বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: লকডাউনের পর নগরীর বায়জিদ বোস্তামি মাজারের দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেড়েছে। করোনার কারণে মাজারে দর্শনার্থীদের ভিড় কমছিল। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা থেকে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসছেন অনেকে। অনেকে আসছেন কাছিম বা গজারি দেখতে।
বায়েজিদ বোস্তামি মাজারের পাদদেশে একটি সুবিশাল দীঘি অবস্থিত। এর বাসিন্দা হিসাবে বোস্তামির কাছিম ও গজার মাছ সুবিখ্যাত। আঞ্চলিকভাবে এদের মাজারি ও গজারি বলে আখ্যায়িত করা হয়। বোস্তামির কাছিম আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি অত্যন্ত বিরল এবং চরমভাবে বিপন্নপ্রায় প্রজাতি। বর্তমানে বায়েজিদ বোস্তামির মাজার প্রাঙ্গন ব্যতীত বিশ্বের আর কোথাও এদের দেখা মিলে না।
মাজার প্রতিষ্ঠাকালে এই অঞ্চলে প্রচুর দুষ্ট জ্বীন এবং পাপিষ্ঠ আত্মার পদচারণা ছিলো। বায়েজিদ বোস্তামি এই অঞ্চল ভ্রমণকালে এইসব দুষ্ট আত্মাকে শাস্তিস্বরূপ কাছিমে পরিণত করেন এবং আজীবন পুকুরে বসবাসের দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গন সংলগ্ন এই দীঘিতে দেড়শত থেকে সাড়ে তিনশত কাছিমের আবাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
মাজারের মতোয়াল্লি খোরশেদ আলম বিজনেসটুডে২৪ কে জানান , প্রায় ৫০০ টির মতো কাছিম আছে ,কাছিমের বাচ্চা আছে ২১০টি। করোনার কারণে দর্শনার্থীদের ভিড় কমে গেলেও বর্তমানে আগের মতো ভিড় । অনেকে আসে মনোবাসনা পূরণের নিয়ত করে, আবার কেউ আসে ঘুরতে।
এলাকার জনশ্রুতি অনুযায়ী, বায়েজিদ বোস্তামির চট্টগ্রামে আগমনের ইতিহাস শুনতে পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম একটি সমুদ্রবন্দর এবং আরবরা তাদের বাণিজ্য জাহাজ নিয়ে আট শতকের দিকেও এ বন্দরে আসত। অতএব এটা অসম্ভব নয় যে, ঐ সুফি-সাধক নয় শতকে এ স্থানে এসেছিলেন। চট্টগ্রামে অবস্থানের পর প্রস্থানকালে ভক্তকূল তাকে থেকে যাবার অনুরোধ করলে উনি তাদের ভালোবাসা ও ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেঁটে কয়েক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ে যেতে দেন এবং ঐ স্থানে উনার নামে মাজার গড়ে তুলবার কথা বলে যান। এই জনশ্রুতির স্বপক্ষে অষ্টাদশ শতাব্দীর চট্টগ্রামের কিছু কবির কবিতার উল্লেখ করা হয় যেখানে শাহ সুলতান নামক একজন মনীষির নাম বর্ণিত আছে।
পরিবার নিয়ে আসা দর্শনার্থী বাপ্পী খান বিজনেসটুডে২৪ কে বলেন, নোয়াখালী থেকে এসেছি। নিয়ত ছিলো। আগে আসার কথা থাকলেও লকডাউনের কারণে আসতে পারেনি। জিয়ারতও হবে গজারি মাছগুলোও দেখা যাবে।
কাছিম বা গজারির দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা আসাদ শিকদার (কাঠি কাকা) বিজনেসটুডে২৪ কে জানান, ১৯৭৯ সাল থেকে প্রায় সময় আমি বায়েজিদ বোস্তামিতে আসতাম এবং কাছিমদের খাবার দিতাম। ২০১৬ সালে আমার চাকরি এখানে স্থায়ী হয়। এরপর থেকে কাছিম বা গজারির দেখাশোনা করে থাকি আমি। আষাঢ় -শ্রাবণ মাসে কাছিম বা গজারির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে।
জানা গেছে, কাছিম বা গজারিদের সনাতন পদ্ধতিতে ডিম দেওয়ার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলেও বর্তমানে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহায়তায় আধুনিক পদ্ধতি এবং তাদের পরামর্শে কাছিম বা গজারির ডিম উৎপাদন, বাচ্চাদের লালন-পালনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।
আসাদ শিকদার (কাঠি কাকা) বলেন, কাছিমের বাচ্চাদের নির্দিষ্ট ড্রামে রাখা হয়। এরপর দুপুরের দিকে বালির ছোট পুকুরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। আমাদের এখানে কাছিমের যে বাচ্চাগুলো রয়েছে এগুলোর বয়স তিন মাস। বিকেলের দিকে দেখা যায় কাক এবং অন্যান্য পোকা-মাকড়ের ভয়ে ৪০০ ফুট বালির মধ্যে লুকিয়ে যায় তারা। তাই তাদের যত্ন নিতে হয়। কাছিমের বাচ্চার মূল খাদ্য উপাদান হলো চিঁংড়ি মাছের গুঁড়ো। তবে তিন-চারমাস বয়স হলে এদের গরুর মাংসের গুঁড়ো,মুরগীর মাংসের গুঁড়ো খাওয়াতে হয়। জন্মের ৬ মাস পর পুকুরে বাচ্চাগুলোকে ছাড়া হয়।
সমাধি পাহাড়ের পাদদেশে একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মোঘল রীতির আয়তাকার মসজিদ রয়েছে। স্থাপত্যশৈলী থেকে ধারণা করা হয় মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর আমলে মসজিদটি নির্মিত।