Home First Lead বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকা

বিক্ষোভে উত্তাল আমেরিকা

ছবি: সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এমন ভয়ঙ্কর প্রভাব বোধহয় আগে দেখা যায়নি। উন্মত্ত বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে, পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ছে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে। ধাক্কাধাক্কি চলছে চরম। মুখে স্লোগান, ট্রাম্পকে কিছুতেই হারতে দেওয়া যাবে না। বিল্ডিং চত্বর কার্যত রণক্ষেত্র। বিপুল ভোটে এগিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনই। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে আজই বাইডেনকে জয়ের শংসাপত্র দেওয়া হবে। অন্যদিকে, কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সদস্যরা বিপুল ভোটে নাকচ করে দিয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্টের ভেটোকে। গদিদে তাঁর মেয়াদ আর কিছুদিনের। এই ধাক্কাই মানতে পারেননি ট্রাম্প সমর্থকরা।

প্রেসিডেন্টের গদিতে বাইডেন বসার আগেই উত্তাল হয়ে উঠেছে ওয়াশিংটন ডিসি। ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে হামলাকারীদের। গুলি চলছে। রক্তাক্ত বিল্ডিং চত্বর। এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল চূড়ান্ত করা নিয়ে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভ এবং সেনেটের বৈঠক চলছিল। সেই সময়েই বিক্ষোভকারীরা জোরজবরদস্তি বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। মুখে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে স্লোগান। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করলেই অশান্তি শুরু হয়ে যায়। পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে, ব্যারিকেড ভেঙে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়তে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। বাধ্য হয়ে গুলি চালায় পুলিশ। এক মহিলা বিক্ষোভকারীর কাঁধে গুলি লেগেছে বলে খবর। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Violence Erupts at US Capitol, 1 Dead; Twitter Blocks Trump Account For 12 Hours | Live Updates

সেনেট মেজরিটি লিডার মিচ ম্যাককনেল জানিয়েছেন, শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ঝামেলা চলছে। তবে এখন যা হচ্ছে তাকে গণতন্ত্রের অবমাননাই বলা যায়। ম্যাককনেল ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ট্রাম্পকে অনেক সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন। তবে এই ঘটনায় তাঁর সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে বলেই দাবি ম্যাককনেলের। বলেছেন, এদের থামানো না গেলে আমেরিকান রিপাবলিককেই বদনাম করে ছাড়বে।

Take the Capitol! Washington DC turns riot-zone as Trump supporters protest Biden's win | LIVE - World News

গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন সেনেট ডেমোক্রেটিক লিডার চাক স্কুমার। তিনি বলেছেন, সবটাই ট্রাম্পের প্ররোচনায় হচ্ছে। ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার পথে নেমেছে উগ্র মনোভাবাপন্ন একদল বিক্ষোভকারী।

গণতন্ত্রের লজ্জা, বলেছেন ভাবী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাঁর কথায়, এমন ছবি আমেরিকার হতে পারে না। আমেরিকাবাসীর লক্ষ্য গণতন্ত্রকে সুপ্রিতিষ্ঠিত করা। কিছু প্ররোচিত মানুষজন তাকেই নষ্ট করার কাজে নেমেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে।  প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের জন্য ইলেকটোরাল কলেজের ২৭০ টি ভোট প্রয়োজন হয়। বাইডেন পেয়েছেন ইলেকটোরাল কলেজের ৩০৬ টি ভোট। ট্রাম্প পেয়েছেন ২৩২ টি। তাছাড়া ট্রাম্পের থেকে ৫৩ লক্ষের বেশি পপুলার ভোট পেয়েছেন বাইডেন। ট্রাম্প এই জয় মেনে নিতে পারেননি। তিনি পষ্টাপষ্টি অভিযোগ করেছিলেন ‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট রিগড ইলেকশন’ , অর্থাৎ নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি হয়েছে। যদিও তার পক্ষে তিনি কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি। জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তিনি ইতিমধ্যেই কয়েকটি মামলা করেছেন। তার মধ্যে কয়েকটি ইতিমধ্যে নাকচ করে দিয়েছেন বিচারকরা।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে হইহই কিছু কম হয়নি। ট্রাম্পের গদি নড়িয়ে দিয়েছে ডেমোক্র্যাট শিবির। বিপুল ভোটে ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছেন জো বাইডেন। ট্রাম্পের এতদিনের হম্বিতম্বিতেও কাজ হয়নি। একের পর এক রাজ্যের ভোট হাতছাড়া হওয়ায় এমনিতেই বেজায় চটেছিলেন ট্রাম্প। একেবারে ভোট দুর্নীতির অভিযোগ চাপিয়ে দিয়েছিলেন বাইডেনের ওপরে। তবেও তাতেও চিড়ে না ভেজায়, ফোন করে বিপুল ভোট পাইয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। জর্জিয়ার রিপাবলিকান সেক্রেটারি ব্র্যাড র‍্যাফেনস্পার্জারের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রায় এক ঘণ্টার কথোপকথন ফাঁস হয়ে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে রিপাবলিকান শিবির। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ধমক ধামকে কাজ না হওয়ায়, এখন গায়ের জোর দেখাতে শুরু করেছেন ট্রাম্প সমর্থকরা।

এদিকে, ঘটনার পর ওয়াশিংটনে কারফিউ ঘোষণা করেন সে খানকার মেয়র মুরিয়েল বাউজার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় ২৭০০ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে বিদ্রোহীদের অন্তত ১৩ জনকে। ওয়াশিংটন ডিসির মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচটি বন্দুক জব্দ করা হয়েছে তার মধ্যে হ্যান্ড গান ও লং গানও করা হয়েছে।

পুলিশ প্রধান রবার্ট কনটি জানান, যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা কেউ ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাস করে না। কিছু আহত কর্মকর্তাকেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।