Home আন্তর্জাতিক কতিপয় অতি-ধনী “অলিগার্ক” শিকড় গাড়ছে: বাইডেন

কতিপয় অতি-ধনী “অলিগার্ক” শিকড় গাড়ছে: বাইডেন

জো বাইডেন। ছবি সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর বিদায়ী ভাষণে দেশে কতিপয় অতি-ধনী “অলিগার্ক” শিকড় গাড়ছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, একটি “প্রযুক্তি-শিল্প কমপ্লেক্স” আমেরিকানদের অধিকার এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ লঙ্ঘন করছে।

ওভাল অফিস থেকে ভাষণ দেয়ার সময় বাইডেন, যিনি সোমবার প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন, কতিপয় মানুষের হাতে সম্পদ এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেন।

“আজ, আমেরিকায় একটি ব্যাপক সম্পদ, ক্ষমতা এবং প্রভাবের অধিকারী অলিগার্কি আবির্ভূত হচ্ছে, যেটা আক্ষরিক অর্থে আমাদের গোটা গণতন্ত্র, আমাদের মৌলিক অধিকার, আমাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে ফেলছে,” বাইডেন বলেন।

তিনি “কতিপয় অতি-ধনী মানুষের হাতে ক্ষমতার বিপজ্জনক কেন্দ্রিকরণ”-এর দিকে এবং “তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার যদি না থামানো হয় তাহলে তার বিপজ্জনক পরিণতির দিকে” দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অতীতে সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্স সম্পর্কে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ডয়াইট আইজেনহাওারের হুঁশিয়ারির কথা স্মরণ করে বাইডেন যোগ দেন, “আমি সমানভাবে প্রযুক্তি-শিল্প কমপ্লেক্সের সম্ভাব্য উত্থান সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, যেটা আমাদের দেশের জন্য প্রকৃত হুমকি হতে পারে।”

ইলন মাস্ক, জাকারবার্গ আর বেযস

বাইডেনের হুঁশিয়ারি আসলো এমন সময়ে যখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী কিছু ব্যক্তি এবং প্রযুক্তি শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কর্ণধার সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্পের পক্ষে চলে গেছে, বিশেষ করে নভেম্বর নির্বাচনে তাঁর বিজয়ের পর।

ধনকুবের ইলন মাস্ক ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তার জন্য ১০ কোটি ডলার ব্যায় করেন। মেটার মার্ক জাকারবার্গ আর অ্যামাজনের জেফ বেযস-এর মত অন্যান্য কর্মকর্তা ট্রাম্পের অভিষেক ভাণ্ডারে অনুদান দিয়েছেন এবং ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের ব্যক্তিগত ক্লাবে গিয়ে প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত রিপাবলিকানের সাথে দেখা করেছেন।

ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট-এর বিচার থেকে দায়মুক্তির অবসান ঘটানোর জন্য বাইডেন সংবিধান সংশোধনেরও ডাক দেন। গত বছর সুপ্রিম কোর্ট ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পর ফলাফল পাল্টে দেয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারি অভিযোগ থেকে ট্রাম্পকে দায়মুক্তি দেয়।

ওভাল অফিস থেকে দেয়া ভাষণ ছিল অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্র নীতিতে তাঁর লেগাসি পাকাপোক্ত করার লক্ষ্যে দেয়া কয়েকটি বক্তব্যের সর্বশেষ। দিনের আগে, তিনি ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাগত জানান, যার ফলে মধ্যেপ্রাচ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা রক্তপাত বন্ধ হতে পারে।

“আমরা সবাই মিলে যা করেছি, তার প্রভাব বুঝতে সময় লাগবে। কিন্তু বীজ রোপণ করা হয়েছে এবং সেগুলো বড় হবে এবং দশকের পর দশক ধরে বিকশিত হবে,” বাইডেন বলেন।

টেলিভিশন বিতর্কে হোঁচট

বাইডেন যেভাবে আশা করেছিলেন, তিনি সেভাবে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করছেন না। তিনি তাঁর বয়স সম্পর্কে ভোটারদের উদ্বেগ উপেক্ষা করে পুনঃনির্বাচনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করেছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে তাঁর বয়স হতো ৮৬।

রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে টেলিভিশন বিতর্কে হোঁচট খাওয়ার পর বাইডেন নিজ দলের চাপে নির্বাচনী দৌড় থেকে সড়ে দাঁড়ান। তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে প্রার্থী হিসেবে অনুমোদন করেন, যিনি নভেম্বরে ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন।

এখন বাইডেন এমন একজনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, যাকে তিনি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বুধবার রাতের ভাষণ শুধু তাঁর প্রেসিডেন্সি নয়, রাজনীতিতে পাঁচ দশকের সমাপ্তি টানলো। তিনি এক সময়ে দেশের সর্বকনিষ্ঠ সেনেটর ছিলেন, যখন ১৯৭২ সালে ৩০ বছর বয়সে ডেলাওয়ের রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন।

বাইডেন ১৯৮৮ এবং ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেন, এবং পরে বারাক ওবামা তাঁকে তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট রানিং মেট হিসেবে বেছে নেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই মেয়াদ দায়িত্ব পালন করার পর ধারণা করা হয়েছিল তিনি অবসর নিয়েছেন। কিন্তু ২০২০ সালে তিনি অপ্রত্যাশিত ভাবে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হিসেবে রাজনীতির মঞ্চে ফিরে আসেন, এবং ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে বিতাড়িত করেন।

সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা