বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: চারদিন কেটে গেলেও এখনও ভারতে ফেরেননি পাক রেঞ্জার্সের হাতে আটক বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ। উপায়ান্তর না দেখে, রবিবার পাঠানকোটের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন পূর্ণমের পরিবার। স্বামীর খোঁজে রুদ্ধশ্বাসে দিন কাটাচ্ছেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী দেবী।
পূর্ণম কুমার সাউ পঞ্জাবের ফিরোজগঞ্জ সীমান্ত পোস্টে মোতায়েন ছিলেন। গত বুধবার তিনি সীমানা অতিক্রম করে পাকিস্তান অংশে পৌঁছে যান। সেখানেই পাক রেঞ্জার্স তাঁকে আটক করে। আটকের পরে তাঁর দুটি ছবি প্রকাশিত হয় পাকিস্তানি মাধ্যমে, তবে তারপর থেকে তাঁর সম্পর্কে আর কোনো তথ্য সামনে আসেনি। তাঁর শারীরিক অবস্থা, কোথায় রাখা হয়েছে — কিছুই জানানো হয়নি।
পাকিস্তান সরকারের এই নীরবতায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে। যদিও ভারতীয় সেনাবাহিনী পূর্ণমকে ফেরাতে বারবার ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়েছে, তবু পাকিস্তানের তরফে এখনো কোনো সদুত্তর বা ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
পরিবারের আকুতি
পূর্ণমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী দেবী শুক্রবার রাতে পাঠানকোট সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেনার তরফে তাঁকে সপরিবারে পাঠানকোট আসার অনুমতি দেওয়া হয়। রজনী দেবী বলেন, “এখন নিজের শরীরের কথা ভাবার সময় নেই। আমার স্বামী কী অবস্থায় আছে, খেতে পাচ্ছে কিনা, অত্যাচার করা হচ্ছে কিনা কিছুই জানি না। আগে স্বামীকে ফেরাই, তারপর নিজের কথা ভাববো।” প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাঁর করুণ আর্তি, “আমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনুন।”
পূর্ণমের মা-ও কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, “ছেলে সুস্থ ভাবে ফিরে আসুক এটাই চাই। বহু সময় কেটে গেল, কিছুই জানতে পারছি না। ওর সঙ্গে একবার কথা বলতেও পারছি না।”
সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টা
সূত্রের খবর অনুযায়ী, বিএসএফ ও ভারতীয় সেনা প্রশাসন নিয়মিতভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি অনুযায়ী আটক ব্যক্তির নিরাপত্তা এবং মুক্তির জন্য কূটনৈতিক স্তরেও প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি বিষয়টি ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তানের নীরবতা ইচ্ছাকৃত কূটনৈতিক চাপ তৈরির একটি অংশ হতে পারে। তবে ভারতও কূটনৈতিক ও সামরিক সব রাস্তায় দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
পরিস্থিতি আপাতত অনিশ্চিত
পূর্ণম কুমারের পরিবার শুধু নয়, গোটা গ্রামবাসীও অধীর অপেক্ষায় তাঁর ফেরার খবরের জন্য। সকলের মুখে একটাই কথা — পূর্ণম যেন দ্রুত ও সুস্থ অবস্থায় নিজের দেশে, নিজের পরিবারের কাছে ফিরে আসেন।
হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা পূর্ণমের বিষয়ে বিএসএফের ডিজি দলজিৎ সিংহ চৌধরির সঙ্গে ফোনে কথা বললেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণের সংসদীয় এলাকা শ্রীরামপুরের মধ্যেই পড়ে রিষড়া।
কল্যাণের দাবি, বিএসএফের ডিজি তাঁকে জানিয়েছেন, দেশের সব নিরাপত্তা সংস্থা পূর্ণমকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। পাকিস্তানের তরফে সময় চাওয়া হয়েছে। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যা যা করার তা-ই করা হচ্ছে। কল্যাণের এ-ও দাবি, বিএসএফের ডিজি তাঁকে জানিয়েছেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে আটক থাকা পূর্ণম শারীরিক ভাবে সুস্থ রয়েছেন। নিরাপদ জায়গাতেই তাঁকে রাখা হয়েছে