Home Second Lead উস্কানি দিয়ে পোশাকখাতকে অশান্ত করা হচ্ছে: বিজিএমইএ

উস্কানি দিয়ে পোশাকখাতকে অশান্ত করা হচ্ছে: বিজিএমইএ

ফারুক হাসান

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা: শান্ত ও নিরীহ শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে পোশাকখাতকে অশান্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান এই অভিযোগ করে বলেন, নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার আগে আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই। যেখানে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড কাজ করছে এবং যে বোর্ডে শ্রমিক পক্ষ ও মালিক পক্ষ প্রতিনিধি এবং নিরপেক্ষ সদস্য রয়েছেন।  পোশাকখাতের শ্রমিক ভাইবোনদের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করার জন্য পোশাকখাতে শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নির্ধারণের জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড বর্তমানে ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনার জন্য কাজ করছে।

এ সময় সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি শহিদুল্যাহ আজিম এবং এস এম মান্নান কচিসহ বিজিএমইএর অফিস বেয়ারাররা এবং পরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, সরকার যখন পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কাজ করছে এবং নভেম্বরের মধ্যেই নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণা করতে যাচ্ছে তখন শান্ত ও নিরীহ শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে পোশাকখাতকে অশান্ত করা হচ্ছে। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, গত কয়েকদিন ধরে বহিরাগতদের উস্কানিতে কিছু পোশাক কারখানায় শ্রমিক ভাইবোনেরা কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন, কারখানা ভাংচুর করছেন, ফলশ্রুতিতে অনেক উদ্যোক্তা বাধ্য হচ্ছেন, কারখানা বন্ধ করে দিতে, যা একান্তভাবে অনভিপ্রেত।

ফারুক হাসান বলেন, এটা অত্যন্ত উদ্বেগের যে বহিরাগতদের উস্কানির কারণে পোশাক কারখানার সাথে সাথে বেশ কিছু লেদার কারখানা, ক্যামিকেলের গো-ডাউন, ফ্যাব্রিক্স এর গো-ডাউন, দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক কারণে স্থানীয় পর্যায়ে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে আমাদের শ্রমিক ভাইবোনেরা  কষ্টে আছেন। তাদের এই কষ্টে আমরা প্রতিটি উদ্যোক্তা সমব্যাথী।

সেই সাথে এটিও উপলব্ধি করেছি, শিল্প যতো সমস্যাতেই থাকুক না কেন, পোশাক পরিবারের সদস্য প্রতিটি  শ্রমিক ভাইবোনদের সাধ্য অনুযায়ী ভালো রাখা আমাদের উদ্যোক্তাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। শ্রমিক ভাইবোনরাই আমাদের এই পোশাক শিল্পের প্রাণ। তারা ভালো থাকলে শিল্প ভালো থাকবে।

সংবাদ সম্মেলন। ছবি সংগৃহীত

আমরা আশা করছি, ন্যূনতম মজুরি বোর্ড নভেম্বরের মধ্যেই নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণা করবে এবং সরকার নতুন যে বেতনকাঠামো ঘোষণা করবে, আমরা পোশাক শিল্পের সকল উদ্যোক্তা সেটিই মেনে নিবো, শিল্পে যত প্রতিকূলতাই থাকুক না কেন। নতুন মজুরি কাঠামো আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

আরও বলেন, গত ৫ বছরে আমরা শ্রমিক ভাই বোনদের সাথে নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে শিল্পের রূপান্তর ঘটিয়েছি। আমাদের পোশাক শিল্প এখন বিশ্বের রোল মডেল। আমাদের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় বর্তমানে পোশাক খাতে LEED কারখানার সংখ্যা ২০৩টি। এর মধ্যে প্লাটিনাম রেটেড ৭৩টি, গোল্ড রেটেড ১১৬টি এবং ১০টি সিলভার রেটেড। বিশ্বব্যাপী সবোর্চ্চ রেটেড ১৫টির মধ্যে ১৩টি লিড গ্রিন কারখানাই বাংলাদেশে অবস্থিত। আরও ৫০০টি কারখানা সার্টিফিকেশনের জন্য পাইপলাইনে রয়েছে। গত ৫ বছরে শিল্পের উপর ক্রেতাদের আস্থা অনেকখানি বেড়েছে।

শ্রমিকদের উদ্দেশে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আপনাদের অবদানেই শিল্প বর্তমান পর্যায়ে আসতে পেরেছে। এমন কিছু করবেন না যাতে করে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়-  ক্রেতাদের আস্থা বিনষ্ট হয়। এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে করে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ ক্রেতারা শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর আপনারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা কাম্য নয়।
তিনি বলেন, কোনোরকম উস্কানিতে আপনারা প্ররোচিত হবেন না। পোশাক শিল্পে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাবেন না। দায়িত্বের সাথে নিজ নিজ কাজ করুন । দেশের স্বার্থে উৎপাদনে আমাদেরকে সাহায্য করুন। এ শিল্পটা আমাদের সবার।

তিনি আরও বলেন, আজকের এই প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে শ্রমিক ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনাদের অবদানেই শিল্প বর্তমান পর্যায়ে আসতে পেরেছে। এমন কিছু করবেন না যাতে করে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, ক্রেতাদের আস্থা বিনষ্ট হয়। এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে করে শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ ক্রেতারা শিল্প থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর আপনারা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা কাম্য নয়।

নুনতম বেতন কাঠামো ২৩ হাজার টাকার করার দাবিতে আন্দোলন করছে পোশাক শ্রমিকরা। আজ তাদের আন্দোলনের অষ্টম দিন। আজও গাজীপুর, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গার্মেন্ট শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি কারখানা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।