এনবিআর-এর সাথে ঢাকা চেম্বারের প্রাক বাজেট আলোচনা
ঢাকা: ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আগামী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি অভিন্ন একক-অঙ্কের ভ্যাট হার এবং নামমাত্র এক শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে।
ডিসিসিআই বলেছে, এই ধরনের হার সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনবে, ব্যবসা করার ব্যয় হ্রাস করবে এবং উৎপাদন খাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ডিসিসিআই আরও বলেছে, বর্তমানে ভ্যাট হার সর্বত্র ১৫ শতাংশ। তবে এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ, ৭.৫ .শতাংশ এবং ৫ শতাংশের মতো বিভিন্ন স্ল্যাব বিভক্ত করা হয়েছে যা আসলে ব্যবসায়ীদের জন্য অসুবিধার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে বিরোধের কারণ হয়েছে। এছাড়াও, ইনপুট ট্যাক্স রিবেট সুবিধা না পাওয়ার কারণে অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত করের বোঝা বহন করছেন।
ডিসিসিআই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,এনবিআর ভবনে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের কাছে চেম্বারের বাজেট (২০২৫-২৬) প্রস্তাব পেশ করার সময় ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ এই প্রস্তাবগুলো জমা দেন।
তাসকিন আহমেদ মোট ৪২টি বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন, যার মধ্যে কর জাল সম্প্রসারণ ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, করের হার হ্রাস, ব্যবসা-বান্ধব কর নীতি প্রবর্তন ও রাজস্ব ব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণ, ভ্যাট ব্যবস্থাপনা সংস্কার, স্থানীয় শিল্প ও উৎপাদন খাত রক্ষা এবং আমদানি শুল্ক, শুল্ক ব্যবস্থা ও ব্যক্তিদের জন্য কর কাঠামো সহজীকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ আগামী অর্থবছর থেকে সকল করদাতাকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন প্রক্রিয়ার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য এনবিআরকে অভিনন্দন জানান।
তিনি উল্লেখ করেন, এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এক কোটি এক লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি টিআইএনধারী রয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৩৭ লাখ টিআইএনধারী তাদের রিটার্ন জমা দিয়েছে।
ডিসিসিআই সভাপতি করদাতা বৃদ্ধি এবং কর জাল সম্প্রসারণের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।
তাসকিন আহমেদ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইনে তাদের কর রিটার্ন দাখিল করতে সহায়তা করার জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় কর রিটার্ন ব্যবস্থা চালু করার আহ্বান জানান। তিনি বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি ও জনসাধারণের ওপর এর বোঝা বিবেচনা করে, ব্যক্তিদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করার অনুরোধ করেন।
এছাড়াও, ডিসিসিআই সভাপতি বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর ধীরে ধীরে হ্রাস এবং আমদানি পর্যায়ে উৎপাদকদের জন্য বিদ্যমান অগ্রিম কর ধীরে ধীরে বাতিল করার প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, শুল্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত শুল্ক মূল্য ও বাজার মূল্যের মধ্যে পার্থক্যের কারণে ব্যবসায়ীদের প্রকৃত আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি শুল্ক দিতে হচ্ছে, যা ব্যবসায়িক ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি প্রক্রিয়াকে জটিল ও ব্যয়বহুল করে তুলছে।
এই প্রসঙ্গে, তিনি শুল্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত শুল্ক মূল্যের পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, এনবিআর বাণিজ্য-সম্পর্কিত রাজস্ব নীতিমালার ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে সংস্কারের মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে বদ্ধপরিকর।
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব বোর্ড কর ব্যয় মোকাবেলার চেষ্টা করবে। তিনি আরও বলেন, ‘একাংশ মানুষ কর দিচ্ছে এবং অন্যরা দিচ্ছে না, এটি গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি এক লাখ ৪০ হাজার। গত দশ বছরে টিআইএনধারীর সংখ্যা এক কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে করদাতার সংখ্যা সেই তুলনায় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বৃদ্ধি পায়নি, যা হতাশাজনক।
রহমান আরও বলেন, এনবিআর শিগগিরই কর্পোরেট ট্যাক্স রিটার্ন সিস্টেম সম্পূর্ণ অনলাইনে আনার জন্য কাজ করছে এবং এটার করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান অভিমত প্রকাশ করেন, দীর্ঘমেয়াদে কর্পোরেট সংস্কৃতির অধীনে ব্যক্তি উদ্যোগগুলোকে ধীরে ধীরে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার পরিবেশ তৈরি করার জন্য কর্পোরেট করের হার হ্রাস করা প্রয়োজন।
ভিন্ন ভিন্ন ভ্যাট হার সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারলে বিভিন্ন স্ল্যাব বজায় রাখার পরিবর্তে সরকার ভ্যাট হার একক অঙ্কে আনতে আগ্রহী।
তিনি আরও বলেন, তবে এজন্য ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা অপরিহার্য।
তিনি প্রস্তাব করেন যে এ লক্ষ্যে এনবিআর স্থানীয় আইটি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সমন্বিত সফ্টওয়্যার তৈরি করতে পারে যা ব্যবহার করে সকলেই অনলাইনে সহজে অ্যাকাউন্টিং, অডিট এবং ভ্যাট ও আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনও ঝামেলা ছাড়াই সম্পন্ন করতে পারে।
এই প্রস্তাবিত সফটওয়্যারটি ওয়েব-ভিত্তিক মাধ্যমে তৈরি করা যেতে পারে এবং এই সিস্টেমের মাধ্যমে এনবিআর টিআইএন ও বিআইএনধারীদের ডাটাবেজেও অ্যাক্সেস পাবে।
রহমান আরও বলেন, এনবিআর আগামী অর্থবছরে কর ছাড় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে উদার হওয়ার চেষ্টা করবে।
ডিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাজীব এইচ চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি মো. সালেম সুলাইমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
-বাসস