বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
“বায়োস্কোপের নেশা আমায় ছাড়ে না, ডাইনে তোমার চাচার বাড়ি, বায়ের দিকে পুকুর ঘাট , সেই ভাবনায় বয়স আমার বাড়ে না…।“ এই বায়োস্কোপের নেশা সত্যি বয়সকে এক জায়গায় থামিয়ে দিতে পারে।
চৌকো একটি টিনের বাক্সে গোলাকৃতি ৪ থেকে ৬টি কাচের জানালা। বাক্সের ভেতরে একদিকে একটি দণ্ডে ধারাবাহিকভাবে অনেক রঙিন ছবি বসানো কাগজ রোল করা থাকত। ছবি বসানো কাগজের একটি দিক অন্য প্রান্তের দণ্ডে লাগানো থাকত। এক প্রান্তের দণ্ড ঘোরালে ছবিগুলো ধারাবাহিকভাবে চলে আসত। আতশকাচের কারণে ছবিগুলো বড় আকারে দেখা যেত। এটাই ‘বায়োস্কোপ‘।
বাইরে থেকে বায়োস্কোপের স্বচ্ছ কাচের ওপর চোখ রেখে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যেত দর্শকরা । শুধু ছোটরা নয় বয়স্করাও এই বায়োস্কোপের দর্শক ছিলেন। তখনও রেডিও, টেলিভিশন আসেনি। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বিনোদন বলতে এই বায়োস্কোপ। তাকে পেশা করে এক শ্রেণীর মানুষ সংসার চালাতেন। তাঁরা হলেন বায়োস্কোপওয়ালা । ইনি ক্লাউনের মতো পোশাক পরে গানের ছন্দে ছন্দে বায়োস্কোপের ছবি দেখাতেন। কখনও আবার মাথায় গামছা, হাতে ডুগডুগি।
বায়োস্কোপওয়ালারা সাধারণত স্কুলের কাছে, জনবহুল এলাকায়, রাস্তার ধারে বা মেলায়, বায়োস্কোপের বাক্স স্ট্যান্ডে বসিয়ে ডুগডুগি বাজিয়ে ছোটদের আকৃষ্ট করতেন। ডুগডুগির আওয়াজে ছুটে আসত বাচ্চারা। আবার কখনও কোনও বাড়ির উঠোনে বায়োস্কোপের আসর বসত। এক আনা বা দু‘আনা পয়সায় বায়োস্কোপ দেখার সুযোগ যেমন মিলত তেমনই চাল, ডাল, আলু, সবজি দিয়েও দেখা যেত বায়োস্কোপের ছবি।
সাতের দশকের শেষ দিকেও, গ্রাম শহর সর্বত্র, বায়স্কোপওয়ালাদের দেখা মিলত। বর্তমানে, বায়োস্কোপ কী, সেটা অনেকেই জানেন না। বায়োস্কোপের নাম শুনেছেন গানে, নয়তো পড়েছেন বইয়ের পাতায়। আধুনিক যুগে সেই বায়োস্কোপও নেই আর বায়োস্কোপওয়ালাও নেই। টিভি, সিনেমা, অন্তর্জাল, স্মার্ট ফোন, ইউটিউব সহ নানা বিনোদন মানুষের হাতে আসায় বায়োস্কোপসহ বায়োস্কোপওয়ালা এখন কেবলই ইতিহাস।