যশোরে ‘খুলনা বিভাগের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, যশোর: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন,দেশের সব চেম্বার থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের রেখে চেম্বারের গণতন্ত্রায়ণ হবে না।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) যশোরে অনুষ্ঠিত ‘খুলনা বিভাগের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে চেম্বারসহ সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে। আমলাতন্ত্র বা সরকার তখন আর অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কর আদায়নির্ভর অর্থনীতি কখনো নির্ভরশীল হতে পারে না। অর্থনীতি নির্ভরশীল হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমে। ব্যবসায়ের যত প্রসার ঘটবে কর তত বেশি জমা হবে। এজন্য অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানোর দরকার পড়বে না। কিন্তু, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে সুবিধাবাদীদের রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্তির মধ্যদিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এর পুনরুদ্ধারে গণতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করতে হবে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপিকে সংস্কার শেখাতে আসবেন না। দেড় বছর আগে যে ৩১ দফা দিয়েছে বিএনপি তার মধ্যে সংস্কারের সব কিছু রয়েছে। তারও ছয় বছর আগে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সংস্কারের কথা বলেছেন। সংস্কার হতে হবে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে তাদের প্রস্তাবনাগুলো জাতীয় সংসদে আলোচনা করবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি সরকার।
খুলনা বিভাগের দশ জেলার ব্যবসায়ী নেতাদের অংশগ্রহণে স্থানীয় একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত এই সভার আয়োজন করে যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। এতে সভাপতিত্ব করেন যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খান। স্বাগত বক্তব্য দেন যশোর চেম্বারের সম্পাদক তানভীরুল ইসলাম সোহান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাগুরা চেম্বারের সভাপতি সালিমুল হক কামাল, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মাহমুদুল খান বাবু, খুলনা চেম্বারের পরিচালক হাফিজুল ইসলাম চন্দন, কুষ্টিয়া চেম্বারের পরিচালক খন্দকার জায়েদুল হক, সাতক্ষীরা চেম্বারের সভাপতি নাসির ফারুক খান মিঠু, বাগেরহাট চেম্বারের শেখ মঈনুদ্দিন আহমেদ ও শেখ ফরিদুল ইসলাম, মেহেরপুর চেম্বারের পরিচালক একেএম আনোয়ারুল হক, ঝিনাইদহ চেম্বারের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের শরিফুজ্জামান শরিফ, নড়াইল চেম্বারের মনিরুল ইসলাম, যশোর চেম্বারের সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল, নোয়াপাড়া সার ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি শাহজালাল হোসেন, ব্যবসায়ী চিন্ময় সাহা এবং আক্তারুজ্জামান তুহিন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতীয় সরকার গঠন বিএনপির অঙ্গীকার। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২০০ আসন পেয়েও বিএনপি যদি সরকার গঠন করে তাহলেও জাতীয় সরকার গঠিত হবে। সবার সহযোগিতায় আগামীর বাংলাদেশে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে বিএনপি।
তিনি বর্ধিত ভ্যাট ও কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের লুটপাটের বাজেট ছুড়ে ফেলে দেন। যতটুকু প্রয়োজন জনগণের স্বার্থে ততটুকু নিয়ে অন্তর্বর্তী বাজেট প্রণয়ন করুন।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা বলেন, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে। অনেক মানুষ দুবেলা দু-মুঠো ঠিকমতো খেতেও পারে না। বর্ধিত ভ্যাট ও করের কারণে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে। যদি একবার তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায় তাহলে তাদের সেখান থেকে উঠিয়ে আনতে অনেক মূল্য দিতে হতে পারে। তাও সম্ভব হবে কি না সন্দেহ।
এ প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান দেশের প্রতিটি নাগরিকের অর্থনীতিতে সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেছিলেন। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিগত ১৫ বছর যেসব ব্যবসায়ী ফ্যাসিবাদের হামলা, মামলা, নির্যাতনের শিকার হয়ে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে বিশেষভাবে পদক্ষেপ নেবে।
খুলনা বিভাগের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অঞ্চলভিত্তিক অর্থনৈতিক সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। বলেন, এক অঞ্চলের অর্থনীতি দেশের অন্য অঞ্চলের অর্থনীতির সাথে মিলবে না। প্রতিটি অঞ্চলকেই তার নিজস্ব অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।