Home পর্যটন বিয়ে ছাড়া সহবাসে জেল-জরিমানা ইন্দোনেশিয়ায়, চিন্তিত পর্যটকরা

বিয়ে ছাড়া সহবাসে জেল-জরিমানা ইন্দোনেশিয়ায়, চিন্তিত পর্যটকরা

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

সস্তায় বিদেশভ্রমণ বললেই বেশিরভাগেরই মাথায় আসে ইন্দোনেশিয়ার নাম। বালি তো পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলির মধ্যে একটি। তবে সম্প্রতি সেদেশের অপরাধ আইনে পরিবর্তন এসেছিল। নয়া আইন মোতাবেক এখন সেদেশে বিবাহহির্ভূত যৌনতা দণ্ডনীয় অপরাধ। বিয়ে ছাড়া সহবাস করলেও জেল, জরিমানা দুই হতে পারে। শুনেই মাথায় হাত পড়েছিল পর্যটকদের। তবে কি বিদেশ বিভুঁইয়ে গিয়ে জেলে যেতে হতে পারে? সেই নিয়ে এবার বিদেশী পর্যটকদের আশ্বস্ত করল বালি প্রশাসন। বালির গভর্নর জানিয়েছেন, পর্যটকদের জন্য এই আইন প্রযোজ্য হবে না । ফলে তাঁরা নির্ভয়ে ঘুরতে আসতে পারেন ইন্দোনেশিয়ায়।

গত ৬ ডিসেম্বর থেকে নতুন অপরাধ আইন কার্যকর হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়। সেই নয়া আইন অনুযায়ী বিবাহবহির্ভূত যৌনতায় লিপ্ত হলে, দেশের প্রধানের অবমাননা করলে, কিংবা সরকারবিরোধী অবস্থান নিলে ১ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। বিয়ের আগে সহবাস করলে আর্থিক জরিমানা, কিংবা ৬ মাস পর্যন্ত জেল, অথবা দুইই হতে পারে। এরপরেই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। তাঁরা ভাবছিলেন, এবার কি তাহলে বালি ঘুরতে গেলে হাজতবাস করতে হতে পারে? তাঁদের নিশ্চিন্ত করেছেন বালির গভর্নর ওয়ান কোস্টার।

তিনি জানিয়েছেন, নয়া আইন শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়ার নাগরিকদের জন্যই প্রযোজ্য। বিদেশি পর্যটকদের এই আইনে গ্রেফতার হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। গত সোমবার একটি বিবৃতি দিয়ে কোস্টার জানিয়েছেন, পর্যটকদের ক্ষেত্রে গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করা হবে না। তাঁরা আদৌ বিবাহিত কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে না। ‘যে বিদেশিররা বালিতে থাকেন কিংবা ঘুরতে আসবেন, তাঁদের ইন্দোনেশিয়ার নতুন অপরাধ আইন নিয়ে আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। চেক-ইনের সময় হোটেল, ভিলা, গেস্ট হাউজ, লজ, স্পা ইত্যাদির কোথাওই পর্যটকরা আদৌ বিবাহিত কিনা তা জানতে কোনওরকম পরীক্ষা কিংবা তথ্য চাওয়া হবে না।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, নয়া অপরাধ আইন পর্যটকদের জন্য আরও সুবিধাজনক এবং কম কঠোর করেছে ইন্দোনেশিয়ার পার্লামেন্ট। বিদেশি পর্যটকদের তিনি এই কারণে দুশ্চিন্তা না করে ইন্দোনেশিয়ায় আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বছর দশেক আগে থেকেই অপরাধ আইনে একাধিক বদল আনার চেষ্টা করছিল ইন্দোনেশিয়া সরকার। ২০১৯ সালেই এই আইনের একটি খসড়া প্রস্তাব পাশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশব্যাপী প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের মুখে সাময়িকভাবে পিছু হটেছিল সরকার। দেশের কয়েকটি ইসলামিক গোষ্ঠী এই আইনকে সমর্থন করলেও প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু তারপরেও সামান্য বদল করার পর ফের পাশ হতে চলেছে এই আইন।

নয়া বদলগুলির বিষয়ে মানুষকে অবহিত করতে দেশব্যাপী প্রচার চালিয়ে জনসমর্থন নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। একটি বদল আনা হয়েছে, যেখানে ১০ বছর ভাল ব্যবহার করলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে। যদিও, ধর্ষণ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে গর্ভপাতকে ‘অপরাধ’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে নতুন আইনে। এছাড়াও ‘কালো জাদু’ চর্চা করলেও নতুন আইনে হাজতবাস বাঁধা। রাষ্ট্রপতির অবমাননা করলে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।

ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। দেশটিতে নারী, এলজিবিটিকিউ গোষ্ঠী, এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক অজস্র আইন এবং বিধিনিষেধ রয়েছে। তারপরেও নতুন এই আইন বলবৎ হলে তা ইন্দোনেশিয়ার গণতন্ত্রের অবনতি ঘটাবে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা ।

যদিও প্রতিবাদীদের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন দেশটির ডেপুটি আইনমন্ত্রী এডওয়ার্ড ওমর শরীফ হায়ারিয়েজ। তিনি জানিয়েছেন, নতুন নিয়ম জাতীয় আইন মেনে তৈরি করা হয়েছে, এবং তাতে গণতন্ত্রের মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকবে। ‘ইন্দোনেশিয়ার মর্যাদা এবং বোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অপরাধ আইন আনতে পেরে আমরা গর্বিত,’ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি।