Home Second Lead বিএসএএ ভোট সামনে নিয়ে শাহেদ ও আরিফ যা বললেন

বিএসএএ ভোট সামনে নিয়ে শাহেদ ও আরিফ যা বললেন

সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ ( বামে )। শাহেদ সরওয়ার ( ডানে )

প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলে যারা রয়েছেন তাদের কয়েকজন বাদে আর কাউকে আমি চিনি না, আমার প্যানেলের প্রার্থীরা চিনেন না। সাধারণ সদস্য ভোটারদেরও একই কথা: সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ

সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলাম। সিরিয়াল অনুসারে আমারই হওয়ার কথা পরবর্তীতে চেয়ারম্যান। পরে আরিফ সাহেবের।  কিন্তু তার আশেপাশের কিছু মানুষের কারণে ভোট করতে হচ্ছে। আমি আশাবাদী এবারও ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করবেন: শাহেদ সরওয়ার  

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন ( বিএসএএ ) নির্বাচন রবিবার ( ৪ এপ্রিল )। ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে নির্বাচনী প্রচারণা। শিপিং এজেন্টদের দু’টি গ্রুপ নির্বাচন করছেন। একটি শাহেদ সরওয়ারের নেতৃত্বাধীন ‘শাহেদ সরওয়ার প্যানেল। অপরটি সম্মিলিত পরিষদ। এর নেতৃত্বে রয়েছেন সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ। দুই প্যানেল লিডারই অতীতে ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান। শাহেদ সরওয়ার বর্তমান কমিটির পরিচালক। দু’জন মুখোমুখি হন বিজনেসটুডে২৪ এর সাথে। একান্ত আলাপচারিতায় যা বলেছেন তা বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

সেদিন ওনাকে দায়িত্বটা কে দিয়েছিল: আরিফ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: সম্মিলিত পরিষদ প্যানেল লিডার সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বললেন, ‘আমার প্যানেলের প্রত্যেকে শিপিং সেক্টরে সুপরিচিত। ভোটাররা তাদের প্রতি আস্থাশীল। আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলে যারা রয়েছেন তাদের কয়েকজন বাদে আর কাউকে আমি চিনি না, আমার প্যানেলের প্রার্থীরা চিনেন না। সাধারণ সদস্য ভোটারদেরও একই কথা।’

দেখুন, সম্মিলিত পরিষদে আমার চেয়েও যোগ্যতাসম্পন্ন অন্তত ১০ জন রয়েছেন যাদের প্রত্যেকে বিএসএএ’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের মত দক্ষ। কোন কারণে যদি আমি নাও জয়ী হই, আমার প্যানেল জয়ী হয় তাহলে কোন সংকট হবে না, ঐ ১০ জনের  যে কেউ চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আর প্রতিপক্ষ প্যানেলের অবস্থাটা কি? একই পরিস্থিতি যদি তাদের হয় অর্থাৎ শাহেদ সরওয়ার জয়ী হতে পারলেন না, কিন্তু প্যানেল আসলো তাহলে চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্য কেউ আছেন? নেই। 

সম্মিলিত পরিষদ প্যানেল করা হয়েছে সবচে’ যোগ্য প্রার্থীদের সমন্বয়ে। ৫ টা ভোটের শক্তি আছে, ৭ টা ভোটের শক্তি আছে বা বড় কোন শক্তি আছে বিবেচনায় নিয়ে কাউকে প্রার্থী করা হয়নি। মাহবুব সাহেবের ৬ টা কোম্পানি। কিন্তু তিনি একা হয়েছেন। আমাদের প্রার্থীদের প্রত্যেকের জাহাজ অথবা কন্টেইনারের বিজনেস আছে। আর ওখানে রয়েছেন শিপহ্যান্ডলিং বা রিপেয়ার ওয়ার্কসপের সাথে জড়িত। বিএসএএ হচ্ছে শিপিং এজেন্টদের। এখানে অন্য কোন ফোরামের কেউ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন না।

আমি ৪ কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করি। শিপিং সংশ্লিষ্ট ট্রেডের সবকিছু আমার নখদর্পণে। শিপিং-এর কোথায় কি আছে, কোথায় সমস্যা আমি জানি। বহির্নোঙরে বেসরকারি পাইলটিং বন্ধে সহযোগীদের নিয়ে আমি ছিলাম সোচ্চার। ফলে কর্তৃপক্ষ তা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে। তবে, দুষ্টচক্র সক্রিয় চেষ্টা চালাচ্ছে যেন আমরা না আসি। তাহলে স্থগিত হয়ে যাওয়া বেসরকারি পাইলটিং নিয়ে আবার তারা তৎপর হবে। 

বার্থ অপারেটরদের সাথে আমাদের একটা ইস্যু আছে। তাদের দাবি মোট খরচের ৯০ শতাংশ শ্রমিকদের মজুরি ও ভাতা বাবৎ যায়।  অর্থাৎ কোন জাহাজের যদি ৩০ লাখ টাকা বিল আসে তার ২৭ লাখ টাকা শ্রমিকদের মজুরি ও ভাতা। প্রতিবছর তা বৃদ্ধির দাবিও। সেটা নিয়ে আমরা যখন লড়াই করছি তখন বিএসএএ’র অন্যান্য পরিচালকের উপস্থিতিতে  (প্রতিপক্ষ প্যানেল লিডার) শাহেদ সরওয়ার বন্দর প্রশাসনকে বলেছিলেন যে ‘আমি দায়িত্বনিয়ে বলছি ৯% এবং ৪ % বৃদ্ধি যৌক্তিক আমরা মেনে নিয়েছি ‘ উনাকে দায়িত্বটা কে দিয়েছিল? সেটা আমরা মানিনি। কস্টিং কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির সভা কেবল পেছাচ্ছে। কারণ, কস্টিং করলে ফল কি হবে তা সবার জানা। ওয়াচম্যান নিয়োগের বিষয়টিও আমাদের সক্রিয় তৎপরতার কারণে হোঁচট খেয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন দেশের শীর্ষস্থানীয় এসোসিয়েশনগুলোর অন্যতম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটার অবস্থান কোথায়? দুর্বল নেতৃত্বই তার কারণ। তিনি আশা করেন যে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে শিপিং এজেন্টরা সম্মিলিত পরিষদকে বিজয়ী করবেন।

শাহেদ সরওয়ার

তখন কেন চুপ ছিলেন: শাহেদ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: রবিবার ( ৪ এপ্রিল ) অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন ( বিএসএএ ) নির্বাচনে শাহেদ সরওয়ার প্যানেল প্রধান শাহেদ সরওয়ার বললেন,২০০৮ সালে আমি সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলাম। সিরিয়াল অনুসারে আমারই হওয়ার কথা পরবর্তীতে চেয়ারম্যান। আর আমার পরে আরিফ সাহেবের।  কিন্তু তার আশেপাশের কিছু মানুষের কারণে আমি এই পরিস্থিতিতে। ভোট করে জিতে আমাকে চেয়ারম্যান হতে হচ্ছে। আমি আশাবাদী এবারও ভোটাররা ভোট এবং ভালোবাসা দিয়ে আমাকে নির্বচিত করবেন ইনশাআল্লাহ।

আমাদের মধ্যে বোঝাপরা ছিল যে আমি চেয়ারম্যান হই, দু’বছর পর তিনি হবেন। কিন্তু তিনি হঠাৎ করে তার আশেপাশের কিছু লোকজন তাকে বিভ্রান্ত করেন যে শাহেদকে কেন চেয়ারম্যান করবেন, চেষ্টা করেন আপনিই হয়ে যান।

তাকে ( আরিফ ) আমি যথেষ্ট সম্মান করি, বন্ধুর মত। যারা আছেন তার প্যানেলে তারাও আমার বন্ধু, আমার সাথেও রয়েছেন আমার বন্ধুরা। তাদের সাথে আমাদের, আমাদের সাথে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে। তার সাথে আমার কোন শত্রুতা হয়নি। আমরা খুব ভাল বন্ধু। ৪ তারিখ নির্বাচন শেষ হলে আমরা সবকিছু ভুলে গিয়ে ট্রেডের স্বার্থে কাজ করবো।

১৯৯৮ সাল থেকে আমি জড়িত বিএসএএ’র সাথে। প্রথমে নির্বাহি কমিটির সদস্য হয়েছি। তখন পরিচালক ছিল না। সেই থেকে একটানা সংগঠনের সাথে। এখানে কোনরকম আর্থিক সুবিধার কিছু নেই। বলা যায় তা একধরনের থ্যাংকলেস জব। আগে যারা চেয়ারম্যান ছিলেন, সবার পাশে থেকে কাজ করেছি। সহায়তা করেছি। বিনিময়ে তাদের কাছে থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমার প্রত্যাশা ছিল আমার ট্রেডের সবাই মিলে আমাকে একটা সম্মান করবেন।

তিনি বলেন, গতবারে অর্ডিনারিতে আমার প্যানেল ১৬ জনে ১৬ জন আর এসোসিয়েটে ৮ জনে ৮ জন আরিফ সাহেবের প্যানেল থেকে জয়ী হন। কিন্তু এবার আশা করি যে অর্ডিনারিতে তো ১৬ জন থাকবেই, এসোসিয়েটেও ভাগ বসাবো। এবার ভোটার সংখ্যা বেশি। আবার অধিকতর যোগ্য প্রার্থী নিয়ে আমার প্যানেল। ৩ জন মাস্টার মেরিনার রয়েছেন। আরও ভাল ভাল কোম্পানির প্রতিনিধিবৃন্দ রয়েছেন। নামকরা কোম্পানিসমূহের সাপোর্ট রয়েছে। সম্মিলিত পরিষদে যে ২৪ জন রয়েছেন, তাদের অনেকে আমার প্যানেল থেকে প্রার্থী হতে পারতেন। হয়তো প্রয়োজন মনে করে ঐ প্যানেল থেকে হয়েছেন, সবাই আমার জানাশোনা। কারো সাথে কোন বিরোধ নেই আমার। তার প্রমাণ আমার পরিচিতি সভা।

পরিচিতি সভায় কোন আক্রমনাত্মক কথা বলিনি। অথচ ইচ্ছা করলে অনেককিছু বলতে পারতাম। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে কাউকে আক্রমন করে কথা বলতে পারতাম।

তিনি বলেন, ১৭ বছর নির্বাচন না হওয়ার অভিযোগ করেন তারা। এ সময়ে যে ক’বার নির্বাচন হয়েছে আমি করেছি। ড. পারভেজ যখন চেয়ারম্যান তখন তিনি সর্বোচ্চ এবং আমি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটে জিতেছি।

সম্মিলিত পরিষদ প্যানেল নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফের উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন করেন-মাহমুদুর রহমান সাহেব এক টার্ম, দুই টার্ম, তিন টার্ম চেয়ারম্যান ছিলেন।  সে সময়ে একথা বলেননি কেন? ১৭ বছরের মধ্যে ৬ বছর আপনার চেয়ারম্যান খেয়ে ফেলেছে। তখন কেন চুপ ছিলেন? ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কত বছর খেয়েছেন? সে সময়ে নির্বাচন করেননি কেন?

 জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে শাহেদ সরওয়ার বলেন, চেষ্টা করেছি ভোটারদের অন্তরে পৌঁছার। বিপুল সাড়া পেয়েছি। তারপরও ভোট তো ভোটই। ব্যালটে যতক্ষণ সিল পড়েনি, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কিছুই নিশ্চিত না।

সবশেষে তিনি বললেন, বন্দর যাতে যে কোন অবস্থাতে সচল থাকে, কোনোভাবে যাতে কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে আমি এবং আমার টিম সচেষ্ট থাকবে।