের সাথে তাদের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠত না।

-লেখক: জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী পরিচালক