বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
ভারতের এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকি (৬৬)কে লক্ষ্য করে বান্দ্রার রাস্তায় ছুটে এল পর পর বুলেট। সূত্রের দাবি, তিনটি গুলি লাগে প্রাক্তন কংগ্রেস নেতার শরীরে। তাঁর বুকে এবং পেটে গুলি লেগেছিল। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও প্রাণ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন তিনবারের প্রাক্তন বিধায়ক, প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকিকে।
ঘটনার নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নাকি অন্য কোনও ব্যবসায়িক কারণ রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। ইতিমধ্যে দুজনকে আটক করেছে মুম্বই পুলিশ। ধৃতদের জেরা করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। সামনেই বিধানসভা ভোট। ফলে খুনের নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রায় পঞ্চাশ বছর তিনি কংগ্রেসের সাথে ছিলেন। প্রবীণ এই নেতা গত ফেব্রুয়ারিতে দল বদলে এনসিপি নেতা অজিত পওয়ার এর দলে নাম লেখান। সামনেই মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোট। তার আগে এই খুনের ঘটনায় এলাকার রাজনৈতিক মহলে শোরগোল ছড়িয়েছে। বর্তমানে তাঁর ছেলে জিসান বান্দ্রা পূর্বের বিধায়ক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পূর্ব বান্দ্রায় বাবা সিদ্দিকির ছেলে জিশানের অফিস রয়েছে। এদিন সেই অফিস থেকে বাইরে এসে গাড়়িতে চাপার সময় বাবা সিদ্দিকিকে লক্ষ্য করে পর পর তিন রাউন্ড গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। তাঁকে দ্রুত লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সিদ্দিকি খুনে মুম্বইয়ের গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের যোগ রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পর অনুমান করছে পুলিশ। যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের নাম কর্নেইল সিংহ এবং ধরমরাজ কাশ্যপ। এক জন উত্তরপ্রদেশ এবং এক জন হরিয়ানার বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে দু’জনই স্বীকার করে নিয়েছেন, তাঁরা বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য।
শনিবার রাতে বান্দ্রা পূর্ব এলাকায় ছিলেন বর্ষীয়ান এনসিপি নেতা। তাঁর পুত্র তথা বিধায়ক জিশান সিদ্দিকির দফতরের বাইরে দাঁড়িয়ে দশেরা উপলক্ষে তিনি বাজি ফাটাচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁকে লক্ষ্য করে আচমকা গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। ৯.৯ এমএম পিস্তল থেকে ছোড়া হয়েছিল গুলি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাড়ি করে তিন জন দুষ্কৃতী এসেছিল। তাঁদের প্রত্যেকের মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা ছিল। মোট তিন রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছিল। সিদ্দিকির বুকে এবং পেটে গুলি লাগে। একটি গুলি আটকে যায় বুকে। ঘটনাস্থলেই তিনি পড়ে যান। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। চিকিৎসকেরা জানান, শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত বেরিয়ে গিয়েছিল সিদ্দিকির। সেই কারণে বুলেট বার করা গেলেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। রাত ১১.২৭ মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। তাঁর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
দু’জনকে গ্রেফতার করলেও তৃতীয় দুষ্কৃতীকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। সে ঘটনাস্থল থেকেই পালিয়ে গিয়েছিল। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে জানিয়েছেন, যাঁরা এই কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। শনিবার রাতের এই ঘটনার পর মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত রবিবারের সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করে দিয়েছেন। তিনি রাতে মুম্বইতে ছিলেন না। দ্রুত সেখানে পৌঁছনোর কথা রয়েছে তাঁর।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতেই কংগ্রেসের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ত্যাগ করেন সিদ্দিকি। যোগ দেন অজিত শিবিরে। তবে তার আগে প্রায় পাঁচ দশক কংগ্রেসের সঙ্গে ছিলেন সিদ্দিকি। সত্তরের দশকে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন থেকে মূল স্রোতের রাজনীতিতে এসেছিলেন সিদ্দিকি। ১৯৯৯ সালে প্রথম বিধানসভা ভোটে জয়ী হয়েছিলেন বান্দ্রা এলাকার এই নেতা। ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিন বার ভোটে জিতলেও ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটে বান্দ্রা পশ্চিম কেন্দ্র থেকে তিনি হেরে গিয়েছিলেন। বলিউডের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ নিয়ে চর্চা রয়েছে মুম্বইয়ে। বিভিন্ন সময়ে তাঁর দেওয়া পার্টিতে বলি তারকাদের দেখা গিয়েছে। ২০১৩ সালে তাঁর পার্টিতেই ‘মানভঞ্জন’ হয় শাহরুখ খান এবং সলমন খানের। দুই খানকে দু’পাশে নিয়ে তোলা তাঁর সেই ছবি স্মরণীয় হয়ে আছে।