বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: জনগণকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশ ও বিদেশে, যে যেখানেই আছেন- সবাইকে জানাই ১৪২৮ বঙ্গাব্দের আন্তরিক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ শুভেচ্ছা জানান।
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আবাহনের দিন। ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’-কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী এই গান গেয়ে আজ আমরা আবাহন করব নতুন বছরকে। একইসঙ্গে শুরু হয়েছে মুসলমানদের পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস- মাহে রমজান। আমি সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে পবিত্র মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, নতুন বছরের শুভক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জাতীয় চার নেতার প্রতি। স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সব বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। আমি স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে ঘাতকদের হাতে নিহত আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ভাই- মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও দশ বছরের ছোট্ট শেখ রাসেলকে- কামাল ও জামালের নবপরিণীতা বধূ- সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসেরসহ সেই রাতের সব শহিদকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৃষ্টির অমোঘ নিয়মে সময় চলে যায়। করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেই আমরা এক বছরের অধিক সময় পার করলাম। গত বছর মার্চের প্রথম সপ্তাহের দিকে আমাদের দেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয়েছিল। নানা আশঙ্কা আর আতঙ্ক গ্রাস করেছিল আমাদের। সেসব মোকাবিলা করেই আমাদের টিকে থাকতে হয়েছে। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের থাবায় আমরা হারিয়েছি আমাদের অনেক প্রিয়জনকে, আপনজনকে। সবার রুহের মাগফিরাত এবং আত্মার শান্তি কামনা করে স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। আবহমানকাল ধরে বাংলার গ্রাম-গঞ্জে, আনাচে-কানাচে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। গ্রামীণ মেলা, হালখাতা, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ছিল বর্ষবরণের মূল অনুসঙ্গ। ব্যবসায়ীরা আগের বছরের দেনা-পাওনা আদায়ের জন্য আয়োজন করতেন হালখাতা উৎসবের।
গ্রামীণ পরিবারগুলো মেলা থেকে সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় তৈজষপত্র কিনে রাখতেন। গৃহস্থ বাড়িতে রান্না হতো সাধ্যমতো উন্নতমানের খাবারের। ১৯৬০’র দশকের শেষভাগে ঢাকায় নাগরিক পর্যায়ে ছায়ানটের উদ্যোগে সীমিত আকারে বর্ষবরণ শুরু হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে এই উৎসব নাগরিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। ১৯৮০’র দশকে পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। মূলত আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনসমূহের কর্মী-সমর্থকদের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলেই আজকের এই অবস্থান। কালক্রমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এখন শুধু আনন্দ-উল্লাসের উৎসব নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী ধারক-বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।