Home বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বিজিএমইএ ইশতেহার: সম্মিলিত পরিষদের ৮১, ফোরামের ১৩

বিজিএমইএ ইশতেহার: সম্মিলিত পরিষদের ৮১, ফোরামের ১৩



*দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সরগরম নির্বাচনের মাঠ
*ক্রেস্ট উপহার ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়: সম্মিলিত পরিষদ
*নির্বাচনী আচরণ ভঙ্গ করেননি: রুবানা হক


বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি


চট্টগ্রাম: জমে উঠেছে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন (বিজিএমইএ) নির্বাচন। ৪ মার্চ প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর ঘরোয়াভাবে প্রচার শুরু করেছেন সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম নামে দুটি প্যানেলের প্রার্থীরা।

এবারের নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সমিতির ৩৫টি পরিচালক পদের জন্য দুই প্যানেলের ৩৫ জন করে মোট ৭০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। স্বাধীনতা পরিষদের নেতা জাহাঙ্গীর আলম এর আগে পূর্ণ প্যানেল নিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও এখন সম্মিলিত পরিষদের সঙ্গে একীভূত হয়ে নির্বাচন করছেন। এতে আগামী ৪ এপ্রিলের নির্বাচনকে ঘিরে কার্যত দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

এদিকে ভোটার তালিকা ও ভোটগ্রহণের স্থান নিয়ে দুই প্যানেলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সরগরম হয়ে উঠছে নির্বাচনের মাঠ। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছেন প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে বর্তমান সভাপতি রুবানা হকের প্যানেল ‘ফোরামের’ নেতৃত্ব দিচ্ছেন হান্নান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম শামসুদ্দিন মিয়া। রুবানা হক নিজেও তার প্যানেল থেকে নির্বাচনে থাকছেন। এছাড়া সংগঠনটির সাবেক সভাপতির নেতৃত্বে রয়েছে সম্মিলিত পরিষদ। এ প্যানেলের সভাপতি পদের প্রার্থী হচ্ছেন বিজিএমইএ’র সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান। সম্মিলিত পরিষদের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক হিসেবে আছেন সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুস সালাম মুর্শেদী।

ঢাকার ২৭ পরিচালক পদের জন্য সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থীরা হলেন- ফারুক হাসান, শহিদুল হক, আবদুল্লাহ হিল রাকিব, শহীদউল্লাহ আজিম, নীরা হোসনে আরা, মহিউদ্দিন রুবেল, জাহাঙ্গীর আলম, খন্দকার রফিকুল ইসলাম, শিরিন সালাম, তানভীর আহমেদ, ইন্তেখাবুল হামিদ, কফিল উদ্দিন আহমেদ, ইমরানূর রহমান, আশিকুর রহমান, মিরান আলী, খসরু চৌধুরী, মশিউল আজম, নাছির উদ্দিন, এস এম মান্নান, শোভন ইসলাম, মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, হারুন অর রশীদ, আরশাদ জামাল, আসিফ আশরাফ, সাজ্জাদুর রহমান মৃধা ও রাজিব চৌধুরী।

অন্যদিকে ঢাকায় ফোরামের প্রার্থীরা হলেন- রুবানা হক, এ বি এম সামসুদ্দিন, আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, শিহাবুদৌজা চৌধুরী, এনামুল হক খান, ভিদিয়া অমৃত খান, কামাল উদ্দিন, মাশিদ রুম্মান আবদুল্লাহ, এম এ রহিম, শাহ রিয়াদ চৌধুরী, মিজানুর রহমান, খান মনিরুল আলম, এ এম মাহমুদুর রহমান, নাফিস উদ দৌলা, আসিফ ইব্রাহিম, মজুমদার আরিফুর রহমান, তাহসিন উদ্দিন খান, নাভিদুল হক, রশীদ আহমেদ হোসাইনী, ইকবাল হামিদ কোরাইশী, মাহমুদ হাসান খান, রেজওয়ান সেলিম, ফয়সাল সামাদ, রানা লায়লা হাফিজ, মেজবাহ উদ্দিন আলী ও নজরুল ইসলাম।

চট্টগ্রামে নয়টি পরিচালক পদের জন্য সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থীরা হলেন -এ এম শফিউল করিম, এম আহসানুল হক, মো. হাসান, রকিবুল আলম চৌধুরী, তানভীর হাবিব, মোহাম্মদ মেরাজ-ই-মোস্তফা, অঞ্জন শেখর দাশ, আবসার হোসেন ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

ফোরামের প্রার্থীরা হলেন -মোহাম্মদ আবদুস সালাম, এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, এনামুল আজিজ চৌধুরী, শরীফ উল্লাহ, মির্জা মো. আকবর আলী চৌধুরী, মোহাম্মদ দিদারুল আলম, রিয়াজ ওয়েজ ও খন্দকার বেলায়েত হোসেন।

জোট ফোরামের ১৩ দফা ইশতেহার : বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে ১৩ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেছে ফোরাম। এতে ৩ স্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জোটটি। ইশতেহারে তিনভাগের প্রথম অংশে বর্তমান বিজিএমইএ নেতৃত্বে থাকা ফোরাম পর্ষদের অর্জন, দ্বিতীয় অংশে প্রক্রিয়াধীন কার্যক্রম এবং সবশেষে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএর ভাবমূর্তি, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় কমানো এবং সহজীকরণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, রুগ্ণ শিল্প ও এক্সিট পলিসি, পণ্যের দাম ও ক্রেতার জবাবদিহিতা, শিল্পের নিরাপত্তা ও নিজস্ব সক্ষমতা, বাজার সম্প্রসারণ, প্রযুক্তি সক্ষমতা, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, দক্ষতা ও উদ্ভাবন, সাসটেইনেবিলিটি ও এসডিজি, শ্রমিক কল্যাণ এবং স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন বিজিএমইএ অন্যতম। ড. রুবানা হক বলেন, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তৈরি পোশাক খাত। আমরা এ খাতের যে কোনো সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। আমাদের প্যানেল সেভাবে গঠন করা হয়েছে।

সম্মিলিত পরিষদের ৮১ প্রতিশ্রুতি: করোনার সংকট প্রতিকারে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হবে। শিল্পের ক্ষতিগুলো চিহ্নিত করে তা সামলে ওঠা এবং শিল্পের পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সরকারের কাছে স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি-সহায়তা প্রস্তাব করা হবে। এছাড়া শিল্প পুনরুদ্ধারে প্রণোদনার অর্থ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হবে। পোশাকশিল্পে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ১৮ মাস থেকে বাড়ানো ও কিস্তির আকার ছোট করার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেয়াসহ ৮১টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সম্মিলিত পরিষদ। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার উন্নয়ন, ব্যবসা থেকে প্রস্থান নীতিমালা, নতুন বাজার সম্প্রসারণ, কাস্টমস, কর ও মূসক নীতিমালা সংস্কার, শ্রম ও ব্যাংকিং নীতিমালা সংস্কার, ভাবমূর্তি উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয় রয়েছে।

আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ দুপক্ষের : নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে এতে অংশ নেয়া দুই জোট ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ। সম্মিলিত পরিষদের পক্ষ থেকে বিজিএমইএ’র বর্তমান সভাপতি ড. রুবানা হকের বিরুদ্ধেও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। সোমবার ২৯ মার্চ বিজিএমইএ’র সভাপতির বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন সম্মিলিত পরিষদের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুস সালাম মুর্শেদী।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বিজিএমইএ’র সব সদস্যকে সম্প্রতি ড. রুবানা হক (সভাপতি, বিজিএমইএ) কর্তৃক ২৪ মার্চ ২০২১ এ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি এবং ক্রেস্ট উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে। যা সম্পূর্ণ নির্বাচনী নীতিমালার পরিপন্থি। যেখানে একজন নির্বাচনী প্রার্থী বিজিএমইএ’র কোনো সদস্য বা ভোটারকে কোনো প্রকার উপহার প্রদান করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা রয়েছে। বিজিএমইএ’র সভাপতি থাকাকালীন এমন আচরণ আমাদের সম্মানিত মেম্বারদের বিভ্রান্তিতে ফেলার অপপ্রয়াস, যা ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।

এ প্রসঙ্গে ড. রুবানা হক জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংগঠনটির সদস্যদের শুভেচ্ছা চিঠি ও ক্রেস্ট পাঠানো হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থী বা তার জোট ফোরামের পক্ষ থেকে এগুলো পাঠানো হয়নি। তাই তিনি নির্বাচনী আচরণ ভঙ্গ করেননি বলে মনে করেন। রুবানা হক আরো জানান, নির্বাচনে ফোরামের প্রতিপক্ষ সম্মিলিত পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য বিজিএমইএ সদস্যদের উপহার পাঠিয়েছেন।

আগামী ৪ এপ্রিল রাজধানীর রেডিসন হোটেলে ও চট্টগ্রামে সংগঠনটির আঞ্চলিক কার্যালয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।