Home পর্যটন অতিথি পাখির কলরবে মুখর বাইক্কা বিল

অতিথি পাখির কলরবে মুখর বাইক্কা বিল

পরিযায়ী পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে এসেছে বাইক্কা বিলে।

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার : শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের মাছের অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল এখন বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত। প্রতি বছরের মতো এবারও বাইক্কা বিলে এসেছে ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি।

গত শনিবার এশিয়ান ওয়াটার বার্ড সেনসাসের অধীনে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পরিচালনায় বাইক্কা বিলে টেলিস্কোপ দিয়ে পাখি গণনা করা হয়। সিএনআরএস’র সাইট অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, পাখি গণনাকারিরা তাদের জানিয়েছেন একটি মাত্র পেরিগ্রিন ফ্যালকনের দেখা মিলেছে। পাখিটি উড়ে এসে একটি ঝোপের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। পেরিগ্রিন ফ্যালকন একটি বিরল প্রজাতির পাখি। পাখিটি ঘণ্টায় ৩৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে উড়তে পারে। এমন দ্রুতগতির কারণে একে রকেট বার্ডও বলা হয়। তবে এই পাখি মাছের সঙ্গে অন্য পাখি ধরেও খেয়ে থাকে। বিশেষ করে হাঁস জাতীয় পাখি তাদের প্রিয়। আর বাইক্কা বিলে হাঁস জাতীয় প্রচুর পাখি রয়েছে।

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অতিথি পাখির কলরবে মুখর থাকে এই বিল। এবার বিলে আসা পাখির মধ্যে রয়েছে বিশ্বের দ্রুততম পাখি পেরিগ্রিন ফ্যালকন, সাদা বক, খয়রা কাস্তেচড়া, বেগুনিকালেম, পাতিসরালি, পানকৌড়ি, ঈগল, ধূসর বক, তিলা লালপা, ছোট ডুবুরি, রাজ সরালি, সরালি, বালিহাঁস, পাতি তিলি হাঁস, মরচে রং ভুতি হাঁস, গিরিয়া হাঁস, পিয়ং হাঁস, গয়ার বা সাপপাখি, পাতিকুট, পাতি পানমুরগি, কানিবক, ডাহুক, বিল বাটান, গেওয়ালা বাটান, কালাপাখ ঠেঙি, লাল লতিকা টিটি, মেটেমাথা-টিটি। সঙ্গে রয়েছে দেশি পাখিও। পাখিদের কিচির-মিচির ডাক, ছুটাছুটি, পানিতে ভেসে বেড়ানো, দল বেঁধে ডাঙায় বসে থাকা, আবার একসঙ্গে ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক ও সৌন্দর্য পিপাসুরা ছুটে আসছেন পাখির রাজ্য হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে।

বাইক্কা বিলে বেড়াতে আসা পর্যটক সিলেট বাইকিং কমিউনিটির সদস্য রামিম জামান জানান-শীত মৌসুমে বাইক্কা বিল দেখতে অপরূপ লাগে। অতিথি পাখিদের আগমনে বাইক্কা বিল অপরূপ সৌন্দর্যে সেজেছে। তাই আমরা বাইকাররা প্রতি শীত মৌসুমে বাইক্কা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসি।

বাইক্কা বিলে ঘুরতে আসা পর্যটক সায়মা, রাহিদ, তামি, তানজিয়া বলেন, বাইক্কা বিলের পরিবেশটা খুবই মনোরম। এখানে প্রচুর অতিথি পাখি দেখা যায়। কিছুটা সময় প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকার জন্য বাইক্কা বিলে আমাদের আসা। সত্যিই এখানে এলে যে কারও ভালো লাগবে। পাখির কলকাকলীতে বিলের চারপাশ মুখরিত। পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির ওড়াওড়ি দেখে খুবই ভালো লেগেছে। হাওরের নীল জলে পাখিদের জলকেলি আর নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে পর্যটকদের জন্য

এখানে তৈরি করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এ টাওয়ার থেকে শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বিলের পাখি কাছ থেকে দেখার সুব্যবস্থা রয়েছে। বাইক্কা বিলের পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের উপরে বসে সূর্যাস্ত দেখা যায়। সূর্যটা আস্তে আস্তে পানির মধ্যে ডুবে যায়।

সরজমিনে দেখা যায়, অনেক পর্যটক ওয়াচ টাওয়ারে বসে বাইনোকুলার ও টেলিস্কোপ দিয়ে খুব সহজেই হাইল হাওরের প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করছেন। কেউ কেউ নৌকায় চড়ে ঘুরেও বেড়াচ্ছেন হাওরে।

এশিয়ান ওয়াটার বার্ড সেনসাসের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এবছর বাইক্কা বিলে ৩৮ প্রজাতির ৭৮৭০টি জলচর পাখি এসেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ৭৫০টি মেটেমাথা টিটি, ৬৩৯টি কাস্তেচরা, ১০০টি রঙিলা কাস্তেচরা এবং কালামাথা কাস্তেচরা। ২০২৪ সালে ৩৩ প্রজাতির ৪৬১৫ জলচর পাখি এবং ২০২৩ সালে এসেছিল ৪০ প্রজাতির ৬১৪১ পাখির আগমন হয়েছে।