Home Second Lead শিপিং ভোট : ২৪ পদে ৫১ প্রার্থী, সিলেকশন না ইলেকশন?

শিপিং ভোট : ২৪ পদে ৫১ প্রার্থী, সিলেকশন না ইলেকশন?

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন (বিএসএএ)এর  ইতিহাসে সবচেয়ে জমজমাট ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়েছিল ২০২১ সালের  ৪ এপ্রিল। চলমান মেয়াদে যারা  ক্ষমতাসীন তাঁরা জয়ী হয়েছিলেন এই নির্বাচনে। কিন্তু পরবর্তী মেয়াদের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিপরীত চিত্র, প্রায় সবাই যেন সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ নির্ভর হয়ে পড়েছে।

সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ

নির্বাচন আগামী ২ এপ্রিল। বিগত নির্বাচনে  বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ এবং  চৌধুরী গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহেদ সরওয়ার-এর নেতৃত্বাধীনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। কিন্তু  এবারে এখন পর্যন্ত কোন প্যানেল হয়নি। তবে যে পরিস্থিতি তাতে সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ সমর্থকদেরই পুনরায় ক্ষমতাসীন হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।  সিডিউল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন নিয়ে শিপিং সার্কেলে শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। ট্রেডের স্বার্থে  ইলেকশনের পরিবর্তে সিলেকশনে যোগ্য ও দক্ষদের এসোসিয়েশন নেতৃত্বে বসানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন কেউ কেউ।  সেই লক্ষ্য নিয়ে কিছুটা তৎপরতাও চলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক্ষেত্রে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি।

সিলেকশনে যাতে বিশেষ কয়েকজনকে বাছাই করে নিয়ে এসে যোগ্যপদে বসানো যায় সে লক্ষ্যে সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ভাইস-চেয়ারম্যান পদ বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।  এতদিন ১ জন সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান এবং ১ জন ভাইস-চেয়ারম্যানের পদ ছিল। আগামী মেয়াদে এই দুই পদের প্রত্যেকটিতে দুজন করে নির্বাচিত হবেন।

কয়েক মেয়াদ আগেও শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের নেতাদের নির্বাচন করা হতো সমঝোতার ভিত্তিতে সিলেকশনে। এতে এমন সব শিপিং ব্যক্তিত্বদের নেয়া হতো যাদের প্রত্যেকে ট্রেডের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। এসোসিয়েশনের সব সভায় উপস্থিত থেকে তাদের প্রায় সবাই সদস্যদের সেই প্রত্যাশা কম-বেশি পূরণ করতে পেরেছেন। কিন্তু বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন বর্তমান কমিটির  চেয়ারম্যান, সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন পরিচালক বিএসএএ’র সামগ্রিক কার্যক্রম নিয়ে সর্বোচ্চ তৎপর থাকলেও অন্য পরিচালকদের অনেকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারেননি, রাখার চেষ্টাও করেননি বলে অভিমত শিপিং সংশ্লিষ্টদের।  এমন কি এসোসিয়েশনের নিয়মিত সভাসমূহে উপস্থিতিতেও তাদের অনীহা পরিলক্ষিত হয়েছে। এই নিয়ে শিপিং সার্কেলে রয়েছে অসন্তোষ। এই খাত সংশ্লিষ্টদের অনেক সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। অথচ, প্রত্যেক পরিচালকের নেতৃত্বে রয়েছে একেকটি উপ-কমিটি। কমিটির দায়িত্ব সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকর তৎপরতা চালানো। এসব প্রেক্ষাপটে ইলেকশনের পরিবর্তে সিলেকশনের দাবি জোরদার হয়।

বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। একজন প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবারও ভোট করার আগ্রহ নিয়ে যোগাযোগ করেন সদস্যদের সাথে। কিন্তু সাড়া না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আর অগ্রবর্তী হননি। দু’ ক্যাটেগরিতে মোট ২৪ পরিচালক পদের বিপরীতে মনোনয়নপত্র পেশ করেছেন ৫১ জন।  জেনারেল ক্যাটেগরিতে ১৬ পরিচালক পদের বিপরীতে ৩৮ জন এবং এসোসিয়েট ক্যাটেগরিতে ৮ পরিচালক পদের বিপরীতে ১৩ জন মনোনয়নপত্র পেশ করেছেন। তাদের মধ্যে সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ এবং শাহেদ সরওয়ার রয়েছেন। জেনারেল এবং এসোসিয়েট উভয় ক্যাটেগরিতে নাম রয়েছে বিগত নির্বাচনে জয়ী এবং পরবর্তীতে পদত্যাগ করা খায়রুল আলম সুজনের।

শিপিং সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শাহেদ সরওয়ার ছাড়া আর যারা প্রার্থীতা পেশ করেছেন তাদের  প্রায় সবাই বর্তমান চেয়ারম্যানের আশীর্বাদ প্রত্যাশায় ।  এমন কি বিগত নির্বাচনে শাহেদ সরওয়ার প্যানেল থেকে বিজয়ী আবদুল্লাহ জহিরও সেই আশা নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

আগামী ১৯ মার্চ প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন। প্রার্থীদের প্রায় সবাই সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফের দিকে তাকিয়ে আছেন। নিজের পরিচালক পদ নিশ্চিত করার জন্য নানাভাবে তার কাছে তদবির করছেন। কেউই সরতে রাজী নন। এ অবস্থায় ভোটের পরিবর্তে সিলেকশনে আসার যে সহজ ফর্মুলাটি বিবেচনায় রয়েছে তা হলো দুবছর মেয়াদের মধ্যে এক বছর এক বছর করে সুযোগ দেয়া। শুরুতে যারা পরিচালক থাকবেন, এক বছর পর তারা পদত্যাগ করবেন এবং অন্যদের কোঅপ্ট করা হবে তখন।

প্রার্থী তালিকাঃ

জেনারেল ক্যাটেগরি: সৈয়দ মোহাম্মদ্ আরিফ (এএমএম ইন্টারন্যাশনাল ), দোলন বড়ুয়া (এশিয়া প্যাসিফিক শিপিং),  দেবপ্রসাদ ভট্টাচার্য (বাংলাদেশ শিপিং লাইন্স), এম আলী আশরাফ আহমেদ খান (বারিধি শিপিং লাইন্স), এসএম এনামুল হক (বেঙ্গল শিপিং), এসএম মাহবুবুর রহমান (বিএস কার্গো), মো. বদরুল আলম (কন্টেইনার অ্যান্ড টার্মিনাল সার্ভিসেস), এএ্সএম সালাহউদ্দিন (কসকো বাংলাদেশ), শাহেদ সরওয়ার (ক্রাউন নেভিগেশন), মো. রকিবুল হায়দার খান (এমিরেটস শিপিং), এটিএম শহিদুল্লাহ শহিদ (এসকেপ বাংলাদেশ), মো. আসিফ ইফতেখার হোসেন (এভারেট বাংলাদেশ) , মোহাম্মদ মুনতাছির রুবাইয়াত (জিবিএক্স লজিটিক্স), মো. সাজ্জাদুর রহমান ( ইন্সকেপ বাংলাদেশ), তানজিল আহমেদ রুহুল্লাহ( ইন্টারপোর্ট মেরিটাইম), মো. খসরুল আলম আকন ( জেএ শিপিং), আনিস উদ দৌলা (কর্ণফুলী লি.), কাজি মনসুর উদ্দিন (কেএসএম শিপিং), মামুনুর রশিদ (মানুমা শিপিং লাইন্স), শেখ মো. সামিদুল হক (মাদার শিপিং লাইন্স), মোহাম্মদ আজমির হোসেন চৌধুরী (এমএসসি মেডিটেরিয়ান), মো. এনাম-উল-হক (মাল্টিপোর্ট লি.), মো. আনোয়ার হোসেন খান (ওসেন কিং), মো. গোলাম মহিউদ্দিন আহাম্মেদ (ওসেন নেটওয়ার্ক), মোহাম্মদ জিয়াউল কাদের (পেনিনসুলার শিপিং) , সৈয়দ সোহেল হাসনাত (ফনিক্স শিপিং), মাশহুর আলম (রিজেন্সি লাইন্স), মোহাম্মদ রাশেদ( রিলায়েন্স শিপিং), মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জহির (সাইফ মেরিটাইম লি.), শাহ মো. রাফখাত আফসার (সাকি লাইন্স), মো. আজফার আলী( সারাফ শিপিং), ক্যাপ্টেন আহমেদ শহিদ চৌধুরী (সি কনসোর্টিয়াম), মো. আলী আকবর (সেভেনসিজ শিপিং), শহিদুল মোস্তাফা চৌধুরী (স্পেকট্রাম ইন্টারন্যাশাল), মো. কামরুজ্জামান (সুলতান শিপিং), সৈয়দ ইকবাল আলী ( ট্রান্সমেরিন লজিস্টিক্স লি.), খায়রুল আলম সুজন (ট্রান্সমোডাল কোম্পানি), মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরী (ইউএস লাইন্স ওভারসিজ)।

এসোসিয়েট ক্যাটেগরি: নাজমুল হক ( এএনজে ট্রেডার্স ), রিয়াজ উদ্দিন খান ( কসকল শিপিং ), খায়রুল আলম সুজন (ইএএস লিমিটেড), শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ( গ্যালাক্সি লাইন্স লিমিটেড), মো. ইমতিয়াজ হোসাইন ( ইন্ডেপেন্ডেন্ট শিপিং এজেন্সি ), রফিকুল আনোয়ার বাবু ( জেবুন এসোসিয়েট লিমিটেড ), আবু তালেব সিদ্দিক ( জেসি শিপিং এজেন্সি ), মোহাম্মদ আসলাম (প্যানমেরিন লাইন্স লিমিটেড ), মো. নজরুল ইসলাম ( প্রাইড শিপিং লাইন্স ), মোহাম্মদ শফিকুল আলম জুয়েল ( রেডিয়েন্ট শিপিং লিমিটেড),মোহাম্মদ ওয়াহিদুল ইসলাম ( আরএস  শিপিং এজেন্সিজ), শেখ মো. সামিদুল হক (সিওয়েভ মেরিন সার্ভিসেস) এবং ওয়াহিদুল আলম (আল্ট্রা মেরিটাইম সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেডিং)।

ইতিপূর্বে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল। নির্বাচনে ২৪ পরিচালক পদের মধ্যে সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদ অর্ডিনারি ক্যাটেগরিতে ১৬টির মধ্যে ১৪ টিতে এবং এসোসিয়েট ক্যাটেগরিতে ৮ পরিচালক পদের সব ক’টিতে বিজয়ী হয়।

অপরদিকে, শাহেদ সরওয়ার গ্রুপ থেকে বিজয়ী হন তিনি নিজে এবং মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জহির। জিতেছেন অর্ডিনারি ক্যাটেগরিতে। মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জহির পদত্যাগ করেছেন পরবর্তীতে।

ঐ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন দু’জন। তারা হলেন রেডিয়্যান্ট শিপিং লিমিটেড-এর শফিকুল আলম জুয়েল এবং কসকল শিপিং লাইন্স লিমিটেডের মো. রিয়াজ উদ্দিন খান। তারা দু’জনই এসোসিয়েট ক্যাটেগরি থেকে নির্বাচিত হন। তারা এবারও প্রার্থী হয়েছেন। শফিকুল আলম জুয়েল ভোট সামনে রেখে গত ১ মার্চ নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে ‘ আনন্দ আড্ডা’ আয়োজন করেন।