পাইকারিতে প্রতিটি ৬০/৭০ টাকা, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৫০/২০০ টাকা
নরসিংদী থেকে সাইফুল ইসলাম রুদ্র: রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের চান্দেরকান্দির বিস্তীর্ণ চর জুড়ে যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই কেবল দিগন্ত জোড়া সবুজ-হলুদ সংমিশ্রণে চৈত্রের বাহারী মৌসুমি ফল বাঙ্গি চাষের সমারোহ ।
বাঙ্গির বাম্পার ফলন হওয়ায় ভালো দামে বিক্রি করতে পারায় কৃষকদের মুখে বইছে হাসির ঝলক। কম পুঁজিতে ভালো মুনাফা ও প্রচুর ফলন পাওয়ায় প্রতি বছরই এ এলাকার মানুষ বাঙ্গি চাষের প্রতি ঝুঁকছেন। বাঙ্গির পাইকারী দর প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা যা খুচরা বাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
বাঙ্গি গ্রীষ্মকালীন ফল। তীব্র গরমে শরীরকে ঠাা রাখতে বাঙ্গি তরমুজের পরের তালিকাতেই ধরা যায়। তীব্র গরমে রমজান মাসে সারাদিন রোজা থাকার পর শরীরের ক্লান্তির ছাপ মুছতে বেশিরভাগই বাঙালির ইফতারেই বাঙ্গির চাহিদা থাকে।
সরজমিনে দেখা যায়, চান্দেরকান্দি এলাকার বেশিরভাগই মানুষই মৌসুমি এই কৃষিপণ্য বাঙ্গির চাষ করে থাকেন। বাঙ্গিগুলো বাজারজাতকরণের জন্য প্রতিদিনই কৃষকদের কাছে নরসিংদী জেলাসহ পাশের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এটি অন্যান্য সবজি বা ফসলের চেয়ে চাষের তুলনায় আয় বেশি, তাই অধিকাংশ চাষিরাই বাঙ্গি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। গতবারের তুলনায় এবার এখনো পর্যন্ত বাঙ্গির ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। পাইকারি দরে বাঙ্গিগুলো প্রতি ১০০ পিস ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা প্রতি পিস পাইকারি মূল্যে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
স্থানীয় কৃষক সুজন মিয়া জানান, তিনি গত টানা ৪ বছর যাবত বাঙ্গির চাষ করে আসছেন। এবার বাঙ্গি চাষে তার ব্যয় হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার মূল্যে তার জমির সকল ফসল বিক্রি করতে পারলে আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা মতো লাভবান হতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, গেলো বছর একই জমিতে তিনি ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় করে বাঙ্গির চাষ করে তা ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এতে তার ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়। এবার তিনি গতবারের বাজার মূল্য থেকে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী।
পাইকারি ক্রেতা মোরশেদ মিয়া জানান, আমরা এবছর প্রতি ১০০ পিস বাঙ্গি ৭ হাজার টাকায় কৃষকের জমি থেকে ক্রয় করেছি। জমি থেকে ক্রয় করার পর এগুলো বাজারে নেওয়ার আগে মজুরি ও গাড়ি ভাড়া সহ বিভিন্ন খরচ মিলিয়ে প্রতি পিসে সর্ব্বোচ ৫ টাকা লাভ থাকলেই বিক্রি করে দিই।
রায়পুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৭শ মেট্রিক টন বাঙ্গি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলটিতে শর্করা, ভিটামিন ও মিনারেলস থাকায় বাজারেও বাঙ্গির ভালো চাহিদা রয়েছে। এছাড়া কম সুগার থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
রায়পুরা উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে এখনো পর্যন্ত বাঙ্গির জমজমাট হাট না বসলেও কিছু কিছু বাঙ্গি বিক্রেতা চোখে পড়ছে। এগুলো তারা খুচরা দেড়’শ থেকে দুই’শ টাকা মূল্যে বিক্রি করছেন।